• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য

  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০২১

মুফতি শরিফুল ইসলাম নাঈম

 

 

সঙ্গীপ্রিয় প্রাণী হচ্ছে মানুষ। সঙ্গীর নিয়ে থাকা তার আদীম স্বভাব। সঙ্গী ছাড়া সে চলতে পারে না। আদম (আ.)কে সৃষ্টির পর আল্লাহতায়ালা সর্বসুখের আধার জান্নাতে থাকতে দিলেও  তাঁর  কাঙ্ক্ষিত  সুখ পূর্ণ  হয়নি। তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর বাম পাজর থেকে হাওয়া (আ.)কে সৃষ্টি করে সঙ্গীনি বানিয়ে দিয়েছিলেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যিনি তোমাদেরকে একসত্ত্বা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং  তার থেকে তার সঙ্গীনিকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত নারী ও পুরুষ। (আল-কোরআন) সেই ধারাবাহিকতায় আমরা তাদের সন্তান হিসেবে জীবনের নির্দিষ্ট এক বয়সে এসে সঙ্গী-সঙ্গীনি ছাড়া থাকতে পারি না। একে অপরের প্রতি শারীরিক, মানসিক প্রয়োজন অনুভব করি। সেই প্রয়োজন মিটানোর বৈধ পন্থা হচ্ছে, নারী পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। তবে এ সম্পর্ককে অর্থবহ করতে হলে পৃথিবীর আর সব সম্পর্কের মতো এ সম্পর্কেও উভয়পক্ষেরই কিছু দায়িত্ব, কিছু কর্তব্য রয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবশ্যই পালনীয় কর্তব্যগুলো হলো। ১. নগদ হোক বা বাকি হোক মোহর আদায় করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা খুশিমনে মহিলাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তবে যদি তারা স্বেচ্ছায় মোহরের আংশিক বা পুরোটা মাফ করে দেয় তাহলে তা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ভক্ষণ করতে পারো! (৪:৪) ২. সামর্থ্যানুযায়ী খোরপোষের ব্যবস্থা করা। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের সক্ষমতার ভিতরে তোমরা যেখানে থাকো তাদেরকেও (স্ত্রীদেরকে) সেখানেই রাখো। তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য চাপাচাপি করো না। (৬৫:৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ধনীর জন্য তার সামর্থ্যানুযায়ী আর গরিবের জন্য তার সামর্থ্যানুযায়ী [খরচ দিতে হবে] (২ : ২৩৬) ৩. স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করা। ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। (৪ : ১৯) হাদিসে এসেছে, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং১৯৭৮) ৪.  স্ত্রীকে পর্দায় রাখা, তাকে দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া। হাদিসে এসেছে, তিন শ্রেণির লোকের জন্য জান্নাত হারাম করে দেওয়া হয়েছে। ১.  মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। ২. পিতা-মাতার অবাধ্য। ৩. নিজ স্ত্রী সন্তানের নোংরামি ও অশ্লীলতা যে সয়ে নেয় কিংবা নিজ স্ত্রীর সামনে কে আসলো, না আসলো তার কোনো খোঁজখবর রাখে না। অর্থাৎ পর্দাপুশিদার প্রতি লক্ষ্য রাখে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৩৭২)

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো হলো। ১. স্বামীর আনুগত্য করা। ২. স্বামীর অবর্তমানে নিজের ইজ্জত-আব্রু এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। ইরশাদ  হয়েছে, পুরুষ জাতি হচ্ছে মহিলাদের উপর কর্তৃত্বশীল। কারণ, আল্লাহ তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আর পুরুষরা নারীদের জন্য সম্পদ খরচ করে। তাই  নেক্কার নারীরা স্বামীর অনুগত হয়, তার অবর্তমানে (নিজের ইজ্জত আব্রু ও সম্পদের) সংরক্ষণ করে যেমন আল্লাহ তাদের হক সংরক্ষণ করেছেন।’ (৪ : ৩৪) হাদিসে এসেছে, সর্বোত্তম স্ত্রী হচ্ছে সেই মহিলা যার দিকে তাকালে স্বামী খুশি হয়ে যায়, যাকে কিছু বললে মান্য করে আর স্বামীর অবর্তমানে নিজেকে আর স্বামীর সম্পদ দেখে রাখে। (তাখরিজুল ইহইয়া ৫১/২) অন্যত্র  বর্ণিত হয়েছে, যে মহিলা  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানে রোজা রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে আর নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাজতে রাখে তাকে কেয়ামতের দিন বলা হবে, তুমি জান্নাতে যে দরজা দিয়ে চাও প্রবেশ করতে পারো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৬৬১) আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত আর কারো উদ্দেশ্যে সিজদার আদেশ দিতাম তবে স্ত্রীকে স্বামীর উদ্দেশ্যে সিজদার আদেশ দিতাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৫১৪)

এছাড়াও উভয়েরই আরো কিছু  করণীয় রয়েছে। যেমন, অন্যের সামনে একে অপরের ভালো গুণগুলো আলোচনা করা, দোষগুলো ঢেকে দেওয়া, দাম্পত্য সম্পর্কের গোপন কথাগুলো কারো কাছে প্রকাশ না করা, একে অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা। আজকের সমাজে দাম্পত্য জীবন সুখী আর স্থায়ী না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, পারস্পরিক হক ও দায়িত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা, অসচেতনতা বা অবহেলা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বে যথাযথ অটল থাকলে সম্পর্কগুলো হবে মজবুত ও মধুময়।

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads