• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্বারগতিতে এগোচ্ছে দেশ : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

সংসদ

দুর্বারগতিতে এগোচ্ছে দেশ : প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রকারীরা এটা ঠেকাতে সমালোচনা ও ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত রয়েছে।  তবে সততার সঙ্গে কাজ করলে এই সব ষড়যন্ত্রে কাজ হয় না। জনগণ এর জবাব দেয়।

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর দেওয়া ধন্যবাদ ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে কথা বলার সুযোগ দিতে বলেন। তিনি বলেন, তাদের কথা বলতে দিন। না হলে তাদের কথা পেটের মধ্যে জমা হয়ে গুটুর গুটুর করবে।

বিএনপির সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতা, স্বাভাবিকভাবে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে; দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে, যার প্রতিফলন দেখলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বাস করি সততা নিয়ে কাজ করলে, আর সেই কাজের সুফল জনগণ পেলে সেটাই তৃপ্তি। কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে অবশ্যই দেশের উন্নতি করা যায়। আমরা সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যার সুফল এ দেশের মানুষ পাবে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের পর আমরা জনগণের ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের জন্য কাজ করছি। টানা সরকার গঠন করার কারণে উন্নয়ন কাজগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে। সেই ভোটের মর্যাদা রক্ষা করা, তাদের সেবা করা আমাদের কাজ। উন্নয়ন করার ইচ্ছা থাকলে তা করা যায়। আমরা তা প্রমাণ করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে পদার্পণ করেছি। রজতজয়ন্তীতে ক্ষমতায় ছিলাম। সৌভাগ্য যে সুবর্ণজয়ন্তীতেও ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি। সুবর্ণজয়ন্তী পালনে আমাদের অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল বছরব্যাপী অনুষ্ঠান করব। অনেক অনুষ্ঠান আমাদের চিন্তায় আছে। করোনার দ্বিতীয় ওয়েব দেখা দিয়েছে। আমাদের এজন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমরা সব কর্মসূচি নিয়েছি। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে লক্ষ রেখে আমরা কর্মসূচি পালন করব। কারণ, আমাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষকে সুরক্ষায় রাখা।

বিএনপির উদ্দেশে সংসদ নেতা বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকতে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত, ৫ বার সারা বিশ্বে দুর্নীতিতে এক নম্বর; দুর্নীতির দায়ে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের কারাবরণ করতে হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির মামলা, গ্রেনেড হামলা করে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিরোধী দলকে হত্যা বা আমাকে হত্যার প্রচেষ্টার মামলা-এসব মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, এরা যখন কোনো দলের নেতৃত্বে থাকে সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে?

তিনি বলেন, তারা যতই বক্তৃতা দিক আর কথাই বলুক, এই ধরনের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতা, তার ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। তাদের ওপর আর সেই বিশ্বাস-আস্থাটা নাই। আস্তে আস্তে সেই জায়গাটা থেকে সরে গেছে।

নির্বাচনগুলোতে ভোট কারচুপি হয় না দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছি। সেখানে ভোট নিয়ে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নাই। যার যার ভোট সে নিজে দিচ্ছে। এখন আর ‘১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা’ সে পদ্ধতি নাই।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে নির্বাচন মানে কী ছিল? সবাই জানে। যাদের গায়ে হাজার কালির ছিটা তারা আবার এতো বড় কথা বলে মুখে।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছোটখাটো দুই-একটা ঘটনা ছাড়া অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে জনগণ ভোট দিয়েছে। ভোট দেওয়ার আগ্রহ মানুষের মাঝে আমরা লক্ষ করেছি। সে জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ। তারা সঠিকভাবে একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তাদের মতামতটা প্রকাশ করেছে।

করোনাভাইরাস আরো একটু নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। আরো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে। পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে অনলাইনে পাঠ চলমান রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছি। তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। শতভাগ পাসের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে স্কুল-কলেজে যেতে না পারার যে দুঃখ ছিল তা দূর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। কেউ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। এটাই সরকারের লক্ষ্য। আমরা গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যারাক নির্মাণ করে মানুষের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ব্যারাক হাউজে সাড়ে তিন হাজার, আর ছোট ছোট ঘর করে প্রায় ৬৬ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। আরো এক লাখ মানুষের ঘর তৈরির কাজ চলমান আছে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

সারা দেশে ৫৬০টি মসজিদ তৈরির কার্যক্রম চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মসজিদগুলোতে ইসলামিক সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। ইসলাম ধর্মটি সঠিকভাবে মানুষ জানবে এবং তার চর্চা করবে সেদিকে লক্ষ রেখে এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

করোনার টিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভ্যাকসিনের যখন গবেষণা শুরু হয়, তখনই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলাম কারা কারা গবেষণা করছে আগে থেকে ঠিক করে রাখার। ভ্যাকসিন বাজারে এলেই আমরা কিনব। এর জন্য আমরা এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে রাখি। যখনই বাজারে আসে তখনই ক্রয় করি।

তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে কথা বলেছিলেন। আসলে ভ্যাকসিন এসে নিজেই তার উত্তর দিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর খারাপ কোনো রি-অ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, গুজব রচনা করে, মিথ্যা কথা বলে, অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা বিএনপির জন্মগত চরিত্র। তাদের কথা তারা বলে যাবে। আমাদের কাজ আমরা করে জনগণকে সেবা দিয়ে যাব। কথা তো তাদের বলতে দিতে হবে। না বললে পেটের মধ্যে গুড় গুড় করবে। আর বলে ফেললে বাতাসে উড়ে যাবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এতো কথা। অথচ এরকম একটি কাজ নিজেদের অর্থায়নে করলাম। তার প্রশংসা তো করতেই পারল না। উল্টো বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে। কেউ এতে উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কীভাবে? সেতু দিয়ে পার না হলে তো নৌকায়ই যেতে হবে। উপায় তো নেই। নৌকায় চড়তে হবে। আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের নৌকা বড়, সবাইকে নেব। তবে বেছে নেব, নৌকায় বসে নৌকা যাতে ফুটো না করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads