• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
শোলাকিয়ার আকাশে উড়বে ড্রোন

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

শোলাকিয়ার আকাশে উড়বে ড্রোন

  • কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবারো ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশ ও নির্বিঘ্নে নামাজ আয়োজনে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আগামীকাল রোববার  সকাল ৯টায় শুরু হবে ঈদের নামাজ। এটি হবে শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৫তম ঈদের জামাত। এ জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম মো. গোলাপ মিয়া বলেন, করোনার কারণে মাঝখানে শোলাকিয়ায় দুবছর ঈদের নামাজ হয়নি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ঈদুল ফিতরে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদ জামাত হয়। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির নির্দেশনা মেনে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেওয়াল রং করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। চলছে বিদ্যুতের লাইন টানার কাজ। সিসি ক্যামেরাগুলো কোথায় বসবে, দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বললেন, শোলাকিয়ার ঈদের নামাজে বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ইমামতি করার কথা রয়েছে। তাকে না পাওয়া গেলে বিকল্প ইমামেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়েও কড়াকড়ি রয়েছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা মাঠ পরিদর্শন করেছেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম নিরাপত্তার বিধিবিধানগুলো সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এবার সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজে যোগ দিতে হবে। যেন মাঠ থেকে করোনা ছড়িয়ে না পড়ে। তিনি বলেন, ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ঈদ জামাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়। এবারো কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, নামাজের সময় দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও তৈরি থাকবে। নামাজের আগে পুরো ঈদগাহ মাঠ মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকবে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নজরদারির জন্য আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ  বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে  এরই মধ্যে  শহর ও মাঠকে সুন্দর করে সাজানো, মাঠকে নামাজের উপযোগী করে তোলা, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এক কথায় শোলাকিয়ায় আগত মুসল্লিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হবে পৌরসভার পক্ষ থেকে।

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদ জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads