• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

রসুল (সা.) যেভাবে রমজান যাপন করতেন

  • ফায়সাল বিন আলী আল বাদানী
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৮

ইবাদতের বিবিধ উপকরণ দ্বারা রসুল (সা.) রোজার দিবসগুলোকে শোভিত করতেন। অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে তিনি সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। রোজা ভাঙার সময় হলে দ্রুত ইফতার করে নিতেন। পক্ষান্তরে সাহরি করতেন অনেক দেরিতে, সুবেহ সাদিকের কিছু আগে। ইফতার করতেন ভেজা বা শুকনো খেজুর অথবা পানি দিয়ে। ভেজা খেজুর দিয়ে সাহরি করাকে পছন্দ করতেন তিনি। জাঁকজমকহীন স্বাভাবিক সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন সবসময়।

রমজানে রসুলের এ আচরণ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তার ইফতার। (তিরমিজি : ৬৯৬, হাদিসটি সহিহ। উপরোক্ত কিছুই যদি না থাকে, তবে রোজাদার যে কোনো হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করে নেবে। তবে খাদ্যই যদি না থাকে, তাহলে ইফতারের নিয়ত করবে। ইফতারের নিয়তই হবে তার জন্য ইফতার) আবু আতিয়া থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি এবং মাসরুক আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাকে উদ্দেশ করে বলল, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই সাহাবি উপস্থিত হয়েছে, যাদের কেউ কল্যাণে পশ্চাৎবর্তী হতে আগ্রহী নয়; তাদের একজন মাগরিব ও ইফতার উভয়টিকেই বিলম্ব করে, অপরজন দ্রুত করে মাগরিব ও ইফতার। আয়েশা বললেন, কে মাগরিব ও ইফতার দ্রুত করে? বললেন, আবদুল্লাহ। আয়েশা উত্তর দিলেন, রসুল (সা.) এভাবেই রোজা পালন করতেন। [মুসলিম : ১০৯৯]

আবদুল্লাহ বিন আবি আউফা থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একবার রমজান মাসে আমরা রসুলের সঙ্গে সফরে ছিলাম। সূর্য অস্তমিত হলে তিনি বললেন, হে অমুক! নেমে এসে আমাদের জন্য ছাতু ও পানিমিশ্রিত ইফতার পরিবেশন কর। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসুল! এখনো তো দিবসের কিছু বাকি আছে। রসুল আবার বললেন, নেমে এসে আমাদের জন্য ছাতু ও পানিমিশ্রিত ইফতার পরিবেশন কর। বর্ণনাকারী বলেন, সে নেমে এসে ছাতু ও পানির ইফতার প্রস্তুত করে রসুলের সামনে উপস্থিত করলে তিনি তা গ্রহণ করলেন। অতঃপর তিনি হাতের ইশারা দিয়ে বললেন, সূর্য যখন এখান থেকে এখানে অস্ত যাবে এবং রাত্রি আগত হবে এতটুকু অবধি, তখন রোজাদার রোজা ভাঙবে। (বোখারি : ১৯৪১, মুসলিম : ১১০১।) জনৈক সাহাবির সূত্র ধরে আবদুল্লাহ বিন হারেস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রসুলের কাছে হাজির হলাম, তিনি সাহরি খাচ্ছিলেন। রসুল বললেন, নিশ্চয় তা বরকতস্বরূপ, আল্লাহপাক বিশেষভাবে তা তোমাদের দান করেছেন, সুতরাং তোমরা তা ত্যাগ করো না। [নাসায়ি : ২১৬২, হাদিসটি সহিহ]

হজরত জায়েদ বিন সাবেত থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা রসুলের সঙ্গে সাহরি খেলাম, অতঃপর তিনি সালাতে দণ্ডায়মান হলেন। আমি বললাম, সাহরি ও আজানের মধ্যবর্তী সময়ের স্থায়িত্ব কতটা? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ দৈর্ঘ্য। [বোখারি : ১৯২১] দেরিতে সাহরি গ্রহণ রোজার জন্য সহজ, রোজাদারের জন্য প্রশান্তিকর এবং দেরিতে সাহরি গ্রহণের কারণে ফজরের সালাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। মূলত রসুল আমাদের জন্য হেদায়েতের যে আদর্শ রেখে গেছেন, তার পুণ্যবান সহচররা সমুন্নত করেছেন যে আদর্শ ও কর্মনীতির মৌল-পন্থা, তার অনুসরণ ও অনুবর্তনেই সাফল্য ও কল্যাণ নিহিত।

অনুবাদ : ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads