• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
নিজ ঘরেই সহিংসতার শিকার ৬৬ শতাংশ নারী

নিজ ঘরেই সহিংসতার শিকার ৬৬ শতাংশ নারী

প্রতীকী ছবি

পর্যবেক্ষণ

নিজ ঘরেই সহিংসতার শিকার ৬৬ শতাংশ নারী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

নিজেদের ঘরেই বেশি অনিরাপদ নারীরা। দেশের ৬৬ শতাংশ নারী ঘরেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণায় নারী সহিংসতার এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের হলরুমে এই গবেষণা প্রবন্ধটি উন্মোচন করা হয়। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচলিত ধারণা, পিতৃতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস হচ্ছে ‘নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ’। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, নারীদের প্রতি বেশিরভাগ সহিংসতা সংগঠিত হয় বাড়িতে। প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজন নারীই পরিবারের লোকজনের দ্বারা নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের ২০টি জেলায় সংঘটিত সহিংসতার তথ্য, পুলিশের কাছে রিপোর্ট হওয়া অভিযোগ, বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম, জেএনএনপিএফ’র নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাবিরোধী সরকারি সংস্থা এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মিডিয়া প্রতিবেদন থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণাটি করা হয়।

গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ- এই প্রচলিত বিশ্বাস এমন একটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যে, জনপরিসরে নারী নিরাপত্তাকে তা আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। এখন পর্যন্ত কোনো আইনই এটা মানতে রাজি নয় যে, বিয়ের পর নারীরা ধর্ষণের শিকার হতে পারেন।

গবেষণায় বলা হয়, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা-সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটি মামলাই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তারপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদের পক্ষে বিচার পায়, ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। আদালত মামলা খারিজ করে দেওয়ার বা আসামিকে খালাস দেওয়ার সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ। শুধু ১০ দশমিক ৭ শতাংশ মামলা থাকে পারিবারিক বিরোধসংক্রান্ত। যদিও বেশিরভাগ অভিযোগ পারিবারিক সহিংসতা অভিযোগ পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদনে ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ-সম্পর্কিত।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে, সহিংসতা প্রতিবেদন কম হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভিযোগ দাখিলসংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকে না, এলাকার ক্ষমতাসীনদের বাধা এবং হস্তক্ষেপ, সুশাসনের অভাব, ঘরে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকা, মামলার ধীরগতির কারণে ভুক্তভোগীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ নিয়ে যেতে চায় না, বেশিরভাগ সময়ই ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে রায় যায়, যা তাদের আরো সমস্যায় ফেলে দেয়।

প্রবন্ধ উন্মোচনের এ অনুষ্ঠানে ‘কর্ম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ২০০৯ বাস্তবায়ন’ বিষয়ক পৃথক একটি গবেষণাপত্রও উপস্থাপন করা হয়।

এতে বলা হয়, কর্ম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন একটি তাৎপর্যপূর্ণ রায় বা নির্দেশনা ঘোষণা করে। তবে এ নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরেও কর্ম এবং এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা বা কৌশল হাতে নিতে দেখা যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটির কথা জানেন না। ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না।

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অসচেতনতার উল্লেখযোগ্য অভাবের কথা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অন্যদিকে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা নির্দেশনা সম্পর্কে জানলেও এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা তাদের নেই। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নিজ ঘরে এর ব্যাপকতা নির্মূল করার জন্য একটি আইন করা এবং তার বাস্তবায়ন করা, নারীরা যেন ঘরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে পারে সেজন্য তাদের সচেতন করতে হবে ও ক্ষমতা বাড়াতে হবে, নারীরা যাতে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা অভিযোগ করতে পারেন সেজন্য সব তথ্য দেবেন এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করবে সরকার। সুপারিশে সরকারকে দেশের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল করিম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর সামিয়া হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর ফারিয়া চৌধুরী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads