• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ইফতার সংযমের অপূর্ব নিদর্শন

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ইফতার সংযমের অপূর্ব নিদর্শন

  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২১

মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সাধনাপিয়াসী মুমিনদের জন্য বিশেষ উপঢৌকন হলো ইফতার; যা ইসলামের নিদর্শন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত ও দয়াময় স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সিয়াম সাধনায় ইফতারের গুরুত্ব অপরিসীম। ইফতারে রয়েছে সংযম, প্রবৃত্তি দমন ও খোদাভীতি। সারা দিন সিয়াম সাধনায় রত থেকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা কী যে আনন্দের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুটি বিশেষ আনন্দের সময় রয়েছে, এক. ইফতারের সময়। দুই. মহান প্রভুর দিদারলাভের সময়। (সহিহ বুখারি)

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ আদায়ের পূর্বে কয়েকটি ভেজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইফতার (তিরমিযি) হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, ‘আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত হয়েছে, আমার শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমার পুরস্কারও নির্ধারিত হয়েছে।’ (আবু দাউদ)

ইফতারের সময় হওয়ামাত্র দ্রুত ইফতার গ্রহণ করা সুন্নাত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সাথে ইফতার গ্রহণ করতেন এবং ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার করতেন। নবী আদর্শের প্রতিচ্ছবি সাহাবায়ে কেরামও সর্বদা তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং দেরিতে সাহরি করতেন। এ সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালবাসি যে ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করে নেয়।’ (তিরমিযি) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে; ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি)

সারা দিন অভুক্ত থেকে ইফতার সামনে নিয়ে চোখের  দু-ফোঁটা পানি ছেড়ে দিয়ে বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে, মহান আল্লাহতায়ালা তখন তাঁর প্রিয় বান্দাকে রহমতের চাদরে আবৃত করে নেন, অপরাধসমূহ মার্জনা করেন এবং তার সব ফরিয়াদ কবুল করে নেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির  দোয়া কখনো প্রত্যাখ্যান করা হয় না। ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশার দোয়া। ২. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া। (তিরমিযি)

পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও সাওয়াবের কাজ। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারকে ইফতার করানোর ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামদেরকে উৎসাহিত করেছেন এবং একে ফজিলতময় ও সাওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে বায়হাকী ও মেশকাত শরীফে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কেউ যদি মাহে রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ওই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে অথচ রোজাদারের সাওয়াব বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না। সাহাবীগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাকেও এই সাওয়াব দান করবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দ্বারাও ইফতার করাবে। আর যে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে হাউসে কাউসার থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন; ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না।

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা.

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads