• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নেক কাজ আজাব দূর করে

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

নেক কাজ আজাব দূর করে

  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০২০

পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আজ আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সর্বস্থানে অশান্তি, মুসিবত ও ফিতনা। কিন্তু কেন? দিন দিন কেন অশান্তি বেড়েই চলেছে? অথচ জীবন ধারণ করার উপকরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, হচ্ছে সহজলভ্য। মানুষের আর্থিক অবস্থার হচ্ছে উন্নতি, দ্বিগুণ। শিক্ষিত হচ্ছে মানুষ। গ্রাম পরিণত হচ্ছে শহরে। শিক্ষার হার বাড়ছে। চিকিৎসাবিদ্যা ও উপকরণ আধুনিক থেকে আধুনিক। যোগাযোগ ব্যবস্থা তো উন্নতির শিখরে। দুনিয়া আজ হতের মুঠোয়। এত আয়োজন সবই একটু সুখের আশায়। ক্ষণিক শান্তিতে বসবাসের জন্য। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, আশা পূরণ হওয়া তো দূরের কথা বরং অশান্তি আরো বেড়েই চলেছে। তাহলে মৌলিক শান্তি কোথায়? কোন কাজ করলে মানুষ সুখী হবে? কোন পথে চললে স্বস্তি আসবে? এর উত্তরে আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চৌদ্দশ বছর আগে কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জাতিকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।

হজরত জয়নব (রা.) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মাঝে সৎকর্মশীল লোকেরা বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন- হ্যাঁ, যখন পাপাচার বৃদ্ধি পাবে (মুসলিম)। অন্য হাদিসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বিস্তারিত বলেছেন, যখন গণিমতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করা হবে। আমানতকে গণিমত মনে করা হবে। জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে। দ্বীন ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করা হবে। পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে। সন্তান মায়ের অবাধ্য হবে। বন্ধু-বান্ধবকে আপন মনে করবে। পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে। মসজিদে শোরগোল করা হবে। পাপী ব্যক্তিরা গোত্রের সর্দার হবে। জাতির নিকৃষ্ট ব্যক্তি তাদের নেতা হবে। ক্ষতির ভয়ে মানুষের সম্মান করা হবে এবং এই উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তীদের ওপর অভিশম্পাত করবে। তখন তোমরা অপেক্ষা কর রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূ-কম্পনের, ভূমি ধ্বসের, রূপ বিকৃতির, পাথর বৃষ্টির এবং সুতা ছেড়া দানার মতো একের পর এক নিদর্শনসমূহের। (তিরমিজি)।

সম্প্রতি আমাদের সামনে এ নিদর্শনগুলো খুবই স্পষ্ট। আজ আমানত বা আমানতদারী যেন দেখাই যায় না। বিশ্বাসও আজ আমাদের থেকে চলে গেছে। জাকাত না দেওয়ার জন্য কত বাহানা তালাশ করা হয়। আবার দিলেও হিসাব ছাড়া মানুষকে দেখানোর জন্য কিছু দিয়ে দেয়। ইলম শেখার আজ প্রধান উদ্দেশ্যই যেন দুনিয়া। জাগতিক শিক্ষা তো দুনিয়ার উদ্দেশ্যেই। তদুপরি দ্বীন শিক্ষাও এখন সার্টিফিকেট অর্জন ও চাকরির জন্য হচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে বেতন বেশি হলে চলে যাচ্ছে। পিতা-মাতার অবাধ্যতা তো বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। বউকে প্রাধান্য দিয়ে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছে। উম্মত আজ বিভক্ত হয়ে পূর্ববর্তীদের গালি ও অভিশম্পাত করেছে। অজ্ঞরা আজ নেতৃত্বের চূড়ায় বসে আছে। অনেক মসজিদে শোরগোলের কারণে এবাদতকারীগণ এবাদত করতে পারে না। সভায় সম্মানের স্থান সভাপতি দিতে হচ্ছে ঘৃণাভরে কোনো অশিক্ষিত নেতাকে, না হয় সভাও হবে না। সুতরাং হাদিসের বর্ণনা অনুপাতে সবই বর্তমানে ঘটছে। পাপের আজ মহড়া চলছে যেন সর্বত্র। ফলে পাথর বৃষ্টি, ভূমি ধ্বস, রক্তিম বর্ণের ঝড়, ভূ-কম্পনসহ একটির পর একটি আজাব অবতীর্ণ হচ্ছে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র আক্রান্ত বিভিন্ন ফিতনায়। এসব আজাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবনকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে। সর্বত্র হতাশা আর হতাশা।

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এসব আজাব-গজব থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে তার পথ ও পন্থা বলে গেছেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত- হুজুর (সা.) এক রাতে ঘুম থেকে উঠে বলতে লাগলেন, আজ রাতে কত রহমত নাজিল হলো আর অবতীর্ণ হলো কত ফিতনা-বিপদ। কে জাগিয়ে দেবে কক্ষে অবস্থানকারিনীদের? তিনি তার বিবিগণের প্রতিই ইঙ্গিত করছিলেন। যাতে তারা নামাজ পড়ে। (রহমত অর্জন করবে আর ফিতনা ও বিপদ থেকে মুক্তিলাভ করে।) দুনিয়ায় সুশোভিত কত নারী আখিরাতে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হবে। (বুখারি)

এতে স্পষ্ট হয় যে, একমাত্র ভালো কাজ ও সাওয়াবের কাজই আমাদেরকে মুসিবত, ফিতনা ও অশান্তি দূর করতে পারে। উপরোক্ত হাদিসে নামাজের কথা বলা হয়েছে। নামাজই মুক্তি দিতে পারে সকল আজাব-গজব থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এ একটি কথায় দুটি জিনিস স্পষ্ট হয় যে, নামাজ এমন একটি এবাদত যা আদায়ের কারণে পাপ থেকে ফিরবে। অন্য হাদিসে আছে সদকা বিপদ-আপদকে রূখে দেয়। সুতরাং ফিতনা-আজাব থেকে একমাত্র উত্তরণের পথ হলো নেকির কাজ করা। নামাজ আদায় করা, সদকা ও জাকাত দেওয়া ইত্যাদি। পাপ যতই আমাদের সমাজে, দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে। আর তার সাথে আশান্তি, মসিবত ও ফিতনাও প্রবেশ করছে। তাই আমাদের দুনিয়া-আখিরাতে বাঁচতে হলে বা শান্তি-সুখে থাকতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথ ছাড়া বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মুফতি কাজী সিকান্দার

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, আশরাফাবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads