• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মন ও সম্পর্ক

বাজল বিয়ের বাদ্য

  • অরণ্য সৌরভ
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

প্রেম হোক বা অপরিচিত হোক—বিয়ে মানে বাকি জীবন কারো সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। দুটি হূদয়ের বন্ধন বিয়ে। এখনকার বিয়ে মানে বিরাট উৎসব। সেজন্য বিয়ের স্থান, পোশাক, সাজগোজ, নিমন্ত্রণ, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, মধুচন্দ্রিমাসহ অনেক কিছুর প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিয়ের পরের দিনগুলোর জন্য মানসিকভাবে নিজেকে প্রত করে তোলা। কারণ নতুন জীবনে, রোমাঞ্চকর যাত্রায় উত্থান-পতনের থাবা কখন আসে কেউ বলতে পারে না। ম্যারিজ ডট কম ও ব্রাইডস্টোরি ডট কম অবলম্বনে লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ

প্রেম হোক বা অপরিচিত হোক—বিয়ে মানে বাকি জীবন কারো সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। পরিবার ও সমাজের কাছে বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে আপনার কাছে ‘বিয়ে মানে কী’—সেটি পুরোপুরি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিন শেষে আমরাই (ব্যক্তিরা) বিয়েকে সংজ্ঞায়িত করে থাকি। বিয়ের সুরে একবার মন হারালে, পরে কী হবে—সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। তবে আগে থেকেই কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া উত্তম।

 

‘আমি’ নই ‘আমরা’ ভাবুন

দুটি বিপরীত লিঙ্গের মানুষের দুটি মনের মেলবদ্ধনই হলো বিয়ে। তাই বিয়েতে স্বার্থপরতার কোনও ফাঁকফোকর রাখতে নেই। সেজন্য প্রথমেই মানসিকতা ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’-তে পরিবর্তন করে নিন। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটি এমন নয় যে, আপনার পরিচয় কিংবা ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি, চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরে যাবেন। বরং এটি একটি পরিকল্পনা ও স্বপ্ন। ‘আমার’ বিবেচনা না করে ‘আমাদের’ বিবেচনাতে ভবিষ্যতে সম্পর্ক স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী হয়ে উঠতে পারে। বিয়ে একটি অংশীদারিত্বের বিষয়। তাই দুজনের একই দলে থাকা জরুরি ও প্রয়োজন। সেজন্য অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতাকে বিদায় বলুন।

 

শিখুন প্রজ্ঞাবান দম্পতি থেকে

বিয়ের প্রতিশ্রুতির দুর্দান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীজুড়ে এমন স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অনেক দম্পতি রয়েছে। সেইসব দম্পতির কাছ থেকে শিখুন। মতানৈক্য, যুক্তিতর্ক কীভাবে পরিচালনা করেছে, কীভাবে নিজেদের আত্মপরিচয় এবং সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখেছে—সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে শিখুন। তাদের থেকে জানুন ভালো বা মন্দ সময়েও একে অপরের সাথে কেমন আচরণ করছেন। প্রয়োজনে তাদের পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন। তাদের প্রজ্ঞা নব দম্পতি হিসেবে আপনাকে ভালো নির্দেশনা দিতে পারে।

 

যোগাযোগ রক্ষায় কার্পণ্য নয়

যে-কোনো সম্পর্কে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সম্পর্ককে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদির জন্যও যোগাযোগ খুব প্রয়োজন। প্রথমদিকে নববধূ ও নব স্বজনরা আপনাকে বুঝতে পারবেন না। সেজন্য আপনি কী চান সেসব তাদের বলার মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। পাশাপাশি তাদের কথা শোনার জন্যও নিজেকে মেলে ধরুন।

 

আর্থিক সমন্বয় ও পরিকল্পনা

বিয়ে মানে একক থেকে যুগল জীবনে পদার্পণ। সেজন্য একা জীবন থেকে যুগল বা গৃহস্থালি জীবনে আসবে পরিবর্তন। স্ত্রীর সাথে ভাগ করে নিতে হবে অর্থ। যেহেতু অর্থ বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ, সেহেতু আগে থেকেই যুগল জীবনের সামঞ্জস্য ও পরিকল্পনা করা জরুরি। প্রয়োজনে দুজনে একসাথে মাসিক বেতন, ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারেন। এতে একে অপরের কাছ থেকে কতটুকু আশা করবেন তা জানতে সাহায্য করবে। যেখানেসেখানে যখন-তখন বা আবেগপ্রবণভাবে অর্থ ব্যয় থেকে বিরত থাকুন। ঋণ বেড়ে যেতে পারে সেসব এড়িয়ে চলুন।

 

দায়িত্ব গ্রহণে চ্যালেঞ্জ নিন

বিয়ের সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের একটি সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আপনার আগেকার স্বজন, নববধূ ও আত্মীয়স্বজনদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং সেগুলো পূরণের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করুন।

 

অনাগত সন্তান নিয়ে ভাবনা

বিয়ের পরপরই স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা জিজ্ঞাসা করেন, কবে বা কখন বাচ্চা নিচ্ছেন? সেই মুহূর্তে যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকেন কিংবা মেজাজ হারিয়ে সন্তান না নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন, তাহলে দাম্পত্য পথচলা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। তাই এ বিষয়ে বিয়ের পরপরই নববধূর সঙ্গে আলোচনা করুন। একে অপরের সাথে একটি বোঝাপড়ায় সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলে, উৎসাহীদের উত্তর দেওয়া সহজ হবে।

 

ক্ষমার মনোভাব চর্চা করুন

ক্ষমা মহৎগুণের পাশাপাশি সফল সম্পর্কের চাবিকাঠিও। স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ধরে রাখলে সম্পর্কের ক্ষতি বাড়ে। দুজনের মনের দূরত্ব বাড়ে। পাশাপাশি বাড়িতে বা সংসারে নেতিবাচক আবহাওয়া তৈরি হয়। এসব থেকে ক্ষমার মনোভাব রেহাই করতে পারে। আর ক্ষমার মাধ্যমে একে অপরের কাছ থেকে ইতিবাচক বিভিন্ন দিক সম্পর্কেও শিখতে পারেন। তিক্ততা কিংবা বিরক্তিতে বিভক্ত না হয়ে ক্ষমার মাধ্যমে একসাথে থাকার চেষ্টা করুন।

 

অভিযোজিত ও নমনীয় হোন

চলার পথে মানুষের প্রত্যাশা থাকবে—এটি স্বাভাবিক একটি ধারা। কারণ প্রত্যাশা নতুন পথে চলতে উৎসাহিত করে। বিবাহিত জীবন নিয়েও আপনার প্রত্যাশা থাকাটা স্বাভাবিক। বিয়েতে সবকিছু নিখুঁত হবে এমন আশা করা থেকে বিরত থাকুন। উত্থান-পতন জীবনের জন্যই, তাই মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সম্পর্কের ওপর বিশ্বাস রাখুন, যেন বৈবাহিক জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হলেও হাল ছেড়ে না দেন। সেজন্য মন খুলে কথা বলা ও নমনীয় হওয়া উচিত। আগে যা আশা করেননি তেমন কিছুও ঘটতে পারে। জীবনে ব্যাপক পরিবর্তনও আসবে। তাই অভিযোজিত হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন!

 

সীমা নিয়ে কথা বলুন

আপনার এবং অনাগত স্ত্রীর চিন্তাভাবনায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য থাকতে পারে। থাকতে পারে বিশেষ চাহিদা ও প্রয়োজন। আপনি কতটুকু মেনে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন সে বিষয়ে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন। আলোচনার মাধ্যমে দুজনকে জেনে নিন দুজনে। বিয়ের পর, কী কী করা যাবে এবং কী কী করা ঠিক নয়—সে সম্পর্কে দুজন দুজনকে জানিয়ে রাখুন। আপনার স্ত্রী বা স্বামী কি প্রাক্তনদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে পারেন? কখন প্রিয় বন্ধুদের সাথে নাইট আউট করতে পছন্দ করেন? পরিবার বা বন্ধুদের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো ভাগ করা উচিত কি না—এমন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে রাখুন। আলোচনার মাধ্যমে একসাথে সীমা নির্ধারণ করতে পারেন বা সম্মত হতে পারলে সম্পর্ক স্থায়ীর পথে গড়াবে।

 

বন্ধুত্ব গড়ে, হাসতে শিখুন

স্ত্রী বা স্বামীকে পরম বন্ধু হিসেবে মেনে নিন। কেবল কর্তা বা কর্তী, প্রেমিক বা প্রেমিকা, নেতা বা নেত্রী হিসেবে দেখা থেকে বিরত থাকুন। যার সাথে অধিকাংশ বিষয়ে সরাসরি মন খুলে কথা বলতে পারেন, আবেগগুলো, সুখ-দুখ ভাগ করে নিতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারেন, যার চারপাশে সুখেদুখে থাকতে পারেন—এমন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলুন। বন্ধুত্বের মাধ্যমে একে অপরের চারপাশে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। সুখে একসাথে হাসুন, দুখে একসাথে কাঁদুন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads