• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় ইসলাম

  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাশেদ নাইব

 

 

 

একটি দেশের ভবিষ্যত হলো সে দেশের তরুণসমাজ। এ ভবিষ্যৎকে নষ্ট করার অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে বাস্তবে তা প্রয়োগ করা। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের ওপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। তারা সংস্কৃতির নামে, অপসংস্কৃতির চর্চায় মেতে উঠেছে। সিনেমার নাচ, গান পোশাক, এসব বেশিরভাগ সময় উদ্ভটভাবে সন্নিবেশিত হয়ে থাকে। তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক ও উত্তেজনা রয়েছে, যা ক্ষণিকের জন্য তাদের কাছে আনন্দের মনে হয়ে থাকে। এতে একটা মোহ কাজ করে এতেই যুবসমাজ ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তরুণরা চঞ্চল। তারা চায় সদা নতুনত্বের সাথেই চলতে। এই এগিয়ে যাওয়াতে তারা যে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না।

সংস্কৃতি মূলত একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। একটা জীবনবোধ বিনির্মাণের কৌশল। এটি একটা মানুষের জীবনে শৈল্পিক প্রকাশ, সমাজজীবনে স্বচ্ছ দর্পন। এ সংস্কৃতির দর্পনে তাকালে কোনো সমাজের মানুষের জীবনাচরণ স্পষ্ট দেখা যায়। অন্য কথা সমাজের মানুষের জীবন আচরণ থেকেই একটা সংস্কৃতির জন্ম হয়ে থাকে। তবে সংস্কৃতি এমন কিছু নয় যে, তা এক ছাচেই তৈরি হবে, অথবা এর পরিবর্তন করা যাবে না; বরং সমাজ ও জীবন পরিবর্তনে এবং সময়ের ধারায় এ সংস্কৃতি পরিবর্তিত হতে পারে। এমন কী অন্য কোনো সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে পারস্পরিক বিনিয়োগ করার মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।

অন্যদিকে ভিনদেশী সংস্কৃতি তোড়ে নিজস্ব সংস্কৃতির অস্তিত্ব হারিয়েও ফেলতে পারে। আর দুর্ভাগা পরিণতি যে সমাজের হয়, সে সমাজেই সংস্কৃতির বন্ধাত্বের জন্ম হয়। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজেও তাই ঘটছে।

সুস্থ সংস্কৃতি যেমন সুস্থ ও সুন্দর পথ দেখায় তেমনি অসুস্থ সংস্কৃতি মানুষকে অসুস্থ পথে নিয়ে যায়।

বর্তমানের তরুণেরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের সুস্থ সংস্কৃতির প্রতি যত্নবান হতে হবে। যতদিন তারা সুস্থ সংস্কৃতিতে প্রবেশ না করবে ততদিন অব্দি এ সমাজ দেশের তরুণ প্রজন্ম অসুস্থই থেকে যাবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করার জন্য অতিব জরুরি ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা। কারণ, এর মাধ্যমেই এনে দিতে পারে সুস্থ সংস্কৃতি, আর একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সংস্কৃতির সুস্থতা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানু কুরাইজাহর সাথে যুদ্ধের দিন হাসইবনু সাবিত (রা.) বলেছিলেন (কবিতা আবৃতি করে) মুশরিকদের দোষত্রুটি তুলে ধরো। এ ব্যাপারে জিবরাইল (আ.) তোমার সঙ্গী। হাসসান ইবনু সাবিত (রা.) কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবি বা ইসলামের কবি বলা হতো। কারণ, কাফির কবিরা যেমন আল্লাহর রাসুল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বদনাম করত, তেমনি তিনিও কাফিরদের কবিতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে তার জবাব দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৪১২৪)। সাবিত (রা.) জন্য মসজিদে নববীতে একটা কাব্যিক রচনার মিম্বারও করা হয়েছিলো।

আজ বিশ্বব্যাপী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আচরণ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে সবার কাছে। তিনি আদর্শ সংস্কৃতির শিক্ষক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র, পদচারণা শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত রেখে গেছে; যা ধারণে আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠ উম্মতের মর্যাদার অধিকারী হতে পারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (কানজুল উম্মাল) অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা মুনাফেকির জন্ম দেয়। মুসলিম উম্মতের জন্য চরিত্র ধ্বংস করতে এটুকুই যথেষ্ট। চরিত্র রক্ষার তাগিদে প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য উত্তম সংস্কৃতি আঁঁকড়ে ধরা। দেশ ও উম্মতের কল্যাণে তৎপরতা চালানো যাতে ইসলামী সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, গান-বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফেকি উৎপন্ন করে। (বায়হাকি)

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads