• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা ও ব্যবহারিক শিষ্টাচার

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা ও ব্যবহারিক শিষ্টাচার

  • এস. এ. মালিহা
  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০১৯

মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের জন্য নির্ধারিত হলেও এর ব্যবহারিক ও ঐতিহাসিকভাবে নিজস্বতা, ভিন্নতা ও স্বকীয়তা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

·        নামাজের জন্য মসজিদে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সঙ্গে গমন করা উচিত। নামাজের রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করে দৌড়ে যাওয়া ঠিক নয়। এ বিষয়ে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সঙ্গে আসবে। যতটুকু পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।’ (বুখারি শরিফ)।

·        অজুসহ পাকপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত। নাপাক অবস্থায় অথবা পেঁয়াজ-রসুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা উচিত নয়। বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, তামাক ও মাদকজাত দ্রব্য খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা মাকরুহ।

·        মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া এবং মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া পড়া সুন্নত। মসজিদে প্রবেশের দোয়া হলো— ‘আল্লা-হুম্মাফতাহলি আবওয়া-বা রহমাতিক।’ আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া হচ্ছে- ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফালিক।’

·        মসজিদে আগেভাগে গিয়ে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ব্যাপারে রসুল (সা.) উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মাঝে কী ফজিলত রয়েছে, আর লটারি ছাড়া সেটি পাওয়া সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মাঝে কী ফজিলত রয়েছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগে আসত।’ (বুখারি শরিফ)।

·        মসজিদে অতিরিক্ত শব্দ করে কোনো কাজ করা ঠিক নয়। দরজা-জানালা ব্যবহারের সময়, হাঁটা-চলার সময় অতিরিক্ত শব্দ যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। হট্টগোল করা বা উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। পাশের লোকের অসুবিধা হয় এমন উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করাও জায়েজ নেই।

রসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত, সে কী বলছে। তোমরা কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের ওপর শব্দ করো না।’ (বায়হাকি)। উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রেই যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে উচ্চস্বরে কথা বলা কতটা অমার্জনীয় অপরাধ তা সহজেই অনুমান করা যায়।

·        মসজিদে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন অসহনীয় ও অমার্জনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে নামাজের সময় মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠার কারণে ইবাদতের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। অনেক সময় তা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই মসজিদে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বন্ধ করা উচিত। তবে ভুলবশত যদি মোবাইল খোলা থাকে আর নামাজরত অবস্থায় রিংটোন বেজে ওঠে, তাহলে এক হাত ব্যবহার করে বা নিজ নামাজ ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে।

·        ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছাড়া কারো জন্য জায়নামাজ বা এ ধরনের কিছু দিয়ে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা সম্পূর্ণ অন্যায়। মনে রাখা চাই, মসজিদের সীমানায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবার উচিত নিজেদের আল্লাহর গোলাম হিসেবে সমর্পণে ব্রতী হওয়া এবং সব ভেদাভেদ, আমিত্ব ও অহমিকা ভুলে একই কাতারে দণ্ডায়মান হওয়া।

·        মসজিদে প্রবেশকারীর উচিত দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করে বসা। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবে না।’ (বোখারি শরিফ)।

·        জামাতে নামাজ আদায়ের সময় কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ওয়াজিব। কাতারে জায়গা ফাঁকা রাখা হলে সেখানে শয়তান এসে অবস্থান নেয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মেলাও, ফাঁক বন্ধ করো, শয়তানের জন্য জায়গা ফাঁকা রেখো না। আর যে ব্যক্তি কাতার মেলায়, আল্লাহ তাকে নিজের রহমতের সঙ্গে মেলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখে, আল্লাহ তাকে নিজের রহমত থেকেও দূরে রাখবেন।’ (আবু দাউদ)। এছাড়া ইমামের দুই দিক থেকে সমান্তরালে কাতার পূরণ করতে হবে।

·        মুকতাদিরের উচিত সর্বদা ইমামের অনুসরণ করা, ইমামের আগে কোনো আমল করা তার জন্য বৈধ নয়। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও করা যাবে না। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের আগে মাথা ওঠায় তার কী ভয় হয় না যে আল্লাহতায়ালা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ)।

·        মসজিদ সর্বদা ধুয়ে-মুছে পূতপবিত্র রাখা উচিত। মসজিদের জিনিসপত্র নিজস্ব কাজে বা মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।

·        মসজিদে সর্বদা ইতিকাফের নিয়তে প্রবেশ করে মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা উচিত।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads