• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মাহে রমজানে আমাদের করণীয়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

মাহে রমজানে আমাদের করণীয়

  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০২১

তাশরীফ আহমদ

সিয়াম শব্দের অর্থ-বিরত থাকা। আমরা সাধারণত জানি, সারাদিন পানাহার ও স্ত্রীসহবাস থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে সিয়াম। কিন্তু না, শুধু এগুলো থেকেই বিরত থাকলে রোজার পূর্ণাঙ্গ হক আদায় হবে না। মূলত এই রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি সব প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজ এবং মিথ্যা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সবগুলো থেকে বিরত থাকার নাম-ই হচ্ছে মূলত সিয়াম সাধনা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখার পরও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় মহান আল্লাহতায়ালার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-১৭৮২)

সুতরাং বুঝা গেল সারাদিন না খেয়ে থেকে উল্টা-পাল্টা কাজ করে বেড়ালে সেই রোজার কোনো মূল্য নেই। তাই রোজা রাখার পূর্বে ভেবে দেখা দরকার যে, আমি সারাদিন ভালো হয়ে থাকতে পারবো কিনা? না হলে শুধু শুধু না খেয়ে উপবাস থাকা দরকার নেই। এতে আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। ফলাফল শূন্য! সিয়ামরত অবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই সব প্রকার অন্যায় ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তখনই এর নাম হবে সিয়াম সাধনা। এর নাম হবে বিরত থাকা। আমরা এখনই প্রতিজ্ঞা করি, এবারের রমজান হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান। নিচে উল্লিখিত ১৩টি কাজের মাধ্যমে চলমান রমজানকে অর্থবহ করে তোলা সম্ভব।

১. প্রতিদিন ন্যূনতম চার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া ও কিছু সময় আন্তরিকভাবে দোয়ায় কাটানো। শেষ রাতের  দোয়া ও ইস্তিগফার আল্লাহর ভীষণ পছন্দ। আল্লাহ বলেননি সারা দিন-রাত কাঁদতে, তবে মাঝে-মাঝে রাব্বুল আলামীনের অগণিত নেয়ামতসমূহ ও পরকালের কথা ভেবে অশ্রু ফেলে কাঁদুন। হূদয়ের গহীন থেকে অজস্র অশ্রুপাত করুন। নিশ্চয়ই চোখের বিফলে যায় না। ২. সারা মাসে কমপক্ষে কোরআনের একটি খতম পরিপূর্ণ করা। যারা কোরআন কম পড়তে পারেন তাদের জন্য। রাতের বেলা কিছু সময় তিলাওয়াত করা। রাতের তিলাওয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি। ৩. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে (ওয়াক্তের শুরুতেই) পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আদায় করা। অবহেলা না করা। ধীরে-সুস্থে তারাবির সালাত আদায় করা। অতি তাড়াহুড়ো না করা।  বাসার নারীদেরও জামাতে শরিক করানো। (তাঁদের কাতার হবে সবার শেষে)

৪. গুনাহ থেকে বাঁচা। বিশেষ করে  রোজা অবস্থায় চোখ, কান এবং জিহ্বা দিয়ে কোনো ছোট গুনাহও না করা। যথাসাধ্য অনলাইন থেকে দূরে থাকা। টিভিতে ইসলামি অনুষ্ঠানগুলো দেখা যাবে। তবে, এর বেশি কিছু না। মনের সংকীর্ণতা দূর করে উদারচিত্তে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া। বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।  কোরআন ও হাদিসে এই ওয়াদা আছে। ৫. সারা মাসে অন্তত একবার সকল আত্মীয়ের কাছে ফোন করে তাদের খোঁজ নেওয়া। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজের একটি। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। ৬. প্রতিদিন অন্তত তিন ঘণ্টা সময় কোরআনের তিলাওয়াত, হিফজ, অর্থ ও তাফসির পাঠে ব্যয় করা। সম্ভব হলে সম্মিলিতভাবেও এই কাজটি করা যায়। ৭. সাধ্যানুযায়ী পুরো মাসজুড়ে অসহায় ও দরিদ্রদের দান-সদাকাহ করা। এক্ষেত্রে নিজ আত্মীয়দের প্রাধান্য দেওয়া। এটিই ইসলামের নির্দেশনা।

৮. রামজানের শেষ দশ দিন ইবাদাতের জন্য কোমর বেঁধে নামা এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করা; শুধু ২৭ তম রাত্রিতেই নয়। ৯. সাহরি ও ইফতারে খাবারের অপচয় না করা এবং খাবার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, কথা-বার্তা ও হৈ-হুল্লোড় না করা। খাবার তৈরিতে বাসার মা-বোনদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করা ও কোনো খাবার পছন্দ না হলে মেজাজ না হারানো। ১০. নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের সময়ের মাসনুন জিকিরগুলো গুরুত্বের সাথে পড়া। চাশতের নামাজে অভ্যস্ত হওয়া। ১১. সারা মাস তাওবাহ এবং ইস্তিগফারে লেগে থাকা। সাহরি ও ইফতারের সময়ে কিছুক্ষণ দোয়া করা। এদুটো সময়ে  দোয়া কবুল হয়। জেনে রাখবেন, রামজানে মুমিনের প্রধান টার্গেটই হলো, নিজের গুনাহ মাফ করানো। ১২. গিবত, গান শোনা, নাটক-মুভি দেখা, পর্নোগ্রাফি, কুদৃষ্টি, কুধারণা, হিংসা, অহংকার এসব গুনাহ যারা ছাড়তে পারছেন না, বরং এগুলো জীবনের সাথে মিশে গেছে ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তারা রমজানের দীর্ঘ এক মাসের কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারেন। যারা অনলাইনে গেইম খেলায় আসক্ত তারাও নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারেন। ১৩. আমরা এক ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে আছি। কেউ জানি না, তাকদিরে কী আছে। সুতরাং এই রমজানই হতে পারে আমাদের অনেকের জীবনের শেষ রমজান। সেটি মাথায় রেখে হাসি-ঠাট্টা, ফূর্তিবাজি ও গতানুগতিক উদ্দেশ্যহীন জীবনযাপন বাদ দিয়ে যথাসাধ্য তাকওয়া, বিনয় ও গাম্ভীর্যের সাথে এমনভাবে এই রামজান কাটানো, যেন সবাই মৃত্যুপথযাত্রী। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এই কাজগুলো সঠিকভাবে করার তাওফিক দিন, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং পবিত্র মাহে রমজানের সব বরকত রহমত আমাদের ওপর বর্ষিত করুন। আমীন।

লেখক : শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক

সদস্য, বাংলাদেশ কওমি তরুণ লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads