• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
প্রায় ৭ বছর পর মসজিদের মাইকে আজান

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

প্রায় ৭ বছর পর মসজিদের মাইকে আজান

  • প্রকাশিত ২২ মে ২০২১

আর এইচ হাসান সানী (রাসেল)

শুনে চমকে উঠেছেন? এটা ফিলিস্তিন বা মিয়ানমার নয় বা কোনো বিধর্মী রাষ্ট্র নয়; এটা বাংলাদেশের গাজীপুরের ঘটনা। পঁচিশে রমাদান আসরের আজানের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। দীর্ঘশ্বাস শেষে শান্তির আবেশে মুখরিত হয় চারপাশ। বলছিলাম গাজীপুরের অন্তর্গত শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রামের মাদানী মসজিদের কথা। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে নতুন করে মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভাঙা হয় মসজিদের পুরাতন বিল্ডিং। মসজিদেরই অধীন সকালের ফোরকানিয়া মাদরাসার উদ্দেশ্যে বানানো টিনের ছাপরাতে নামাজের কার্যক্রম চলতে থাকে। অস্থায়ী মসজিদ। ভেঙে ফেলা মসজিদ থেকে খুলে আনা সৌরবিদ্যুৎ লাগানো সেই অস্থায়ী মসজিদে। ব্যবস্থা করা হয় ফ্যান, বাল্পের। সংযোগ দেওয়া হয় বিদ্যুৎ। তবে শান্তি পাচ্ছিল না এলাকার মানুষ। কারণ অস্থায়ী মসজিদে মাইক লাগানোটা বেশ কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। ফলে প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে মুখে আজান দেওয়া হতো। মসজিদের কাছাকাছি দু-একটা বাড়ি ব্যতীত এলাকার অন্যান্য বাড়িতে পৌঁছাত না আজানের আওয়াজ। এদিকে দিন দিন মুসল্লি বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছিল ভোগান্তি। যদিওবা এই ভোগান্তিকে মুসল্লিরা এক প্রকার আনন্দ ধরে নিয়েছিল। আর এই আনন্দটা দ্বিগুণ করতে এলাকাবাসীরা জোরালো উদ্যোগ নেয় নতুন মসজিদ নির্মাণের। শুরু হয় চেষ্টা-প্রচেষ্টা দোয়া-দরুদ।

একপর্যায়ে সবাই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ২০১৭ সালের কোনো এক শুক্রবারে প্রখ্যাত বুজুর্গ তৈয়ব সিদ্দিকী সাহেবের মাধ্যমে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ‘চেষ্টা করা মানুষের কাজ আর পূর্ণতা দেওয়া আল্লাহর কাজ’ এই কথাটা যেন সেদিন ফলেছিল। আকাশচুম্বী কষ্ট, চেষ্টা ও সাধনার পরে সম্মানিত সে বুজুর্গের মাধ্যমেই শুরু হয় মসজিদের কাজ। শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। কেননা শহরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করা যতটা সহজ, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য ততটাই কঠিন। শহুরে মসজিদগুলোতে প্রতি শুক্রবার জুমার পর যে পরিমাণ দান ওঠে সেই পরিমাণ দান উঠতে একটি গ্রামাঞ্চলের মসজিদে বছরের পর বছর প্রয়োজন। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর গঠন-কাঠামোর মসজিদ নির্মাণ গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য এক চরম চ্যালেঞ্জ। আর সে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এই গ্রামের মানুষ। তাদের অদম্য আগ্রহ-উদ্দীপনার ফলে পরিশ্রম ও আর্থিক সহযোগিতায় নতুন বিল্ডিংয়ের ছাদের কাজ সম্পন্ন হয়। তবে স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয় কাজ।

সেক্রেটারি ও ক্যাশিয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী ‘মিস্ত্রি খরচ ও আসবাবপত্র কেনার অর্থসংকটেই কাজ বন্ধ হয়েছে। কাজ শুরু করার মতো সাহস যোগ্য অর্থ না আসা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’ এমন করুণ, দুঃখজনক সিদ্ধান্তে ব্যথিত হয়ে চেষ্টা ও সাধনার চাকা ঘুরাতে থাকে এলাকাবাসী। ‘এ চেষ্টা দুনিয়ার জন্য নয়; তবে দিনের’, তাই বান্দার অল্প চেষ্টাতেই আল্লাহ সাহায্য করেন অনেক। করুণাকামী স্রষ্টা তাঁর বান্দাদের চেষ্টার বিনিময়ে রহমতের করুণা ঢেলে দেন।

আবার শুরু হয় কাজ। চারপাশে দেয়াল উঠেছে। জানালার গ্রিল লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে আগের পুরোনো ফ্যান। তবে আস্তর করা হয়নি। হয়নি ফ্লোর পাকা। তবে নামাজের উপযোগী করতে বিছানো হয়েছে ত্রিপাল। তবুও সব মিলিয়ে এখন বাকি আছে বেশ কয়েক লাখ টাকার কাজ। কথা হয়েছে সেক্রেটারির সাথে। তিনি জানান, মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করার আগেও মসজিদ না হওয়ার ব্যাপারে অনেকের বাধা ও ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছিল মসজিদ কমিটি। তবে প্রখ্যাত সেই বুজুর্গের দোয়া ও আগমনের বরকতে সকল বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্রকে কাটিয়ে মসজিদটি এখন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পথে। সেইসাথে প্রায় সাত বছর পর মসজিদে লাগানো হলো নতুন মাইক। প্রতি ওয়াক্ত আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পরছে এলাকায়। প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও মসজিদটিতে খতমে তারাবি হয়েছে। মসজিদের কোণে আল্লাহর রেজামন্দির জন্য তারাবির ইমাম বসেছিলেন এতেকাফে। আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘশ্বাস শেষে শান্তির নীড় খুঁজে পেল এলাকাবাসী। একটি স্থায়ী ইবাদতগাহ্ পেয়েছে তারা। নির্বিঘ্নে এবাদতের প্রতি দায়িত্ববান ও স্নেহশীল হচ্ছে সবাই। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads