• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দালাল নির্ভরতা কমাবে ই-পার্সপোর্ট !

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

দালাল নির্ভরতা কমাবে ই-পার্সপোর্ট !

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১২ জুন ২০২২

পাসপোর্ট অফিসে দালালদের উপস্থিতি একেবারেই সাধারণ ঘটনা। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানেও কমছে না এদের দৌরাত্ম্য। তবে ই-পাসপোর্ট দালালনির্ভরতা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দালালদের হয়রানির বন্ধে তাদেরকে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এ পদক্ষেপের সুফল নিয়ে দ্বিমত আছে দালালদের মধ্যে।

জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর এখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু না করার কৌশল নিয়ে সবাইকে ই পাসপোর্টমুখী করতে চাইছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এমআরপি বন্ধ রাখেননি, সেভাবে খোলাও রাখেননি। নতুন করে আগের মতো চালু করার পরিকল্পনাও নেই।

পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, এখন আর এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন তেমন আসছে না। যেখানে প্রতি মাসে আগে ৪ শতাধিক হতো, এখন মাসে মাত্র ৫০টিরও কম এমআরপি পাসপোর্ট আসছে। বিপরীতে ই পাসপোর্ট প্রতিদিন দেড় শতাধিক ইস্যু হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তৌফিকুল বলেন, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে কিছু সমস্যা আছে, তাদের মানবিক বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে অসুস্থ এবং প্রবাসীদের ক্ষেত্রে এমআরপি ইস্যু করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট দালালনির্ভরতা কমিয়ে দিতেও ভূমিকা রাখছে বলে মতো তার।

তৌফিকুল বলেন, ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। অনলাইনে ফরম পূরণ করে আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখ পেয়ে থাকেন। ব্যাংকে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে ওই তারিখে এসে তিনি ছবি তোলাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করবেন। এখানে দালালের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে পাসপোর্ট দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এখন এজেন্টদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধিমালা তৈরির কাজ করছে মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, একজন সাধারণ নাগরিক যাতে হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারে সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, সমপ্রতি দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর। তিনি বলেছেন, পাসপোর্ট আবেদনকারী অনেকেই নিজের ফরম নিজে পূরণ করতে পারেন না, তার সাহায্য লাগে। অনেকে অনলাইনে ফরম পূরণ করতেও পারে না। তখন দালালদের প্রয়োজন হয় তাদের। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লিগ্যালি কেউ কাজটা করে না। এখন যাতে তারা আইনসিদ্ধভাবে কাজটি করতে পারে সেজন্য বৈধতা দেওয়ার এ প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জমিজমা ও সম্পত্তির দলিল লেখকদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও যেহেতু বড় অংশের মানুষের এই সাহায্য প্রয়োজন হচ্ছে, সেকারণে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন ব্যবস্থা ঠিক কবে চালু হবে তা বলেননি তিনি। একটি নির্ধারিত ফি-র বিনিময়ে তারা একজন সেবাগ্রহীতাকে পাসপোর্ট ফরম পূরণ, ফরম জমা দেওয়া এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার মতো কাজে সহায়তা করতে পারবেন। ফলে এজেন্টের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফর্ম পূরণ ও আবেদন করতে সরকারি ফির বাইরে একজন গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থব্যয় করতে হতে পারে। তবে ওই ফি সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। যিনি সাহায্য নেবেন কেবল তিনিই ওই ফি দেবেন। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে দালালদের কাজের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। কারণ এখন দালালদের বৈধতা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।

তবে এখন যেভাবে পাসপোর্ট দেওয়া হয়, তাতে দালালদের প্রয়োজন পড়ার কথা নয় বলে মনে করেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, একটু সচেতন হলেই পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীকে দালালের কাছে যেতে হয় না। আর এখন ই-পাসপোর্টের জন্য দালালের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

আবার দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সুফল প্রাপ্তির বিষয়ে দালালদের মধ্যেই আছে দ্বিমত।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন মিজানুর রহমান। তার অধীনে প্রায় ২৫ জন কর্মী আছেন, যারা পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করেন। তবে নিজেকে কিংবা এই কর্মীবাহিনীকে দালাল বলতে নারাজ মিজান।

সরকার যে এজেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন হলে একটা গতি আসবে কাজে। টাকা নির্ধারিত থাকবে। কোনো ঝামেলা থাকবে না। পুলিশ বা র্যাবের দ্বারা কেউ হয়রানি হবে না।

একই ধরনের কাজ করেন মুনসুর আহমেদ শাহিন। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে সরকারি জায়গার তার একটি টিনশেড দোকান আছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে দুটি কম্পিউটার রেখে কাজ করছেন। তবে নিবন্ধনে কোনো লাভ হবে বলে শাহিন মনে করেন না। তার ভাষ্যে, যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক, নিবন্ধন হলেও কোনো লাভ নেই। আর এসব নিয়ে অনেক আগে থেকেই কথা হচ্ছে। কিছু হবে বলে মনে হয় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads