• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রাসুল (সা.) প্রদত্ত প্রথম জুমার খুতবা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

রাসুল (সা.) প্রদত্ত প্রথম জুমার খুতবা

  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০২১

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া জুমার প্রথম খুতবা শোনামাত্র মুমিনের হূদয় আন্দোলিত হয়। ইতিহাসের প্রথম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা প্রদান করেন মসজিদুল কুবায়। হিজরতের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় আসার সময় কুবায় সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার এই চার দিন অবস্থান করেন। কুবার অধিবাসীদের জন্য তাদের মসজিদ নির্মাণ করেন।

জুমার দিন তিনি কুবা থেকে বের হন। বনি সালেম বিন আওফ গোত্রের কাছে আসতেই জুমার নামাজের সময় হয়ে গেল। সেখানকার উপত্যকায় অবস্থিত মসজিদেই তিনি জুমার নামাজ পড়লেন। এটি ছিল মসজিদে নববী নির্মাণ করার আগের জুমা আদায় এবং খুতবা প্রদান। ইতিহাসে এটাই প্রথম জুমার খুতবা হিসেবে পরিচিত।

প্রথম খুতবা : বিখ্যাত সিরাত গবেষক ইবনে ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম যে খুতবাটি দিয়েছিলেন তা আমার কাছে আবু সালাম বিন আব্দুর রাহমানের সূত্রে পৌঁছেছে। তিনি মুসলমানদের সামনে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করে বললেন- হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের মুক্তির জন্য আমল কর। আল্লাহর শপথ! তোমরা তখন অবশ্যই (পরকালের উদ্দেশে আমল করার গুরুত্ব সম্পর্কে) জানতে পারবে যখন তোমাদের কেউ (শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার আওয়াজ শুনে) বেহুঁশ হয়ে যাবে। সে তার ছাগলের পালকে রাখালবিহীন অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবে। অতঃপর তার প্রভু তার সাথে কথা বলবেন, তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোনো দোভাষী থাকবে না (সরাসরি কথা হবে) এবং তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না। আল্লাহ বলবেন, তোমার কাছে কি আমার রাসুল এসে আমার হুকুম-আহকাম পৌঁছে দেয়নি? আমি তোমাকে দুনিয়ার সম্পদ দিয়েছিলাম এবং তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছিলাম। সুতরাং তুমি নিজের জন্য কি প্রেরণ করেছ?

তখন সে ডান দিকে তাকাবে, বাম দিকে তাকাবে। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সামনে তাকাবে। কিন্তু সে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না।

সুতরাং যে ব্যক্তি এক টুকরা খেজুর দান করার বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সামর্থ্য রাখে সে যেন জাহান্নাম থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি তারও ক্ষমতা না রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলার মাধ্যমে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। কেননা এর বিনিময়েও নেকির সংখ্যা এক থেকে দশগুণ আর দশ থেকে সাত শতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

দ্বিতীয় খুতবা : ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাই, আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং খারাপ আমল থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়াত করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে সঠিক পথ দেখাতে পারে না। আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সঠিক কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি সফল হবে, যার অন্তরকে আল্লাহ্ তায়ালা কোরআনের মাধ্যমে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন এবং কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার পর তাকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের কথাগুলো বাদ দিয়ে সে আল্লাহর কালামকে বেছে নিয়েছে। কেননা আল্লাহর কথাই হচ্ছে সর্বোত্তম কথা ও তাঁর বাণীই হচ্ছে সর্বোচ্চ বাণী। আল্লাহ্ যা ভালাবাসেন তোমরা তাই ভালোবাস এবং তোমাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহর ভালোবাসা দিয়ে ভরে দাও। আল্লাহর কালামকে পাঠ করতে এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে তোমরা ক্লান্তিবোধ করো না। তোমাদের অন্তর যেন কোরআন থেকে (কোরআন ছেড়ে দিয়ে) পাষাণ না হয়ে যায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা সকল সৃষ্টি থেকে উত্তমটিই বাছাই করেন এবং তা নিজের জন্য নির্বাচন করেন।

আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের আমলসমূহ থেকে কোরআন তিলাওয়াতকে সর্বোত্তম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বান্দাদের আমল থেকে তা পছন্দ করেছেন। তা সর্বোত্তম বাণী বলে ঘোষণা করেছেন এবং তার মাঝে মানুষের জন্য সকল হালাল ও হারাম বিষয় বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং তাঁকে যথাযথভাবে ভয় কর। তোমরা মুখ দিয়ে যেসব কথা উচ্চারণ করে থাক, তা থেকে সর্বোত্তম কথার মাধ্যমে আল্লাহর সত্যতার ঘোষণা প্রদান কর।

আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধন রচনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মোটেই পছন্দ করেন না। (জাদুল মাআ’দ থেকে সংগৃহীত)

লেখক : মুহাম্মদ মিযানুর রহমান

প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads