• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মফস্বল সংবাদপত্রের কথকতা

চট্টগ্রামের বিখ্যাত পত্রিকা আজাদী

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

মফস্বল সংবাদপত্রের কথকতা

  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০১৮

বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাস প্রায় দুইশ’ বছরের। আবার বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসের যাত্রা কিন্তু মফস্বল শহর থেকেই। ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসের কথা। দিগ্দর্শন, সমাচার দর্পণ ও বাংলা গেজেট নামে তিনটি সংবাদপত্র প্রকাশ হতো ইংরেজ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে। এই দুইশ’ বছরে সংবাদপত্রের ধরন, আকার ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন চাররঙা ছবিসহ সংবাদপত্র কতই না আকর্ষণীয়। বর্তমানে রাজধানী শহর ঢাকা থেকে অসংখ্য জাতীয় দৈনিক প্রতিদিন প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের হাতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রাচীন পত্রিকাগুলোর মধ্যে দৈনিক সংবাদ ১৭ মে ১৯৫১, দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩ ও বাংলাদেশ অবজারভার ১১ মার্চ ১৯৪৯ সালে প্রকাশনা শুরু করে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো হচ্ছে- দৈনিক যুগান্তর, প্রথম আলো, সমকাল, মানবজমিন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, জনকণ্ঠ, আমাদের সময়, ভোরের কাগজ, নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব ইত্যাদি দেশ ও জাতির বন্ধু হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। এ পত্রিকাগুলো প্রতিদিন জাতীয়, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, বিনোদন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ফিচার নিয়ে প্রকাশিত হয়। অথচ অনেক সময় মফস্বলের অনেক ভালো সংবাদ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। ওই সংবাদটি স্থানীয় দৈনিক বা সাপ্তাহিকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। আবার অনেক সময় খবরটি ফলোআপ হয়, যা জাতীয় পত্রিকায় সচরাচর হয় না। জাতীয় পত্রিকা যেখানে পৌঁছতে পারে না, মফস্বল পত্রিকা অনায়াসে সেখানে রাজত্ব করে। তাই গ্রামীণ জনপদের লোকদের কাছে মফস্বল পত্রিকার গুরুত্ব একটু বেশি। আমরা জানি, ঢাকার পত্রিকাগুলো বিভিন্ন দিক থেকে সহযোগিতা পায়। কিন্তু ঢাকার বাইরে থেকে পত্রিকা প্রকাশ ও ছাপানো বেশ কষ্টসাধ্য।

খুব কষ্ট করে মফস্বল শহর থেকে স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সম্পাদক বা প্রকাশকের বহু কষ্টের ফসল একটি স্থানীয় পত্রিকা। আমরা বিভাগীয় শহরের বাইরেরগুলোকে অর্থাৎ জেলা শহরের পত্রিকাকে মফস্বল পত্রিকা বলতে পারি। আর বিভাগীয় শহর থেকে যে পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তাকে আঞ্চলিক পত্রিকা বা সংবাদপত্র বলতে পারি। তারপরও ঢাকার বাইরের সংবাদপত্রকে সবাই আঞ্চলিক পত্রিকা বলে সম্বোধন করে। আমাকে একসময় একটি জনকল্যাণমূলক কাজে পুরো দেশই ঘুরতে হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে গিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়। কথা হয় তাদের পত্রিকা ছাপানোর বিভিন্ন সুখ-দুঃখ নিয়ে। আমাদের কাজ শুরু ফরিদপুর থেকে। জানতে পারলাম, এখানে ঢাকার পত্রিকাগুলো ভোরবেলায় চলে আসে বিধায় স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো নিয়মিত বের হয় না। বরিশাল থেকে বেশ কয়েকটি স্থানীয় দৈনিক প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে নিয়মিত প্রকাশিত হয় বরিশাল বার্তা ও দক্ষিণাঞ্চল। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত হয় পশ্চিমাঞ্চল। কুষ্টিয়ার আন্দোলনের বাজার একটি ভালো সংবাদপত্র। এ কাগজগুলোর গেটআপ-মেকআপ খুবই চমৎকার, ঝকঝকা ও পরিচ্ছন্ন ছাপা। নিউজ তৈরিতেও রয়েছে মুন্সিয়ানার ছাপা।

দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত হয় দৈনিক উত্তর বাংলা। একটি চমৎকার ও সাহসী কাগজ হিসেবে দিনাজপুরে এটি বেশ জনপ্রিয়। নাটোরে দেখলাম জনদেশ পত্রিকাটির রয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। অথচ এটি অনেক সময় পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে পারে না অর্থের অভাবে। এসব পত্রিকা অনেক সময় সরকারি সহযোগিতা থেকেও হয় বঞ্চিত। পটুয়াখালীর তেঁতুলিয়া পত্রিকাটির যত্ন নেওয়া উচিত- পাঠকের মন্তব্য। সিলেট থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় সংবাদপত্র হলো দৈনিক সিলেটের ডাক ও জালালাবাদ। এর মধ্যে সিলেটের ডাক চাররঙা ছাপিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। হকারদের তথ্যমতে, বেশ ভালোই চলে সিলেটের ডাক। এ ছাড়া খুলনার পূর্বাঞ্চলও একটি প্রাচীন জনপ্রিয় পত্রিকা। হবিগঞ্জ থেকেও বেশ কয়েকটি দৈনিক প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে খোয়াই ও হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস অন্যতম। বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে পত্রিকাটির বেশ চাহিদা দেখে ভালোই লাগল। মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয় দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ। এ ছাড়া রয়েছে মুন্সীগঞ্জ সংবাদ, কাগজের খবর ও বিক্রমপুর সংবাদ। নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় পত্রিকাগুলো হলো দৈনিক শীতলক্ষ্যা ও ডান্ডি বার্তা। ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ সংবাদপত্রগুলো প্রকাশিত হয়।

চট্টগ্রামের বিখ্যাত পত্রিকা আজাদী। এ ছাড়া এখান থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় পূর্বকোণ ও কর্ণফুলী। সংবাদপত্রগুলো এ অঞ্চলের জনপ্রিয় দৈনিক। যমুনার তীর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত সিরাজগঞ্জের অত্যন্ত জনপ্রিয় সংবাদপত্র যমুনাপ্রবাহ। লক্ষ্মীপুর জেলার একটি পাঠকপ্রিয় সংবাদপত্রের নাম নতুন চাঁদ। চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি স্থানীয় দৈনিক। এর মধ্যে ইলশে পাড়, চাঁদপুর কণ্ঠ, চাঁদপুর দর্পণ অন্যতম। ইলশে পাড় দৈনিকটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেন আবদুল হান্নান। তিনি ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের চাঁদপুর প্রতিনিধি হওয়ার পরও বহু কষ্টে, সৃষ্টির উন্মাদনায় প্রকাশ করে যাচ্ছেন ইলশে পাড়। অনেক জেলায় স্থানীয় সম্পাদকের সঙ্গে কথায় কথায় জানতে পারলাম শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ রাখেন অর্থের অভাবে। টাকার জোগান হলে প্রতিদিনই বের হতো তাদের মেধা, শ্রম ও সৃষ্টিশীলতার বাস্তব রূপ। অনেক সময় প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশিত হলে শারীরিক নির্যাতনসহ পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সত্যি বলতে কী, এই মফস্বল পত্রিকার মাধ্যমেই একসময় বিখ্যাত সাংবাদিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনেকে উঁচু স্তরে এসে, সেসব পত্রিকার কথা মনে রাখেন না। স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের দাবি হলো, তাদের সহজ শর্তে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সবশেষে বলব, এসব স্থানীয় পত্রিকাগুলো পাঠকপ্রিয়তার পাশাপাশি আনুকূল্য পাক সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকদের, এটাই কামনা।

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল

সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads