• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে নিরাপত্তা বলয়

ছবি: পিবিএ

জাতীয়

ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে নিরাপত্তা বলয়

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে রাজধানী। আর ঈদের নামাজকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। শুধু ছাতা ছাড়া অন্য কিছু না নিয়ে আসার জন্য নিষেধ করা হয়েছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। এছাড়া সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তায় দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনাও।

ঈদের নামাজ নিয়ে রাজধানীবাসীর উদ্দেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, যে যেখানে খুশি নামাজ পড়তে যান, আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব মহানগর পুলিশের। তবে বৃষ্টির দিন যেহেতু, তাই ঈদগাহে আমরা ছাতা ছাড়া অন্যকিছু অ্যালাও করবো না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদের জামাতে কেউ যেন মোবাইল ডিভাইস সঙ্গে না আনেন, আনলেও যেন হাতে রাখেন। অনেকেই নামাজ শেষে তার মোবাইল খুঁজে পান না। ঈদ জামাতে মুসল্লিদের মধ্যে অনেকেই অসৎ উদ্দেশে আসেন, যাদের আলাদা করা কঠিন। এছাড়া সঙ্গে অন্য কোনো ব্যাগ বহন করা যাবে না।

তিনি বলেন, তিনদিন আগেও দেশে কোভিডে একদিনে ১২ জন মারা গেছেন। তাই কোভিড আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার অবস্থায় নেই। যারা ঈদগাহে আসবেন ন্যূনতম যেন মাস্ক পরা থাকে।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ রাজধানীর ঈদ জামাতগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ঈদুল আজহায় গরুর হাট ব্যবস্থাপনা আর মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা বড় দুটি কাজ। হাটের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো। ছিনতাই-মলম বা অজ্ঞানপার্টির কোনো অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাসিন্দাদের কোরবানির পশু কেনা শুরু হচ্ছে। এবার অনলাইনে প্রচুর পশু বেচাকেনা হচ্ছে, তাই হাটে ভিড় কম। যারা হাটে যাবেন আপনাদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। অতিরিক্ত হাসিল যেন আদায় করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পশুর হাটে জাল টাকা ঠেকাতে আমাদের বিভিন্ন ইউনিট অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের জাল টাকা শনাক্তের মেশিন দিয়েছে। হাটে যে কোনো মানুষকে সন্দেহ হলে আপনারা আমাদের কাছ থেকে যাচাই করে নেবেন।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ঈদে অনেকে বাসাবাড়ি ফাঁকা রেখে গ্রামে চলে যান। তাই যাওয়ার সময় নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে যাবেন। মূল্যবান সম্পদ নিরাপদ হেফাজতে রেখে যাবেন। নিজ থেকে নিরাপত্তা বিধান করে রাখাই উত্তম। সারা পৃথিবীতে মূল্যবান সম্পদ যেমন স্বর্ণ-টাকা ব্যাংকে রাখা হয়। তাই এসব মূল্যবান সম্পদ থাকলে নিরাপদ স্থানে রেখে যাবেন।

তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় প্রোগ্রাম করে পুলিশ দেওয়া আছে। সব ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের পুলিশের পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হয়েছে।

মার্কেট-ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫ দিন আগেই মিটিং করে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। সাধারণত এসময়ে স্বর্ণের মার্কেটে চুরির ঘটনা ঘটে, এতে স্বর্ণের মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীরাই বেশিরভাগ সময় জড়িত থাকে। তাই মহানগর এলাকায় প্রতিটি স্বর্ণের মার্কেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রত্যেকের ডাটাবেজ পুলিশের কাছে আছে। কেউ অপকর্ম করে পালিয়ে যেতে পারবে না।

এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কোরবানির পশুর হাটগুলোর ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ঢাকা মহানগরীর সব বিপণিবিতান, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তির টাকা লেনদেন ও পরিবহনে মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি সব লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নির্দেশনার কথা জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া আ্য্যন্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগ।

নিরাপত্তা নির্দেশনায় বলা হয়, গত ঈদুল ফিতরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ডিএমপি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এরই ধারবাহিকতায় আমরা পবিত্র ঈদুল আজহার বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ডিএমপির জনবল স্বল্পতা থাকার পরও ঈদের ছুটির সময়ে পুলিশের টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যদি নিরাপত্তা সচেতনতাবোধ তৈরি হয় তাহলে পুলিশ এবং ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধ দমনে অনেক বেশি সফল হওয়া সম্ভব। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসন্ন ঈদে আপনার প্রতিষ্ঠান/ বিপণিবিতান/ আবাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিম্নোক্ত নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো-

নিজস্ব প্রতিষ্ঠান/ আবাসন/ অ্যাপার্টমেন্ট/ বিপণি বিতানসমূহে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি জোরদার করা এবং যেকোনো ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা। সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি তদারক করার জন্য মার্কেট মালিক সমিতি/ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক তদারক কমিটি করে দিবারাত্র ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে ওই কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যক্তিগত প্রাক-পরিচিতি পুলিশের মাধ্যমে যাচাই করার ব্যবস্থা করা। প্রতিষ্ঠান/ বিপণিবিতান/ আবাসনকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা/কর্মচারীকে একসঙ্গে ছুটি প্রদান না করে একটি অংশকে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখা যাতে তারা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারক করতে পারেন। সিসি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ধারণকৃত ভিডিও হার্ড ডিস্কে ঠিক মতো রেকর্ড হচ্ছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা। দায়িত্বরত গার্ড এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে নিকটস্থ থানা, সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ, পুলিশ কন্ট্রোলরুমের মোবাইল এবং ল্যান্ড ফোনের নম্বর রাখা, যাতে যেকোনো দুর্ঘটনা/অপরাধ সংগঠনের আশঙ্কা তৈরি হলে দ্রুত পুলিশকে জানানো যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads