• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ঈদে অসহায়দের নীরব কান্না

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ঈদে অসহায়দের নীরব কান্না

  • সিনথিয়া সুমি
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০২১

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাতে যখন ক্ষত-বিক্ষত পৃথিবী তখন মানুষের মনে বিরাজ করছে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি। সে ভয়কে জয় করার জন্য সোনালি বার্তা নিয়ে এসেছিল পবিত্র মাহে রমজান। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আল্লাহতায়ালার আদেশে এক মাস রোজা রাখার পর আমরা ঈদের আনন্দ উদযাপন করে থাকি। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিম জাহান সিয়াম-সাধনা এবং ত্যাগের মধ্য দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে অতীতের ভুল-ভ্রান্তির ক্ষমা চেয়ে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার অঙ্গীকারে প্রত্যয়ী হওয়ার এক সফল অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ। কিন্তু এই খুশি যেন অনেকের মাঝে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন ও করোনা মহামারীর মধ্যে কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষের ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা বেঁচে থাকাটাই যেন  কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। অনেক পরিবার কারোনায় হারিয়েছে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে। তাদের প্রতিটি দিন যেন একেকটি দুঃস্বপ্নের মতো।

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের প্রকোপে আজ বিপর্যস্ত মানবসমাজ। কোভিড-১৯ এর বিস্তাররোধে সারা দেশে এখন পর্যন্ত চলছে লকডাউন। লকডাউনে দূরপাল্লার বাস বাদে সবই চলাচল করছে। প্রাণঘাতী  করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এই করোনায় সবচেয়ে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা। করোনা পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের অসহায় মানুষ। দিনভর খাবারের সন্ধানে থাকাই এখন তাদের মূল যুদ্ধ।

মহামারী করোনার থাবায় কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা। ঈদে সন্তানদের একটি নতুন জামা কিনে দিতে না পারায় যেন জীবন যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কষ্ট বিরাজ করছে নিম্নআয়ের পরিবারের অনেক বাবা-মায়ের কাছে। এবারের ঈদ ভিন্ন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে একত্রে উৎসবে মেতে উঠার এক চিরায়ত রীতি। ঈদ উৎসবের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় জীবনের এবং সমাজ জীবনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং সাম্য মৈত্রীর সন্ধান লাভ করে। ঈদুল ফিতর মুমিনদের জন্য শ্রেষ্ঠ উৎসব। প্রতি বছর ঈদ মহাআনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও এবার মানুষের মধ্যে নেই সেই আনন্দধারা, নেই কোনো উৎফুল্লতা। বৈশ্বিক মহামারী পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবনের গতি ও ঈদের প্রকৃতি। যদিও গত বছরের দুটি ঈদেও কোভিড-১৯ বিরাজমান ছিল। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়, সাথে লকডাউন তো আছেই। এবারো সবার চোখে মুখে আনন্দের চেয়ে হতাশার ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে।

দেখা যায় প্রতি বছর ঈদে পরিবারের সব মানুষ একসাথে ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে। কতশত পরিকল্পনা থাকে ঈদকে ঘিরে। ঘুরতে যাওয়া, চাঁদ রাতে হাতে মেহেদী দেওয়া, আড্ডা দেওয়া আরো কতো কি। কিন্তু এবার করোনা এবং সাথে লকডাউনের কারণে অনেকেই নিজ বাসায় ফিরতে পারেনি। দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। লকডাউনের কারণে অনেক শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। যেখানে আয়-রোজগারের সব পন্থা বন্ধ সেখানে ঈদ তাদের কাছে বিলাসিতা মাত্র। সারা দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ঈদের আগে থেকেই লকডাউন রয়েছে। এই অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার ভয়াবহতা থেকে যেখানে ঘর থেকেই বের হওয়া বিপজ্জনক সেখানে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ভিড় জমাচ্ছে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। অনেকেই জীবনবাজি রেখে বিভিন্ন উপায়ে বাসা-বাড়িতে গিয়েছে। আমরা জানি গৃহবন্দি জীবন কারো কাছেই সুখকর নয়। কিন্তু নিজের জন্য, নিজের ফ্যামিলির জন্য, সর্বোপরি দেশের মানুষের জন্য, সবারই ঘরে থাকা এবং এই পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।

অনেক পরিবার না খেয়ে দিনযাপন করেছে। ঈদেও তাদের নতুন পোশাক, এমনকি ভালো খাবার কেনাও সম্ভব হয়নি। ঈদ ধর্মীয় উৎসব এবং সর্বজনীন আনন্দের নাম। বিভিন্ন উৎসবগুলোয় আমরা যেমন আনন্দে মাতি, তেমনি প্রত্যেক ধর্মেই রয়েছে উৎসবমুখর দিন। তারমধ্যে মুসলমানদের জন্য হলো ঈদ। ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আমাদের সবার মাঝে ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন রচিত হয়। এই ঈদের আনন্দ সাধারণ মানুষেরা কতটা উপভোগ করেছে, তা আমাদের অজানা। তবে সামনের দিনগুলোতে আমরা একে অপরের প্রতি যত্নবান হতে সচেষ্ট হই। শুধু ঈদ নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বদাই অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসি।

লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads