• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
জাকাত আদায়ের বিধান

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

জাকাত আদায়ের বিধান

  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০২১

ইসলামের মৌলিক রোকন ও প্রধান আর্থিক ইবাদত হলো জাকাত। জাকাতের ওপরই ইসলামি রষ্ট্রের অর্থব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে। জাকাত ধনী ও দরিদ্রের মাঝে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন রচনা করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জাকাত হলো ইসলামের (ধনী-গরিবের মধ্যকার) সেতুবন্ধন।’ (তাবরানী)

জাকাত শব্দের অর্থ জবাই করা, প্রশংসা, প্রাচুর্য ও পবিত্রতা। সুফিয়ান সাওরী (রা.) বলেন, স্বীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি হতে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট অংশ শরীয়তের নির্দেশানুপাতে বের করে দেওয়াকে জাকাত বলা হয়। মহান আল্লাহ নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি যার নিকট রয়েছে তাকে জাকাত দেওয়া জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহপাক নামাজের সাথে পবিত্র কোরআনে ৮২ স্থানে জাকাত দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। (সুরা বাকারা, আয়াত-৪৩)

জাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলি : ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সবার ওপর জাকাত ফরজ করা হয়নি। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নয়টি শর্ত রয়েছে। সে গুলো হলো- ১. মুসলিম হওয়া ২. জ্ঞানবান হওয়া ৩. স্বাধীন হওয়া ৪. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৫. ঋণমুক্ত হওয়া ৬. নেসাবের মালিক হওয়া ৭. মালিকানায় এক বছর থাকা ৮. সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনীয় না হওয়া ৯. সম্পদ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে বর্ধনশীল হওয়া, যেমন পশু, স্বর্ণ, রোপ্য ইত্যাদি। (আনওয়ারুল কোরআন)

যেসব সম্পদে জাকাত ফরজ : সব প্রকার সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ নয়। জাকাত পাঁচ প্রকার সম্পদে ফরজ : যেমন- ১.গৃহপালিত পশু, ২. স্বর্ণ-রৌপ্য বা নগদ ক্যাশ, ৩. ব্যবসায়ের পণ্য, ৪. খনিজসম্পদ, ৫.ফল ও ফসল।

জাকাতের নিসাব : ১. অর্থসম্পদ ব্যবসায়িক হলে জাকাত শতকরা আড়াই টাকা হারে। ২. জমিতে উৎপন্ন ফসলের জাকাত পানি সেচের প্রয়োজন না হলে দশভাগের একভাগ এবং পানি সেচের প্রয়োজন হলে বিশ ভাগের একভাগ। ৩. স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত ভরি এবং রৌপ্যের নিসাব সাড়ে বায়ান্ন ভরি। ৪.গরুর নিসাব ৩০টি ১টি বাছুর, ছাগলের নিসাব ৪০টিতে ১টি ছাগল এবং উটের নেসাব ৫টিতে ১টি উট ৫. মাটির তলদেশ থেকে খনিজসম্পদে পাঁচ ভাগের একভাগ।

যাকে জাকাত দেওয়া যাবে : ইসলামে জাকাত বণ্টনের জন্য নির্দিষ্ট খাত রয়েছে যাকে মাসারিফুস জাকাত বলা হয়। পবিত্র কোরআনে জাকাত বণ্টনের আটটি খাতের বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সাদকা (জাকাত) কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ের কর্মচারী যাদের চিত্তাকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুশাফিরদের জন্য। এটা মহান আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৬০)

জাকাত প্রদান করার সুফল : জাকাত আদায় করে সম্পদ পবিত্র হয় এবং সম্পদে বরকত হয়। জাকাত আদায় করলে সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে থাকে, সম্পদ কখনো কমে যায় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যাতে মানুষের ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায় সে জন্য তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধনসম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক তাই বর্ধিত হয়।’ (সুরা রুম, আয়াত-৩৯)

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জন্য তার নির্দিষ্ট সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ জাকাত দেবে তার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা পুুরস্কারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চই যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে জাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৭৭)

জাকাত দান নয় অধিকার : জাকাত ধনীর পক্ষ থেকে দান বা অনুগ্রহ নয়; বরং জাকাত পরিশোধ করা বিত্তবানদের অপরিহার্য কর্তব্য বা ফরজ। আল্লাহতায়ালা নিজেই জাকাতকে ধনীদের সম্পদে অসহায় ও বঞ্চিতদের অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তার ধন দৌলতে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত-১৯)

লেখক :মো. আবু তালহা তারীফ

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads