• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর

  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০২১

লাইলাতুল কদর। মহিমান্বিত রাত। এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চাইতে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল হয়েছে। ৫ আয়াতবিশিষ্ট এ সুরায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে ইসলামি শরীয়তে এর বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘আমি এই কোরআন কদরের রাতে নাজিল করেছি। কদরের রাত সম্পর্কে তুমি কী জান? কদরের রাত হাজার মাস থেকে উত্তম মাস। এ রাতে জিবরাইলসহ  ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়বে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস নং-১৯০১) হাদিসে ‘ঈমানসহকারে’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ‘প্রতিদানের আশায়’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, নিয়তকে আল্লাহতায়ালার জন্য একনিষ্ঠ করা। অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত, বরকত ও প্রশান্তি নিয়ে অবতরণ করেন।’

লাইলাতুল কদর অতি মূল্যবান রাত হওয়ায় মহান রাব্বুল আলামীন এর সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রেখেছেন। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস নং- ২০১৭) একজন মুসলিমের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। কারণ এতে করে এমন বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়, আসলে যে বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভবপর নয়। আর এতে করে ব্যক্তি নিজেকে প্রভূত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। হতে পারে লাইলাতুল কদর ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই কেউ যদি শুধু ২৭তম রাতে নামাজ আদায় করে এতে করে তিনি অফুরন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং এই মুবারকময় রাতের ফজিলত হারাবেন। তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

এ রাতে মহাগ্রন্থ কোরআন নাজিল হয়, মানবজাতির এই বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এই  কোরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, একটি দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটাজাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে বেশি বেশি কোরআন পড়তে হবে।  কোরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্থও করা যেতে পারে। যাদের কোরআনের ওপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে তারা এ রাতে একটি দরসও প্রস্তুত করতে পারেন। কোরআনের এ গভীর অধ্যয়ন আমাদের সৌভগ্যের দ্বার খুলে দেবে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বের হয়ে এসেছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমাকে তা ভুলিয়া দেওয়া হয়েছে।’ (বুখারি) সুতরাং দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেওয়া এ রাতের অন্যতম ইবাদত। তাছাড়া হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, এ দোয়া পড়বে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নকা আফুয়্যুম তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে তুমি ভালোবাসো। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

উম্মতে মোহাম্মদী এ মহিমান্বিত রাত পেয়েছে। আর কোনো উম্মতের ভাগ্যে তা জোটেনি। মহান রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর মর্যাদা বৃদ্ধি এবং তার নৈকট্য অর্জনের সুযোগ হিসেবে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এ রাত দান করেছেন। যাতে তারা স্বল্প বয়সেও এ রাতে ইবাদত করে মহাসাফল্য লাভ করতে পারে। এ সুবর্ণ সুযোগ সদ্ব্যবহার করা আমাদের উচিত। সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত রমজানজুড়ে আনুগত্য ও ইবাদতের কাজে সর্বোচ্চ সাধনা চালানো। আর শেষ দশকে আরো বেশি তৎপর হওয়া। এটাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে রাসুল (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস নং-২০২৪)

আমাদের জন্য কদরের রজনী হোক অতীত কৃতকর্মের যাবতীয় অন্যায়ের ক্ষমা প্রার্থনার কান্নাভেজা রজনী। এ রজনী হোক অন্যায় অশ্লীলতা ও গর্হিত কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করার দৃঢ় প্রত্যয়। লাইলাতুল কদর হোক শিরক-বিদআতসহ যাবতীয় কুসংস্কার সমূলে উৎখাতের এক বজ্রশপথ। শবে কদর হোক মহান মাওলার শাহী দরবারে অশ্রুর নজরানা পেশ করে মহান দরবার থেকে মহামুক্তি লাভের এক দীপ্ত প্রতিজ্ঞা। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ

প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads