• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

শালবন বিহার অন্যতম

ছবি: সংগৃহীত

পূরাকীর্তি

ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৮

প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জেলা হিসেবে কুমিল্লার পরিচিতি। ময়নামতির বিপুল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্যও কুমিল্লার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে কোটবাড়ি বা ময়নামতি অবস্থিত। মধ্যযুগে বৌদ্ধ রাজত্বের রাজধানী ছিল এটি। ঐতিহাসিকদের মতে, রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানি ময়নামতির নামানুসারে অনুচ্চ পাহাড়ি এলাকার নাম রাখা হয় ময়নামতি। এ কথাও প্রচলিত আছে- কোনো এক রাজার দুটি মেয়ে ছিল। একজনের নাম লালমতি অন্যজনের নাম ময়নামতি। তাদের নামেই দুটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণা করেন। শালবন বিহার, আনন্দ বিহার প্রভৃতি বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ আছে ময়নামতিতেই। ১৯৫৫ সালে এসব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়। বৌদ্ধধর্ম ছাড়াও এখানে জৈন ও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তিও রয়েছে।

কুমিল্লার ময়নামতিতে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম। কোটবাড়ির কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারের অবস্থান। একসময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে বিহারটির নাম হয় শালবন বিহার। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চারদিকের দেয়াল ৫ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চারদিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চারদিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের চারদিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

শালবন বিহার ছাড়াও ময়নামতির অন্য কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ইটখোলা মুড়া, কোটিলা মুড়া, রূপবান মুড়া এবং প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের জন্য রয়েছে একটি জাদুঘর।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি প্রায় ৪০০টি সোনা ও রুপার মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।

ময়নামতি যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে এ যাবৎ কালে প্রাপ্ত বিভিন্ন পোড়ামাটির তৈজসপত্র, তুলট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি। সোনা ও রুপার মুদ্রা, ব্রোঞ্জ, তামার তৈরি বিভিন্ন জিনিস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads