• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
পথে পথে তীব্র যানজট

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পথে পথে তীব্র যানজট

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

বাসা থেকে বের হতেই যানজট। পরিবহন সংকট। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়। তারপরও শেকড়ের টানে ছুটছে সবাই। ঢাকা থেকে বের হওয়া ৭ মুখে যানজটে নাকাল যাত্রীরা। শুধু রাজধানী থেকে বের হওয়াই নয়, প্রবেশের ক্ষেত্রেও যানজটের ধাক্কা সামাল দিতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথগুলো হচ্ছে; গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রীবাড়ী, দোলাইপাড় মোড়, জুরাইন রেলক্রসিং, বংশাল মোড়-বাবুবাজার ব্রিজ, গাবতলী মোড়-আমিনবাজার ব্রিজ, আব্দুল্লাপুর মোড়-কামারপাড়া, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা স্টাফ কোয়াটার মোড় ও সাইনবোর্ড-কাঁচপুর ব্রিজ। এসব সড়ক দিয়ে রাজধানী থেকে বের হওয়া সর্বনিম্ন ২০ মিনিটের সময় মধ্যে লেগে যাচ্ছে দেড় ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত।

গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রীবাড়ীর দূরত্ব ২ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। আর বর্তমানে সেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যানজটে। ১০ মিনিটের সড়ক গাবতলী মোড়-আমিনবাজার ব্রিজ। সেখানে এই অংশ পার হতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টা। ৩ কিলোমিটার সড়ক যাত্রাবাড়ী- ডেমরা স্টাফ কোয়াটার মোড় পর্যন্ত। সেখান থেকে বের হওয়া ও প্রবেশর সময় লাগার কথা ৩০ মিনিট।

গুলিস্তান-সদরঘাট ২ কিলোমিটার পার হতে সময় ২০ থেকে ৩০ মিনিট। সেখানে লেগে যাচ্ছে দেড় ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা। এভাবেই রাজধানীবাসীর ঢাকা থেকে বের হতেই দীর্ঘ সময় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হয় গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ,  পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখেই যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে জুরাইন রেলগেট, বংশাল মোড় থেকে বাবুবাজার ব্রিজের পর্যন্ত ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এর মধ্যে জুরাইন রেলগেটে এলাকায় রাস্তা দখল করে ফুটপাতের দোকান, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত এই সড়কগুলোতে যানজট গেলে থাকে বলে ভোক্তভুগীরা জানান।

এদিকে  রাজধানীর গুলিস্তানে সড়কের নিয়ন্ত্রণ কারো হাতে নেই। এই সড়কটি দখল হয়ে গেছে ফুটপাতের দোকান ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ে। দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রার যানযটের ভোগান্তি শুরু হয় গুলিস্তান থেকেই। এই মুখ দিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা যাতায়াত করে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই মুখের প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি জানান, এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, খানাখন্দ সড়ক ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে রাজধানীতে প্রবেশমুখেই প্রতিনিয়ত প্রচন্ড- যানজটে শিকার হতে হয় আন্তঃজেলা যানবাহনকে।

অপরদিকে রাজধানীর স্বামীবাগ এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড পাশের সড়কের অর্ধেক দখল করে পণ্যবাহী ট্রাক ও ঢাকা-নরসিংদী রুটের মেঘালয় পরিবহনের বাসগুলো রাখা হয়। এ কারণে সায়েদাবাদ রেলক্রসিং থেকে রাজধানীর সুপার মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। এছাড়া রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে ইউটার্ন থাকায় প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মার্কেটের সামনে আটকে থাকতে হয়।

রাজধানীর সুপার মার্কেটের সামনে আলম নামের ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক চালক বলেন, পুলিশের লইগ্যা এহানে জ্যাম লাগে। মার্কেটের মোড়ে টার্ন নেয় গাড়িগুলো। পুলিশ টাকা খায়। এর লইগ্যা সায়েদবাদ জনপথ মোড় থেকে বলধা গার্ডেন পর্যন্ত জ্যাম লাইগ্যা থাকে। ঈদের সময় আরো খারাপ হয়েছে। তিনি জানান, এই যানজটের জন্য অনেকে সায়েদাবাদ না গিয়ে দয়াগঞ্জ হয়ে দোলাইপাড় দিয়ে মাওয়া রুটে যাতায়াত করে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় প্রতিদিন সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের যানবাহনগুলো গাবতলীর আমিনবাজার সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরাও আমিনবাজার ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। ঈদের সময় গাড়ির চাপে গাবতলী থেকে আমিনবাজার সেতু ১ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানবাহনগুলো টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়া। এ পথে গাজীপুর থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। সরু রাস্তার কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে জানার জন্য সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানের নূর মোহাম্মদ মজুমদার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কোনো কথা বলেন নাই। তিনি পরিচালক ( প্রশাসন) মো. আজিজুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি জানান, বনানীর প্রধান কার্যালয়ে তৃতীয় তলায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ ও বিআরটিসির সমন্বয়ে। ঈদে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানান, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন। পুলিশের লোকসহ সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে ঈদে যাতায়াতে সড়ক-মহাসড়কে কোনো সমস্যা না হয়।

তারপরও সাভার নবীনগর-আশুলিয়া-টঙ্গী বাইপাস সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে ঘরমুখো মানুষদের বসে থাকতে হয়। কোন কোন সময় ২ ঘণ্টাও অতিক্রম করতে হয় যাত্রীদের।

আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাসে শত শত যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। পুরো রাস্তায়ই যানজট। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

৩ শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থেকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা যাচ্ছেন কারওয়ান বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী কাদের মিয়া। গাবতলী থেকে বাসে রওনা হয়েছেন রাত ১১টায়। সেই গাড়ি সকাল ৮টায় যানজটে আটকে আছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত এলেঙ্গায়। ৯ ঘণ্টায় মাত্র ১০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে ঢাকা থেকেই বিভিন্ন স্থানে কয়েক ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিল তাদের বাস। এখন তিনি জানেন না কখন সেতু পার হবেন আর কখন গন্তব্যে পৌঁছবেন। শুনছিলাম বিরাট রাস্তা হইছে, আগের সেই দিন নাকি আর নাই, জ্যাম হবে না কোথাও। কিন্তু এ কী অবস্থা। সারা রাস্তায়ই যানজট। প্রচণ্ড গরমে সারারাত জেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাচ্চারা। সঙ্গে খাবার নেই, পানি নেই, টয়লেট করার উপায় নেই। আমার স্ত্রীরও খুব কষ্ট হচ্ছে বলেন কাদের।

এবার ঈদের আগে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, উত্তরের যাত্রায় এবার কোনো ভোগান্তি হবে না। টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি, কোনো কাজেই দেয়নি তাদের এসব উদ্যোগ। ঈদের ৩ দিন আগে থেকেই সেতুর উভয় প্রান্তে যানজটে নাকাল যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলীতে যানজটে আটকা পড়ে থাকা বগুড়াগামী মো. ইব্রাহীম নামে এক বাসযাত্রী বলেন, গতকাল রাতে গাবতলী থেকে রওনা হয়েছি, কিন্তু ১০ ঘণ্টা পরও যমুনা সেতু পার হতে পারিনি। রংপুরগামী যাত্রী সানোয়ার বলেন, এখনো ৩ ভাগের একভাগ রাস্তা যেতে পারিনি। গাড়ি একদমই চলছে না।

বিলকিস আক্তার নামে রাজশাহীগামী এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন,  ভোগান্তির শেষ নেই, কোনো প্রকার একটু বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। খুব কষ্টে বাড়ি যাচ্ছি। শুধু টাঙ্গাইলে সেতুর পূর্ব প্রান্তেই নয়, একই অবস্থা পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জেও।

রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাসচালক রোকন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রওনা হয়ে শুক্রবার সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে এসে আটকে আছি। কখন ঢাকা পৌঁছব জানি না। উত্তরের জেলাগুলো থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়া কোরবানীর পশুবাহী ট্রাকগুলো যানজটে আটকা থাকায় আতঙ্কে সময় পার করছেন গরু ব্যবসায়ীরা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হানিফ নামে সিরাজগঞ্জের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানজটে। কখন ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন বুঝতে পারছেন না। এদিকে প্রচণ্ড গরমে গরুগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। গরুগুলোর কিছু হলে তার আর কোনো গতি থাকবে না। মহাসড়কে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবশ্য এই যানজটের জন্য মহাসড়কের ধারণক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চলাচল এবং আনফিট গরুর ট্রাককে দায়ী করেছেন।

তারা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল দিতে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত লেগে যায়। আর এ সময়ের মধ্যে অনেক গাড়ি এসে জমে দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। সেতুর ওপর যাতে যানজট হতে না পারে সে জন্য এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায় টোল আদায়।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটারের মহাসড়ক ঘেঁষে প্রায় ২৪টি বাজার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার সড়কে ১৮টি ও বরিশালের জিরো পয়েন্ট থেকে বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটারের সড়কে ছয়টি বাজার রয়েছে। মহাসড়কটির বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বরিশাল অংশে পড়েছে। এভাবে বাজার বসার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি  জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে  শেষ মুহূর্তে ঈদে বাড়ী ফিরা যাত্রীরা গণপরিবহন সংকট ভোগান্তিতে পরেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও পায়নি টিকিট ও বাস। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে গ্রামের বাড়ী যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকই উঠেছেন বাসের ছাদে। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তরে পরেও যানজট।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে বিভিন্ন বাস কাউন্টারে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় জমে। বিকেল পর্যন্ত অবস্তার পরিবর্তন হয়নি। তবে মাঝে মাঝে যানজট সৃষ্টি হলেও তা বেশিক্ষণ থাকেনি। সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে বিভিন্ন গণপরিবহনের প্রায় দেড় শতাধিক টিকিট কাউন্টার রয়েছে।

একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, শিমরাইল মোড় থেকে সিলেটের বাস বাড়া নন-এসিতে ৫৭০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লার ভাড়া ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, চট্টগ্রামের ভাড়া ৫৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা, কক্সবাজারের ভাড়া ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

আদমজী ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ফেনি জেলার বিউটি আক্তার। তিনি বলেন, ঈদ ছাড়া লম্বা ছুটি পাইনা। তাই গ্রামের বাড়ী যাইতে পারিনা। পরিবারের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। দুই ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এখনো কোন গাড়ি পাই নাই। কাউন্টার থেকে বলেছে দুপুরের পর ছাড়া টিকিট হবেনা। দাঁড়িয়ে যেতে পারলে টিকিট দিতে পারবে। গরম ও ভিরে এত দূর দাঁড়িয়ে যেতে পারব না। তাই অপেক্ষা করছি।

অপর দিকে বাস না পেয়ে বহু যাত্রী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে করে যাচ্ছে। অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে অনেক নারীরাও যাচ্ছে ট্রাকে। এসব যাত্রীদের সিংহ ভাগই গার্মেন্টস শ্রমিক। অনেক কিশোর ও যুবকরা উঠে বাসের ছাদে। কেউ যাচ্ছে এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে। তবু মিলছেনা টিকিট ও বাস।

যাতায়াত পরিবহনের কাউন্টার পরিচালক আবুল বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত যাত্রী সংখ্য স্বাভাবিক ছিল। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই যাত্রী সংখ্যা যাত্রারিক্ত বেড়ে গেছে। গাড়ির তুলানায় যাত্রী অনেক বেশি। তাই টিকিট দেওয়া যাচ্ছেনা। অনেকই দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে টিকিট নিচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া  নেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

সাইনবোর্ড ও শিমরাইল ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) একে, এম শরফুদ্দিন বলেন, শুক্রবার ভোর থেকেই যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। যাত্রী উঠা-নামার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য গাড়ির জটলা দেখা দিচ্ছে। মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। মহাসড়[কে কিছুতেই যেন যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকে কঠোর নজর রয়েছে। আশা করি যাত্রীরা যানজট দুর্ভোগে পরবে না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads