• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
১৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে খাবার নেই, দাবি ব্র্যাকের

সংগৃহীত ছবি

পর্যবেক্ষণ

১৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে খাবার নেই, দাবি ব্র্যাকের

ঘরে খাবার আছে ২৯ শতাংশের

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২০

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকার নির্দেশনা মানতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে তাদের ১৪ শতাংশের ঘর ঘরে কোন ধরনের খাবার নেই বলে জানিয়েছে ব্র্যাক। দেশের বিভিন্ন গণ মাধ্যমে জরিপটি প্রকাশিত হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে আড়াই হাজারের বেশি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে ব্র্যাক।

জরিপের ভিত্তিতে তারা বলছে, এই পরিস্থিতিতে দেশে চরম দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের ১৪ শতাংশের ঘরে কোনো খাবারই নেই। তবে ২৯ শতাংশের ঘরে খাবার আছে।

এতে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের ৯৩ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। চট্টগ্রামে ৮৪ শতাংশ, রংপুরে ৮১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে।

ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ প্রোগ্রামের করা জরিপে মাঠ পর্যায়ে ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স, আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং পার্টনারশিপ স্ট্রেনদেনিং ইউনিটের কর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করেন।

শুক্রবার ব্র্যাকের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স কমিউনিকেশনস রাফে সাদনান আদেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই জরিপে দেশের ৬৪ জেলায় ২ হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সম্পর্কে নিম্ন আয়ের মানুষের উপলব্ধি এবং এর অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে ধারণা পেতে জরিপটি চালানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংকটের আগে জরিপে অংশ নেওয়া ২ হাজার ৬৭৫ জনের মাসে গড় আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা। এদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন। মার্চে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪২ টাকায়, অর্থাৎ তাদের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমেছে।

ব্র্যাকের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকার দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর ফলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ চরম দরিদ্রে পরিণত হয়েছেন অর্থাৎ দারিদ্র্য রেখার নিম্ন সীমার নিচে নেমে গেছেন।

এই সংকটের আগে আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৪ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্য রেখার নিম্ন সীমার নিচে এবং ৩৫ শতাংশ দারিদ্র্য রেখার ঊর্ধ্ব সীমার নিচে ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে চরম দারিদ্র্য আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা তাদের কাজ কমে গেছে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

নিম্ন আয়ের মানুষদের ৮ শতাংশের কাজ থাকলেও এখনও বেতন পাননি। কৃষি কাজে সম্পৃক্তদের (৬৫%) তুলনায় অ-কৃষিখাতের দিনমজুর বেশি (৭৭%) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল/রেস্তোরাঁকর্মী এই মাসে আয় শূন্যের কোটায় নেমে আসার কথা জানিয়েছে।

জরিপে বলা হয়েছে, ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর রোগীর চিকিৎসা হয় না। এছাড়া ৯ শতাংশ মানুষ জানেনই না এই অবস্থায় কী করা উচিত।

শতকরা ৯৯.৬ ভাগ মানুষই এই ভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন। এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে এ বিষয়ে নারীদের (৩৮ শতাংশ) চেয়ে পুরুষদের (৬০ শতাংশ) ধারণা বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারের পদক্ষেপে ‘অধিকাংশের সন্তোষ’

নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর করা এ জরিপে দেখা গেছে, এই মহামারী ঠেকাতে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ, ৬৪ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৩১ শতাংশ গ্রামের মানুষ এবং ৪০ ভাগ শহরের মানুষ এই ধারণাকে সমর্থন করেননি। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ (যাদের বেশিরভাগের বাস শহরে) জরুরি ত্রাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

৬৮ শতাংশ মানুষ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণাকে সমর্থন করেন, শতকরা ৭ ভাগ সমর্থন করেন না। ছুটি বিষয়ে সাধারণ মতামত হল, সরকারি ছুটি গড়ে ২২ দিন হতে পারে। এর মধ্যে ৬৪ ভাগ মানুষ ১৪ দিনের বেশি ছুটির পক্ষে।

৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে সরকারের খাদ্য সহায়তা জরুরি, অপরদিকে শতকরা ২০ ভাগ চান নগদ অর্থ সহায়তা । শহরের মানুষের (৪৪ শতাংশ) চেয়ে গ্রামের মানুষই (৫০ শতাংশ) খাদ্য সহায়তার পক্ষে বেশি মত দেন।


জরিপে দেখা গেছে, কী কী ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা সম্ভব সে বিষয়েও ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতার পরিষ্কার ধারণা নেই।

এমনকি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ (জ্বর কাশি শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরাসরি চলে না আসার যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়েও ধারণা নেই অধিকাংশের।

শতকরা ৫৩ জন উত্তরদাতা বলেছেন, প্রতিবেশীর এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাকে শহরের হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন। মাত্র ২৯ শতাংশ হেল্পলাইনে ফোন করার কথা বলেছেন।

মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানোসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে ব্র্যাক। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় সম্পর্কে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে পৃথক, বৃহৎ মাত্রার প্রচারাভিযান চালাতে হবে।

সামাজিক দূরত্বের পদক্ষেপ সঠিক বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের কাছে অতি শিগগির খাদ্য পৌঁছাতে হবে নয়ত তাদের ঘরে রাখা সম্ভব হবে না। জীবিকা অর্জনে তারা বাইরে বের হতে বাধ্য হবেন।

শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন যারা গ্রামকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন। তাদের কাছে জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বোরো ধান কাটা শুরু হবে যা চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত। এ সময় কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং সঠিক দাম পান সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগাম ধান ক্রয় অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।

গ্রাম থেকে শহরে সবজি, দুধ-ডিম-মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে গ্রামে এসবের দাম কমে গেছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

এছাড়া সংকট পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে পুনরায় ব্যবসা চালু করার জন্য অর্থায়নসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছানোর পদ্ধতি-প্রক্রিয়াও আগাম পরিকল্পনা করা উচিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads