• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
‘ইতেকাফ’ স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের সিঁড়ি

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

‘ইতেকাফ’ স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের সিঁড়ি

  • প্রকাশিত ০৩ মে ২০২১

ইতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি মজবুত সিঁড়ি। এ সিঁড়ি বান্দাকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে সাহায্য করে। ইতেকাফ স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েমের মাধ্যম। ইতেকাফ করা দুনিয়াকে পেছনে ফেলে মসজিদে বসে আল্লাহকে পাওয়ার এক মহামাধ্যম। পূর্ণ তাকওয়াবান হওয়ার একটি সফল উপায়। বান্দা তাঁর জন্য হালাল কিছু কাজকে হারাম করে নিয়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঈরশাদ করেন, ‘আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদসমূহে অবস্থান করো ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলি মানবজাতির জন্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭) উক্ত আয়াতে ঘোষণা করা হচ্ছে, নিজেদের হালাল স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করা ইতেকাফ অবস্থায় হারাম হয়ে যায়। এই যে ত্যাগ; এটা একমাত্র আল্লাহর নৈকট্যলাভের জন্যই করা হয়। সব ছেড়ে আল্লাহর রহমতের দরজার সামনে বসে থাকাই ইতেকাফ।

যখন দানশীল লোকদের দরজা বন্ধ থাকে তখন দরিদ্র লোকেরা দানশীল লোকদের দরজার সামনে বসে থাকে। কেননা তারা জানে, দানশীল ব্যক্তি তার এই দরজা সবসময় বন্ধ করে রাখতে পারে না। এক সময় দরজা খুলবে। দরজা খুলে যখন আমাকে দেখবে, তখন অবশ্যই আমাকে কিছু না কিছু দান করবে। তদ্রূপ ইতেকাফকারীও এই আশা করে যে, সে আল্লাহতায়ালার রহমতের দরজায় বসে যায়। বসে বসে সে ওই দিনগুলোতে শবে কদর অন্বেষণ করে। সে যদি এই রাতটাতে আল্লাহর দরজায়  ইবাদত নিয়ে পড়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যই তাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। তার ওপর রহমত বর্ষণ করবেন। তাই  ইতেকাফকারীর নিয়ত থাকবে যে, আমি ইতেকাফ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার মুহাব্বত, নৈকট্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য এখানে এসেছি।

‘ইতেকাফ’ শব্দটি আরবী। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোনো স্থানে অবস্থান করা। কোনো বিষয় বাধ্যবাধকতার সাথে ধরে রাখা। কোনো বিষয়ের ওপর নিজেকে মজবুতভাবে স্থির রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় ইতেকাফের সংজ্ঞা হলো, ‘মসজিদে কোনো বিশেষ ব্যক্তির বিশেষ ধরনের অবস্থানকে ইতেকাফ বলে’। ইমাম কুদূরী (রহ.) বলেন, ‘নিজেকে আটকিয়ে রাখার নিয়তে রোজার সাথে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে’। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বলেন, ‘শাব্দিক অর্থে ইতেকাফ অর্থ হলো অবস্থান করা। যে লোক মসজিদে অবস্থান করছে তাকে বলা হয় আকিফ বা মুতাকিফ।

ইতেকাফের প্রকারভেদ : বিধানগতভাবে ইতেকাফ তিন প্রকার। ১. ওয়াজিব ইতেকাফ। এর জন্য রোজা শর্ত। এটা মান্নাতের ইতেকাফ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানত পূর্ণ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত-২৯) তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন, কেউ বললো, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতেকাফ করবো’, এতে যেমন ইতেকাফ ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতেকাফ করবো’, এ অবস্থাতেও ইতেকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে।’ (ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/২১৩, দুররে মুখতার-২/৪৪১) ২. নফল ইতেকাফ। ওয়াজিব-সুন্নাত ইতেকাফ ছাড়া বাকি সব ইতেকাফ নফল। এ ইতিকাফ মানুষ যে কোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নাত। ৩. সুন্নাত ইতেকাফ। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নাত পরিত্যাগের গোনাহ হবে।’ (দুররে মুখতার-২/৪৪০) রমজানের ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নাত ইতেকাফ বলা হয়।

রমজান মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ইতেকাফের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সিয়াম সাধনা মানুষের ভোগ-বিলাস, ত্যাগ-কৃচ্ছতা, সহানুভূতি সমবেদনা ও আত্মসংযমের যে অনুপম গুণাবলি সৃষ্টি করে, তা মানুষকে ফেরেশতার গুণে বিভূষিত করে। সেই সঙ্গে ইতিকাফ আরো একধাপ এগিয়ে দেয়। ভোগবাদী দুনিয়ার মিছে মায়া ত্যাগ এবং আখেরাতের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টিতে ইতেকাফ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।

হাফিজ শাহ্ আলম সজীব

লেখক : ইমাম ও খতিব, পশ্চিম নোয়াগাঁও জামে মসজিদ, বিশ্বনাথ, সিলেট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads