• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষি খাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কৃষি খাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ১৭ জুন ২০২২

স্বাধীনতার ৫০ বছরে কৃষি খাতে চারগুণ বেড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। ১৯৭২ সালে জনপ্রতি খাদ্যশস্য প্রাপ্যতা ছিল দৈনিক ৪৫৬ গ্রাম, ২০০০ সালে তা ৫২২ গ্রাম এবং ২০২০ সালে তা ৬৮৭ গ্রামে বৃদ্ধি পায়। এর কারণ দ্রুত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি। সম্প্রতি নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে কৃষি খাতে। বিশেষ করে বিশ্বে ফল-বাণিজ্যে বাংলাদেশ অবদান রাখছে।

বিদেশে টাটকা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ফলের প্রচুর চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে সীমিত আকারে ফল রপ্তানি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্তবছরে ফলমূল রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে ৬ মাসব্যাপী সপ্তম আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশিনে সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টি ও ব্রান্ডিং তৈরির সুযোগ হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের খোরপোশ পর্যায়ের কৃষি এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষিতে। এক নীরব বিপ্লব সূচিত হয়েছে কৃষির প্রতিটি উপখাতে। দানাদার খাদ্যশস্যের পর আলুর উৎপাদনে বিপুল উদ্বৃত্ত অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করার মতো। দৈনিক জনপ্রতি আলুর চাহিদা হচ্ছে ৭০ গ্রাম, প্রাপ্যতা অনেক বেশি। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে আমাদের আলুর মোট উৎপাদন ছিল প্রায় অর্ধকোটি টন। এখন তা ১ কোটি ৯ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ থেকে এখন আলু রপ্তানি হচ্ছে। তাতে প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে এর ব্যবহারও বহুমুখী হচ্ছে। আগে আলুর ব্যবহার হতো মূলত সবজি হিসাবে। এখন তা চিপস ও পটেটো ক্রেকার্স হিসাবেও সমাদৃত। বিদেশিদের মতো অনেক বাংলাদেশিও এখন মূল খাদ্য হিসাবে রোস্টেড পটেটো খেতে পছন্দ করেন। আলু উৎপাদনে গত ২০ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন প্রায় ৭০-৮০ রকমের প্রচলিত, অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল উৎপাদন হয়ে থাকে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে গত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদন বাংলাদেশ শীর্ষে ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আম, কাঁঠালের বাইরে মৌসুমি ফলের মধ্যে আছে জাম, লিচু, কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা, লটকন, তরমুজ,ফুটি ইত্যাদি।

২০১৮-১৯ সালের হিসাব মতে বাংলাদেশে মোট ৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফলের আবাদ হয়েছিল। ২০২০-২১ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে বাংলাদেশে মোট ৭ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফলের আবাদ হয়েছিল যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে অধিকাংশ আমের ফলন হয়। লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।

জানা গেছে, অধিকাংশ লিচুর ফলন হয় রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায়। কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ১৮ লাখ ৮৯ হাজর মেট্রিক টন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এছাড়া আনারসের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ৪ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। আনারসের বেশিরভাগ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলে। চলতি বছর (২০২০-২১) বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন এলাকা বৃদ্ধিসহ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট হর্টিকালচার উইং বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম জানান, ‘বছরব্যাপী ফল চাষে অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফলমেলা-২০২২ শুরু হয়েছে। ফার্মগেট খামারবাড়িতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফলমেলা আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত চলবে। তিনি জানান, জাতীয় ফলরমলা উপলক্ষে এবং ফলমেলার সাফল্যমণ্ডিত করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় ও জেলা উপজেলা পর্যয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সেমিনার, মেলা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা।

কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি উৎপদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্ভোগ, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস, জনসংখ্যার আধিক্য, জমিতে লবণাক্ততা ইত্যদি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । সরকার এখন সকল মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ফল ও ফলদবৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম বলে কৃষিমন্ত্রী জানান।

কৃষি সচিব মো. সায়েদুর ইসলাম জানান, বিশ্বজুড়ে মহামারি ও বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহর নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রখার প্রয়াসে গ্রাম, শহর, আবাদি জমি, পতিত জমি সবখানে ফলদবৃক্ষ রোপণ করা দরকার। তিনি বিদেশি ফলের পাশাপাশি আমাদের যে দেশীয় ফলগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে সেগুলো সংরক্ষণ ও রোপণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads