• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২৮ জুন ২০২২

সিলেট, সুনামগঞ্জ, বাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে বিপাকে পড়েছেন ৭ লাখ খামারি। চলমান বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ও চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকটে তারা। জেলা পশু চিকিৎসক দল মাঠে নামলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। পাশাপাশি বেড়েছে পশু খাদ্যের দাম।

গত তিন মাস আগে প্রতি বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল এক হাজার টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকায়। আগে যে ভুট্টার গুঁড়া বস্তা প্রতি কেনা যেত এক হাজার ২০০ টাকায়। এখন তা কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টাকায়। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে এক হাজার ৩০০ টাকা কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়। এ ভাবে অতিরিক্ত গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আসন্ন কোরবানি ঈদের পশুর মূল্য বেশি দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষক ও খামারিরা ক্ষতির শিকার হবেন। এছাড়াও অনেকেই পশু বিক্রি করে পুরো বছরের খরচ চালান।

কিন্তু বন্যার কারণে অনেকে এখনো গবাদিপশু রাস্তায় রেখেছেন। এ অবস্থায় জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে কোরবানি ঈদ। সেই হিসাবে ঈদের বাকি মাত্র ১২ দিন। চলতি বর্ষার শুরুতেই বন্যা দেখা দেওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে কৃষক ও খামারিরা।

প্রতি খামারির ওপর ৩ জন করে পরিবারের লোক হলে সারা দেশে ৭ লাখ খামারির রয়েছে ২১ লাখ পরিবার। অর্থাৎ সঠিক মূল্যে কোরবানির পশু বিক্রি করতে না পারলে দুর্দিনে পড়বেন এ সকল কৃষক ও খামারি পরিবার। এদিকে কিছু গবাদি পশু বিভিন্ন সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্টসহ উঁচু জায়গায় রাখলেও বেশি বিপাকে মহিষ পালনকারীরা। অনেকেই বাধ্য হচ্ছে মহিষের পালসহ নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৭ লাখের বেশি খামারির পালিত গবাদিপশুর পরিসংখ্যান প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাদের তথ্য মতে, দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় শহরে এসব খামারির এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব গবাদিপশু বিক্রি করা হবে। আবার অনেকে নিজস্ব পশু কোরবানি দিবেন।

জানা গেছে, এবার কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯টি গরু, এক লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি মহিষ, ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি ছাগল, ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৩টি ভেড়া আছে। আর উট, দুম্বা ও গাড়ল আছে এক হাজার ৪০৯টি। আর গবাদিপশুর খামার আছে ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি। প্রতিটি খামারে কোরবানির জন্য পশু পালন করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে গবাদিপশুর হাটে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে। তারা সিদ্ধান্ত দেবে।

নওগাঁ জেলায় কোরবানি উপলক্ষে গবাদিপশু ভালো দামে বিক্রির আশায় খামারিরা এবারো পশু লালন-পালন করেছেন। পাশাপাশি অনেক কৃষকও কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছেন। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

তারা বলছেন, তিন মাস আগেও গো-খাদ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় ছিল। সমপ্রতি সেই দাম অনেক বেড়েছে। ক্ষতিকর ট্যাবলেট, ডেক্সামেটাসন বড়ি না দিয়ে কোরবানি উপলক্ষে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন।

প্রাকৃতিক ঘাসের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে প্রাকৃতিক খাবার খৈল, ভুসি, ব্যান্ড গুঁড়া, চালের খুদ ও খড়। কিন্তু বাজারে এসব গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাবে গরুর দাম। আর সেই দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় শহরের খামারিদের মধ্যে একই টেনশন।

নওগাঁ এলাকার খামারি সাইফুর রহমান দুলু মিয়া নামে এক খামারি জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলোকে মোটাতাজা করছি। তবে গরুর খাদ্যের দাম এত বেশি হওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে। কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এর মধ্যে যদি আবার সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে খামারিদের পথে বসতে হবে। তাই সরকারের কাছে দাবি, সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধ সব গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ বন্ধ করার।

আরেক খামারি মোকলেছুর রহমান জানান, সামনে কোরবানির ঈদ, আমার মতো অনেক ছোট ছোট খামারি আছে যারা দৈনিক বাজার থেকে গো-খাদ্য এনে গরু লালন-পালন করে। খাদ্যের দাম বাড়ায় তারাই বেশি বিপদে পড়েছে। ভুসি কেজি ৩৫ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। এক মাসে ভুট্টার কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা কেজি হয়েছে। সয়াবিন ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। একজন খামারি হিসেবে আমি মনে করি, যদি এভাবে খাবারের দাম বাড়তে থাকে, আমাদের গরু লালন-পালন করা ছেড়ে দিতে হবে। যারা নতুন উদ্যোক্তা আছে, তারাও সরে আসবে। এতে ক্ষতি আমাদেরই হবে।

খামারি বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরু লালন পালন করেন। এবার তিনি ১৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এসব গরু বিক্রি করতে না পারলে তার অনেক লোকসান হবে। তাছাড়া ওইসব গরু আর খামারে রাখা যাবে না।

খামারি রবিউল ইসলাম জানান, তার খামারে বর্তমানে ৩০টি গরু রয়েছে। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য এ গরু প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে মোটাতাজা করা হচ্ছে। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে খরচের সঙ্গে মিল রেখে হাটে পশুগুলো বিক্রি করতে পারবেন কি না এ নিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তায় আছেন।

এ বিষয়ে মহির উদ্দিন নামে এক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, এবার নওগাঁয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ গবাদিপশু কোরবানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি এক লাখ ৩৩ হাজার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু বেশি রয়েছে। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রশাসন ও বিজিবির সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads