• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইতেকাফের জরুরি মাসআলা-মাসায়েল

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ইতেকাফের জরুরি মাসআলা-মাসায়েল

  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০২১

ইতেকাফ অর্থ স্থির থাকা, অবস্থান করা। পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাওয়াবের নিয়তে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতেকাফ বলে। রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।

ইতেকাফের শর্তসমূহ : (১) এমন মসজিদে ইতেকাফ হতে হবে যেখানে নামাজের জামাত হয়। জুমার নামাজ হোক বা না হোক। এ শর্ত পুরুষদের ইতেকাফের ক্ষেত্রে। মহিলারা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতেকাফ করবে। (২) ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে। (৩) মহিলারা হায়েজ-নেফাস মুক্ত হতে হবে। হায়েজ-নেফাস শুরু হলে ইতেকাফ ছেড়ে দেবে।

যেসব কারণে ইতেকাফ নষ্ট হয় এবং কাজা করতে হয় : (১) স্ত্রী সহবাস করলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক, ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক। সহবাসের আনুষঙ্গিক কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন, ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়। (২) ইতেকাফের স্থান থেকে শরিয়াসম্মত প্রয়োজন বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়। শরিয়াসম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাহিরে যাওয়া যায়। যেমন : সে মসজিদে জুমার জামাআত না হলে জুমার নামাজের জন্যে জামে মসজিদে যাওয়া। ফরজ বা সুন্নাত গোসলের জন্যে বের হওয়া ইত্যাদি। আর বিশেষ প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়। যেমন : প্রস্রাব-পায়খানার জন্যে বের হওয়া, খাদ্য-খাবার এনে দেওয়ার লোক না থাকলে তা আনার জন্যে বের হওয়া, মসজিদের ভেতর অজুর পানির ব্যবস্থা না থাকলে এবং পানি দেওয়ার কেউ না থাকলে অজুর পানির জন্যে বাইরে যাওয়া।

যে কাজের জন্যে বাইরে যাবে সে কাজ সমাপ্ত করে সত্বর ফিরে আসবে, বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে কোনো কথা বলবে না। গোসল ফরজ হওয়া ছাড়াও আমরা শরীর ঠান্ডা করার নিয়তে বা শরীর পরিষ্কার করার নিয়তে সাধারণত যে গোসল করে থাকি, শুধু এরূপ গোসলেরই উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তবে কাউকে বলে যদি পথের মধ্যে পানির ব্যবস্থা করে রাখে বা পুকুর ইত্যাদি থাকে আর প্রস্রাব-পায়খানা থেকে ফেরার পথে অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে জলদি ওই পানি গায়ে-মাথায় ঢেলে বা ডুব দিয়ে গোসল সেরে চলে আসে, তাহলে ইতেকাফের ক্ষতি হবে না।

ইতেকাফ অবস্থায় যেসব জিনিস মাকরুহ : (১) ইতেকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সাওয়াব হয় এই মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী। (২) বিনা কারণে দুনিয়াবি কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহে তাহরীমী। যেমন : ক্রয়-বিক্রয় করা ইত্যাদি। তবে চূড়ান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে। যেমন : ঘরে খোরাকি নেই এবং সে ব্যতীত কোনো বিশ্বস্ত লোকও নেই- এমন অবস্থায় মসজিদে মালপত্র উপস্থিত না করে কেনাবেচার চুক্তি করতে পারে।

ইতেকাফের মোস্তাহাব ও আদবসমূহ : (১) ইতেকাফের জন্যে সর্বোত্তম মসজিদ নির্বাচন করবে। সর্বোত্তম মসজিদ হলো, মসজিদুল হারাম, তারপর মসজিদে নববী, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস, তারপর যে জামে মসজিদে জামাতের ইন্তেজাম আছে, তারপর মহল্লার মসজিদ, তারপর যে মসজিদে বড় জামাত হয়। (২) নেক কথা ব্যতীত অন্য কথা না বলা। (৩) বেকার বসে না থেকে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, তাসবীহ্-তাহলীলে মশগুল থাকা উত্তম।

ইতেকাফে খাস-নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত করা শর্ত নয়। যে কোনো নফল নামাজ, জিকির-আজকার, তিলাওয়াত, দ্বীনি কিতাব পড়া, পড়ানো বা যে কোন ইবাদত মনে চায় করতে পারে। ইতেকাফ শুরু করার পর নিজের বা অন্যের জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনন্যোপায় অবস্থায় ইতেকাফের স্থান থেকে বের হলে গুনাহ্ নেই। বরং তা জরুরি, তবে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। কোনো শরিয়তসম্মত প্রয়োজনে বা স্বাভাবিক প্রয়োজনে বের হলে ইত্যবসরে কোনো রোগী দেখলে বা জানাযায় শরিক হলে তাতে কোনো দোষ নেই।

পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতেকাফে বসা অথবা বসানো উভয়টা না-জায়েজ ও গুনাহ্। মহিলাদের জন্যে মসজিদে ইতেকাফ করা মাকরূহে তাহরীমী। তারা ঘরে ইতেকাফ করবে। স্বামী থাকলে ইতেকাফের জন্যে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর খেদমতের প্রয়োজন হলে ইতেকাফে বসবে না। শিশুর তত্ত্বাবধান ও যুবতী কন্যার প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজন থাকলে ইতেকাফে না বসাই সমীচীন। মহিলারা নির্দিষ্ট কোনো কামরায় বা ঘরের এক কোণে পর্দা ঘিরে ইতেকাফে বসবে। মহিলাদের জন্যে ইতেকাফের অন্যান্য মাসায়েল পুরুষদের মতোই।

লেখক :নাজমুল হাসান সাকিব

শিক্ষার্থী, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads