• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
দানের মহিমা অপরিসীম

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

দানের মহিমা অপরিসীম

  • প্রকাশিত ১০ মে ২০২১

পবিত্র মাহে রমজান মুমিনদের বসন্তকাল। আল্লাহর অনুগত বান্দারা সমগ্র বছরব্যাপী এ পবিত্র মাসটির জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। এ মাসে তারা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালকে সমৃদ্ধ করার আশায় বিভিন্ন নফল ইবাদাতেও ডুবে থাকে। কেননা, মহান আল্লাহতায়ালা রমজানে প্রতিটি নফল ইবাদতে ৭০ গুণ সাওয়াব বাড়িয়ে দেন। আর দানশীলতা হলো রমজানের অন্যতম নফল আমল। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানকে দানের মাস হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দানশীলতার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরাত্মা পুণ্যলাভ করে তেমনি অপর দিকে দীন-দুঃখী মানুষদের মাঝেও সচ্ছলতা ফিরে আসে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিস পর্যালোচনায় দানের মহিমা অপরিসীম। মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, দানের মধ্য দিয়ে আমাদের কিছু-কিছু পাপ মোচন হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা ভালো, আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো ভালো, এবং এতে তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপমোচন করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবহিত।’ দানশীল ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পুরস্কারও অনিবার্য। পবিত্র  কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘যেসব লোক দিন-রাত গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ধন দান করে, তাদের জন্য তাদের রবের পুরস্কার রয়েছে, সুতরাং তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কোনো দুঃখও পাবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৭৪)

 আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দানকে খুব পছন্দ করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপুল পরিমাণে দান করতেন।’ এই মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকি। তিনি যেন এ বান্দার দানকে নিজ হাতে গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন হতে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আর আল্লাহ পবিত্র বস্তু ছাড়া অন্য কিছুই কবুল করেন না। আল্লাহ ওই দান নিজের ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা দানকারীর জন্য লালন-পালন করতে থাকেন, যেরূপ কেউ নিজের অশ্বশাবক লালন-পালন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ওই দান পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস নং-১৩১৮) দান আমাদের পরকালকে সমৃদ্ধ করে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘এক টুকরো খেজুর দান করে হলেও তোমরা (জাহান্নামের) আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভ কর।’ (বুখারি, হাদিস নং-১৩২৫) সর্বোপরি ওই ব্যক্তিও কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ করবে, ‘যে কিছু দান করল এবং তার এরূপ গোপনভাবে করলো যে তার বাম হাতও জানতে পারল না যে, তার ডান হাত কি দান করেছে।’ (বুখারি, হাদিস নং-১৩৩১)

দান যে কোনো বয়সেই করা যায় তবে নবীর এরশাদ অনুযায়ী দানের উত্তম সময়-‘যখন আমাদের অর্থের প্রয়োজন থাকে, আমরা অভাবগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা বোধ করি এবং ধনী হওয়ার বাসনাও প্রকাশ করে থাকি।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-১৩২৭) খুব ছোট কিছু দান করা হলেও আমরা প্রিয়জনদের মুখে হাসি আনতে পারি। সাধ্যমতো দান করে, রমজানের ত্যাগের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে সাবলম্বী করতে পারি। এই দান শুধু পুণ্যই আনে না। আমাদের উত্তম মানসিকতারও পরিচয় দেয়। আর করোনা মহামারীতে যখন বিপুল পরিমাণে ব্যক্তি কাজ হারিয়ে এ লকডাউনে অসহায় জীবনযাপন করছে ঠিক সেই মুহূর্তে বেশি দান করে আমরা মানবিকতাকেও ফুটিয়ে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে, সব বিত্তবানদের দানের হাত প্রসারিত করে সমাজের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই ধর্মীয় বিধান পালনের পাশাপাশি দেশের এ ক্রান্তিকালের সংকটটি সুন্দরভাবে পাড়ি দেওয়া সম্ভব।

রুকাইয়া মিজান মিমি

লেখিকা : শিক্ষর্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads