• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শান্তিপ্রতিষ্ঠায় বদরের যুদ্ধ

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

শান্তিপ্রতিষ্ঠায় বদরের যুদ্ধ

  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০২১

আজ ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য হিজরি দ্বিতীয় সনের এই দিনে মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধ  হক-বাতিলের লড়াই। অবিশ্বাসী বিশাল সুসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসী ও নবীপ্রেমিকদের প্রত্যক্ষ সশস্ত্র যুদ্ধ। বদর প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ায় এর  নামকরণ হয়েছে বদরের যুদ্ধ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ওহি নাজিল হওয়ার পর অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে কোরআনের সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার কাজ করেছিলেন তিনি। ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়ার কারণে তৎকালীন কাফের-মুশরিকরা প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবিদের ওপর নির্মম অত্যাচার করে। তাদের পরিবারকেও নির্মম অত্যাচার জুলুম সইতে হয়েছে। যখন তখন নবী পরিবারের ওপর জুলুম করতো কাফের-মুশরিকরা। তারা কেবল অত্যাচার করে থেমে যায়নি। এক পর্যায়ে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ করে নবীর পরিবারসহ তার প্রেমিকদের হত্যা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অযথা যুদ্ধ রক্তপাত পছন্দ করেন না। কাফেরদের জুলুম অত্যাচার থেকে শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য কাফেরদের থেকে দেওয়া যুদ্ধের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখে

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ নিয়ে কাফেরদের ১ হাজার বিশাল সৈন্যদের মোকাবিলা করেন। এ যুদ্ধে বিজয় হয় বিশ্বাসী মুসলমানদের। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যে তাঁরা বিজয় লাভ করেন।

বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে। আর কাফের-মুশরিকদের নেতৃত্ব দেয় আবু জেহেল। আল্লাহতায়ালা এ যুদ্ধ সম্পর্কে কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই দুটি দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। আর অপর দল ছিল কাফেরদের। এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষণীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩)

বদর যুদ্ধ শুরুর পূর্ব সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন। বারবার সিজদায় লুটিয়ে পড়ন। দুই হাত আকাশে তুলে ধরে বলেন, হে আল্লাহ আমার আদরের প্রিয় সাহাবিরা যুদ্ধের ময়দানে। এই আদরের সাহাবিদের কিছু হলে আমি নবী কষ্ট পাব বেশি। একই যুদ্ধ একপক্ষে ছেলে অপরপক্ষে বাবা। ভাইয়ের সাথে ভাই। চাচার সাথে ভাতিজা। এ যেন কঠিন এক পরিস্থিতি। সব সাহাবির অন্তরে রাসুলপ্রেম। শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামকে বিজয় করতে হবে। আল্লাহ নবীজির দোয়া কবুল করেন। আর কাফেরদের পরাজিত করার মাধ্যমে তাদের অহঙ্কার, দর্প চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন। তাদের প্রধান ও ইসলামের প্রধান শত্রু আবু জাহেলসহ ৭০ জন নিহত হয়। আটক হয় আরো ৭০ জন। মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হন মাত্র ১৪ জন। বদর যুদ্ধের ফলাফল ছিল আল্লাহর কুদরতের নমুনা। মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। ইসলাম যে শিক্ষা মুসলমানদের প্রতিনিয়ত দিয়ে আসছে। আর তা হলো-সব কাজে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং ভরসা রাখা। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সত্যের বিজয় হবেই। বিপদ-আপদসহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হওয়াই হলো বদরের ঐতিহাসিক সুমহান শিক্ষা ও চেতনা।

আসুন আমরা বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি। রমজানের মাগফিরাতের এই দশকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। বদরের যুদ্ধে শাহাদাৎকারীদের উসিলায় মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমিন।

লেখক :মো. আবু তালহা তারীফ

আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads