• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
মনীষীদের রমজান

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

মনীষীদের রমজান

  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২১

মাহে রমজানের তাৎপর্য সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি। পবিত্র এই মাসকে আল্লাহতায়ালা বান্দার আত্মশুদ্ধির ও তাকওয়া অর্জনের জন্য দান করেছেন। রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব আমাদের জানা আছে। রমজানে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা ও মাগফিরাতের অভাবনীয় সুযোগ আমাদের জন্য রয়েছে। এই মাহে রমজানকে আমরা কীভাবে অতিবাহিত করছি, আর আমাদের আকাবিরে ইসলামগণ কীভাবে কাটাতেন এই নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

আমাদের সর্বজনীন  মুরব্বী সুপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব হজরত শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.) তারাবিতে সোয়া পারা শোনাতেন, সাহরি পর্যন্ত তরজমাসহ তা পড়তেন চার-পাঁচ বার। সে অংশটুকু তাহাজ্জুদের সময় শোনাতেন দুবার। সাহারি খাওয়ার পর ফজরের নামাজের আগে এবং পরে ঘুমানোর আগে সে অংশটুকু একবার তিলাওয়াত করতেন। সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে শীতের দিনে চাশতের নামাজে একবার এবং গরমের দিনে দুবার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাজের পনের মিনিট আগে দেখে দেখে দুবার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাজের ফরজের আগে সুন্নতে দুবার, পরের সুন্নতে একবার তিলাওয়াত করতেন। জোহরের নামাজের পর বন্ধুদের কাউকে একবার শোনাতেন। আসরের নামাজের আগে দু বা একবার পড়তেন। আসরের পর বয়স্ক কাউকে একবার শোনাতেন। মাগরিবের নামাজের পর নফল নামাজে সেই শোয়া পারা আরেক বার তিলাওয়াত করতেন। প্রতিদিনের আমল ছিল এভাবে। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ত্রিশবারে ত্রিশ পারা তিলাওয়াতে জোর দিতেন। [শায়খ জাকারিয়া (রহ.) এ আত্মজীবনী হতে সংগৃহীত]

কুতুবুল আলম মুজাদ্দিদে মিল্লাত হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী (রহ.) বাদ মাগরিব আওয়াবিনে দু পারা ও তাহাজ্জুদসহ দৈনিক অর্ধ খতম  কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হজরত মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.) বাদ মাগরিব নফলে শোয়া পারা তিলাওয়াত করতেন। আর তাহাজ্জুদে করতেন সাধারণত দু’পারা তিলাওয়াত। তারাবিতে আমৃত্যু তিনি এই আমল করতেন। আল্লামা কাসিম নানুতুবী (রহ.) ১২৭৭ হিজরিতে মক্কা-মদিনা সফরকালে রমজান মাসে কুরআন পাক মুখস্থ করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। একবার তিনি এক রাকাতে সাতাশ পারা তিলাওয়াত করেছিলেন। হাজী এমদাদুল্লাহ মক্কি (রহ.) সারা রাত বিভিন্ন হাফেজদের থেকে পালাক্রমে নামাজে তিলাওয়াত শুনতেন। শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (রহ.) হাফেজ ডেকে নামাজে সারারাত কোরআন শরিফ শুনতেন। তারাবিতে কখনও ছয় পারা, কখনও দশ পারা পড়া হতো। হযরত শাহ আবদুর রহিম রায়পুরী (রহ.) হাফেজে কুরআন ছিলেন। প্রায় সারারাত কুরআন তিলাওয়াত করতেন। চব্বিশ ঘণ্টায় তিনি শুধু এক ঘণ্টা ঘুমাতেন। শায়খুল ইসলাম হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) বাদ আসর দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবদুল জলিল (রহ.)-এর সঙ্গে শোয়া পারা দাওর করতেন অর্থাৎ পরস্পর শোনাতেন।

আল্লামা তোফাজ্জল হক হবিগঞ্জী (রহ.) রমজানের ২০ রাকাত তারাবির পর সোজা রুমে চলে যেতেন। অল্প সময় বিশ্রাম নিয়ে তাহাজ্জুদের জন্য প্রস্তুত হতেন। দুই তিন কোরআনে হাফেজকে পেছনে রেখে তাহাজ্জুদের ইমামতি নিজেই করতেন। প্রথম রাকাতে এক পারা তেলাওয়াত করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে দুই পারা তেলাওয়াত করতেন। সাথে সাথে চোখের পানি বুক পর্যন্ত পৌঁছে যেতো। জাহান্নমের কোনো আয়াত আসলে শব্দ করে কান্না করতেন। দোয়ার আয়াত আসলে বারেবারে তেলাওয়াত করতেন। এতো সুমধুর কণ্ঠে তেলাওয়াত করতেন যা গত রমজানেও ধারাবাহিকতায় জারি ছিল। ওই রমজানে মাওলার সান্নিধ্যে চলে গেছেন। আল্লাহ হজরতকে জান্নাতুল ফেরদৌসের আলা মকাম দান করুন। আমিন।

এছাড়াও বরুনার পীর সাহেব, চরমোনাই-এর কুতুব সৈয়দ ইসহাক (রহ.) ও মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.),  শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব (রহ.), আল্লামা সিরাজুল ইসলাম বড় হুজুর (রহ.), মুফতি আমিনী (রহ.), গহরপুরী (রহ.) ও বাঘার শেখ সাহেব (রহ.)সহ দেশের বরেণ্য বুজুরগানে দীনের রোজা, ইফতার, তারাবিহ, তাহাজ্জুদে তেলাওয়াত ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।

তারা কীভাবে রমজান মাস অতিবাহিত করতেন আর আমরা কীভাবে রমজানের সময়গুলো পার করছি। তারা রমজান মাস গনীমত মনে করে সারা রমজান ইবাদতে কাটাতেন। আল্লামা মুনিরুজ্জান সিরাজী (রহ.) অনেক বড় বুজুর্গ ছিলেন। স্বচক্ষে দেখা হজরতের আমলগুলো এখনো স্মৃতিপটে ভাসে। বৃদ্ধ বয়সেও দাঁড়িয়ে তারবীর দীর্ঘ বিশ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। অনেক সময় দৃঢ় মুরাকবা-মুশাহাদা ও ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। আজ হজরত আমাদের মাঝে নেই আল্লাহ হজরতকে জান্নাতুল ফেরদৌসের আলা মকাম দান করুন। আমিন।

এসব বুজুর্গের আদর্শ চরিত্র শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিতে পড়া বা দেখার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয় নাই; বরং যেন আমরা প্রত্যেকেই সাধ্যমতো তাদের পথে, তাদের মতে চলতে পারি। যারা দুনিয়ার বিভিন্ন ঝামেলা থেকে মুক্ত, তাদের জন্য কি অপূর্ব সুযোগ নই যে, তারা বছরের এগারোটি মাস বৃথা নষ্ট করে রহমতের মাসে আপ্রাণ চেষ্টা করে মরিয়া হয়ে জীবনপণ করে আল্লাহর রহমতের আশা করবে। রমজান মাসটাকে অপচয় সময় পার না করে ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে অতিবাহিত করবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক

শেখ আরিফ বিল্লাহ আজিজী

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads