• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষি খাতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কৃষি খাতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০২২

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি খাতের প্রতি গুরুত্ব বাড়িয়েছে সরকার। কারণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। এছাড়া ৬০-৭০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আর শতকরা ৪১ ভাগ জনশক্তি কৃষিতে নিয়োজিত। জিডিপিতে কৃষির অবদান আরো বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম কমানো হয়েছে ৪ টাকা। এখন ২০ টাকার সার বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কৃষি খাতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করতে চায় সরকার।

ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রথমবারের মতো মোট চারটি বিভাগে ১৩ জনকে ২০২০ সালের জন্য ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এগ্রিকালচারাল ইম্পোর্টেন্ট পারসন- এআইপি) কার্ড দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। ২০২১ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এআইপি সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কৃষিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। কৃষিমন্ত্রী জানান, এরই ধারাবাহিকতায়, কৃষির সাফল্যের অন্যতম কারিগর কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, রপ্তানিকারক, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী খামারি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের প্রতি বছর সম্মাননা জানাতে ও তাদের উৎসাহিত করতে সরকার এআইপি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামী দিনের কৃষিকে আমরা বাণিজ্যিক ও সম্মানজনক পেশায় উন্নীত করতে চাই। কৃষিতে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাই। সেজন্য, কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, বাণিজ্যিক কৃষি খামার স্থাপনকারী, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের উৎসাহ ও সম্মান জানাতে এআইপি সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব স্বীকৃতির মাধ্যমে টেকসই কৃষির উন্নয়নে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন, ‘কৃষি উদ্ভাবন জাত/প্রযুক্তি’ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, দিনাজপুর বীরগঞ্জের এ আর মালিক সিডস প্রাইভেট লিমিটেডের (গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউস সোপান মালিক, বাগেরহাটের ফিউচার অর্গানিক ফার্মের সৈয়দ আব্দুল মতিন এবং সিলেটের আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আলিমুছ ছাদাত চৌধুরী।

‘কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প’ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন- নাটোরের দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারির মো. সেলিম রেজা, ঠাকুরগাঁওয়ের মো. মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী, ঝালকাঠির এশা এন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল ফার্মের মো. মাহফুজুর রহমান, পিরোজপুরের জাগো কেঁচো সার উৎপাদন খামারের মালিক মো. বদরুল হায়দার বেপারী, পটুয়াখালীর বাউফলের নুর জাহান গার্ডেনের মো. শাহবাজ হোসেন খান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন সংলগ্ন বিছমিল্লাহ মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারের মো. শামছুদ্দিন (কালু)।

নওগাঁয়ের শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর স্থাপনকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ ‘স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি ফসল/মৎস্য/প্রাণিসম্পদ বনজসম্পদ উপখাতভুক্ত সংগঠন’ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন। ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত’ ক্যাটাগরিতে এআইপি হচ্ছেন পাবনা ঈশ্বরদীর জয়নগরের নুরুন্নাহার কৃষি খামারের মোছা. নুরুন্নাহার বেগম এবং পাবনার ঈশ্বরদীর মা-মণি কৃষি খামারের মো. শাজাহান আলী বাদশা।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী, মনোনীতরা এআইপি কার্ডের সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র পাবেন। এআইপির মেয়াদ হবে এক বছর। এআইপিরা সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস পাবেন। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ও সিটি/মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার পাবেন।

একজন এআইপির ব্যবসা বা দাপ্তরিক কাজে বিদেশে ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে উদ্দেশ্য করে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন ইস্যু করবে। একজন এআইপি তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাতা, পিতা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধাপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন বলেও জানান আব্দুর রাজ্জাক।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের সম্মাননা এখন দিতে হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান রয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত এ সম্মাননা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সারের ১৭টি প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে আবার তিনটি প্রধান উপাদান, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম। আমাদের ৭ থেকে ৮ লাখ টন পটাশিয়াম প্রয়োজন হয়। পটাশিয়াম শুধু বেলারুশ, রাশিয়া এবং কানাডা থেকে পাওয়া যায়। বেলারুশের ওপরে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন নতুন করে রাশিয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কানাডা সরকারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছি, আমাদের প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম তারা সরবরাহ করবে। আরেকটি হলো টিএসপি, আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে সমস্যা হবে না।

কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের ইউরিয়া প্রয়োজন হয় ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ লাখ টন আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করি। এর প্রতি কেজি খরচ হয় ১৮ থেকে ১৯ টাকা। কৃষকের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে ১৬ টাকা। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গ্যাসের সাপ্লাই না থাকায় আমাদের চারটি ফার্টিলাইজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ৫ থেকে ৬ লাখ টন উৎপাদন কম হবে। আমরা উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি, বর্তমানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সেক্ষেত্রে আমাদের সার আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হবে। তবে আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত আশা করছি, সারের কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হলো বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সার।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুবই চেষ্টা করছেন সারের দাম না বাড়াতে। সারে আমরা ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতাম। সেই ভর্তুকি এখন ২৮ থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক সব সময়ই ভর্তুকি দিতে বারণ করে। এটার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই দ্বিমত পোষণ করেন। সারের ভর্তুকি সরাসরি কৃষক পায় কিন্তু ধনী পায় না।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, আমরা বাণিজ্যিক ও সম্মানজনক পেশাগত উন্নীত করতে চাই। কৃষিতে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাই। এজন্য কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী , উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারীঅ, বাণিজ্যিক কৃষিখামার স্থাপনকারী, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের উৎসাহ ও সম্মান জানাতে এআইপি সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব স্বীকৃতির মাধ্যমে টেকসই কৃষির উন্নয়নে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads