• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

যে কারণে অধিকাংশ মুসলমান জাহান্নামি হবে

  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

মাওলানা মাহাথির মোবারক

শিরোনাম দেখে মনে হয় চমকে গেলেন? কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই গোনাহের সাথে আমাদের বর্তমান সমাজের প্রায় অনেক মানুষই জড়িত এবং সে গোনাহকে আমরা প্রতিনিয়ত করতে করতে এমন স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যে এখন আর সে গোনাহকে আমরা গোনাহই মনে করি না। তার প্রতি আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। কিন্তু রাসুলের পরিভাষায় এমন গোনাহগার ব্যক্তি দুনিয়াতেও অভিশপ্ত আর আখিরাতে রয়েছে তার জন্য কঠিনতম যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সে গোনাহটি হলো নামাজ পরিত্যাগ করা। নামাজ মুসলমানদের ইবাদতের মাঝে একটি অন্যতম  ইবাদত এবং ইসলামের মূল ৫ টি স্তম্ভের মাঝে অন্যতম প্রধান। যুদ্ধের ময়দানেও নামাজ ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং যুদ্ধের সময় কীভাবে নামাজ পড়বে, শরীয়তে সে বিধানও এসেছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা নামাজের আদেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজ কায়েম করো ও জাকাত দাও। নিজেদের পরকালের জন্য তোমরা যা কিছু সৎ কাজ করে আগে পাঠিয়ে দেবে, তা সবই আল্লাহর ওখানে মজুত পাবে। তোমরা যা কিছু করো সবই আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১১০) এছাড়াও আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ মানুষকে অসৎ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এক হাদিসে হজরত উমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তির নামাজ ঠিক নেই তার কোনো কিছুই ঠিক নেই। অন্যত্র বলা হয়েছে ‘একজন মুসলমান ও কাফেরের মঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিধান হলো একমাত্র নামাজ’। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসেব হবে’। কিন্তু আজ লজ্জাজনক হলেও সত্য যে আমরা নিজেরা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করি কিন্তু সমাজের প্রায় অধিকাংশ মানুষই আজ নামাজ পড়ে না। এছাড়াও নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আরো অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সহজেই বোঝা যায় নামাজ একটি কত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর যে বিধান বা হুকুমের গুরুত্ব বেশি নিশ্চয় তার প্রতিদান তো বেশি হবারই কথা। আর তার পরিত্যাগের বিষয়টিও কঠিন শাস্তিযোগ্য। কোনো ব্যক্তি যদি নামাজকে অস্বীকার করে তাহলে সে ব্যক্তিটি নিঃসন্দেহে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আর কোনো ব্যক্তি যদি নামাজকে বিশ্বাস করার পর তা পরিত্যাগ করে তাহলে সে নিশ্চয় ফাসেক বলে গণ্য হবে। আর কোনো ফাসেক ব্যক্তি জান্নাত পাওয়ার যোগ্য নয়; বরং কঠিনতম শাস্তির যোগ্য। কোরআন-হাদিসে নামাজ পরিত্যাগের কঠিন ধমকি ও শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে কিছু শাস্তি উল্লেখ করা হলো।

দুনিয়ার কয়েকটি শাস্তি : ১. তার জীবনে কোনোরূপ বরকত হবে না। আল্লাহ তার চেহারা হতে নূরের চিহ্ন উঠিয়ে নেবেন। আল্লাহপাকের সমস্ত ফেরেশতা তার ওপর অসন্তুষ্ট থাকবে। আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুত মূল্যবান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকবে। ২. তার রিজিকের বরকত কমে আসবে এবং তাকে সমস্ত বিপদ-আপদ চতুর দিক হতে আক্রমণ করবে। সংসারে কোনো শান্তি আসবে না। সর্বদায় অশান্তির একটি বড় ক্লান্তি তাকে তাড়া করবে। ৩. একের পর এক রোগ ব্যাধি হবে এবং  টাকা-পয়সার কোনো পেরেশানি কমবে না। দুনিয়ার লোভ তাকে গিলে খাবে। ৪. বেনামাজিকে দুনিয়ার কোনো মানুষ ভালোবাসবে না। ৫. বেনামাজি ব্যক্তি ক্ষুধার্ত ও বেইজ্জতি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। মৃত্যুকালে তার এত তৃষ্ণা পাবে যে, তার ইচ্ছা হবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করতে। ৬. মৃত্যুর পর তার আত্মীয়স্বজন ও দুনিয়ার কোনো মানুষ তাকে বেশি দিন মনে রাখবে না।

কবরের কয়েকটি শাস্তি : ১. বেনামাজির কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তার এক পাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। ২. তার কবরে, রাতদিন আগুন জ্বলতে থাকবে। ৩. আল্লাহ তার কবরে একজন আজাবের ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। তার হাতে লোহার মুগুর থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে, দুনিয়ায় কেন নামাজ পড় নাই। আজ তার ফল ভোগ কর। এই বলে ফজর নামায না পড়ার জন্য ফজর হতে জোহর পর্যন্ত, জোহর নামাজের জন্য। জোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছর নামাজের জন্য আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাজের জন্য। মাগরিব হতে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাজের জন্য। এশা থেকে ফজর পর্যন্ত লোহার মুগুর দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। প্রত্যেক বার আঘাতের সময় বজ্রপাতের মতো শব্দ হবে এবং শরীর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পঞ্চাশ গজ মাটির নিচে চলে যাবে। সেই ফেরেশতা পুনরায় তাকে জীবিত করে হাড় মাংস এক করে আবার আঘাত করতে থাকবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত লোহার মুগুর দিয়া তাকে আঘাত করতে থাকবে। ৪. বেনামাজির কবরটি অসংখ্য সাপ-বিচ্চু দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। যে সাপগুলোর কোনো একটি যদি দুনিয়ার নিশ্বাস ফেলে তাহলে তার বিষাক্ত শ্বাসের কারণে সমস্ত দুনিয়ার জমি, গাছ-পালা তামা হয়ে যাবে। 

হাশরের মাঠের কয়েকটি শাস্তি : ১. একজন ফেরেশতা তাকে পা উপরের দিকে এবং মাথা নিচের দিকে অবস্থায় হাশরের মাঠে নিয়ে যাবে। ২. আল্লাহপাক তাকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখবেন না। ৩. সে দোজখি হয়ে নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে থাকবে। ৪. মহান আল্লাহতায়ালার রহমতের কোনো দৃষ্টি তার ওপর থাকবে না। আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো দয়া হতে বঞ্চিত থাকবে। ৫. বেনামাজি ব্যক্তি রাসুলের সাফায়াত হতে বঞ্চিত হবে। ৬. আল্লাহতায়ালা তার ওপর  ক্রোধান্বিত হয়ে যাবেন এবং ফেরেশতারা তাকে লানত দিতে থাকবেন। ৭. জাহান্নাম তাকে হাত দিয়ে ডাকতে থাকবে।

আসুন! অকারণে নামাজ ত্যাগ করা পরিহার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে কঠিন এ শাস্তি থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হই। আল্লাহ সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads