• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

জাহান্নামের ভয়াবহতা

  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০২১

তরিকুল ইসলাম মুক্তার

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাহান্নাম বানিয়েছেন তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। এক হাদিসের ভাষ্য হচ্ছে, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহতায়ালা দোজখকে ডাকবেন তখন দোজখের লাগামপরা থাকবে। উনিশজন ফেরেশতা এই লাগাম ধরে রাখবে। লাগামপরা ঘোড়া যেমন একটু পর পর সামনে বাড়তে চাই তেমনি দোজখ যখনই গোনাহগারদের দেখবে তাদের ওপর চড়াও হতে চাইবে। রাগে গদগদ করতে করতে গোনাহগারের সামনে এসে নিঃশ্বাস ফেলবে। নিঃশ্বাসের প্রতিক্রিয়া এমন হবে, আগুনের স্ফূলিঙ্গ ছিটে পাপীদের মাথায় গিয়ে লাগবে। এতে তাদের ভেতরের সবকিছু উতলে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এরপর দোজখ আল্লাহতায়ালার সামনে সেজদায় পড়ে যাবে এবং মিনতি করবে-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, যিনি আমাকে তার অবাধ্য বান্দাদেরকে শাস্তির জন্য বানিয়েছেন। এরপর দোজখ বলবে, হে আল্লাহ! তোমার অবাধ্য বান্দা আজ আমার সামনে। আমাকে তো তুমি এজন্য সৃষ্টি করেছ। আজ আমাকে একটু অনুমতি দাও, আমি এই পাপীর কাছ থেকে বদলা নেই। এরপর দোজখ থেকে এমন এক করুণ সুর বেরিয়ে আসবে, মনে হবে যেনো আগুনের স্ফূলিঙ্গ বেরিয়ে আসছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফূলিঙ্গ। তা যেনো হলুদ উট। (সুরা আল মুরসালাত)

হাদিসে বলা হয়েছে, ওই সময় এমন কোনো নবী-রাসুল, ওলি-আওলিয়া নেই যারা ভয়ে কাঁপতে থাকবে না। তাদের ভয় হবে, না জানি এ স্ফূলিঙ্গ কাদের ওপর এসে পড়ে।  সৎ বান্দাদের অবস্থা যখন এই হবে তখন গোনাহগারদের অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। অন্তর কাঁপতে থাকবে, চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার দেখতে থাকবে, প্রাণ গলায় চলে আসবে। তখন আপন বলতে কেউ থাকবে না। আত্মীয়তার পরিচয় দিতে কেউ সাহস করবে না। তখন পিতা ছেলেকে চিনবে না, ছেলে পিতাকে চিনবে না, মা তার সন্তানদেরকে পরিচয় দেবে না, ভাই তার ভাইয়ের পরিচয় দেবে না। ওই দিন পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে, তবে খোদাভীরুরা ছাড়া।

জাহান্নামের কর্মকর্তাদেরকে আল্লাহতায়ালা বলবেন, জাহান্নামে কর্মরত হে ফেরেশতারা তোমরা জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এসো। অবাধ্যদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নিয়োজিত ফেরেশতারা বেরিয়ে আসবেন। হাদিসে আছে, প্রত্যেক ফেরেশতার হাতে জিঞ্জির থাকবে, বেড়ি থাকবে আর কালো পোশাক থাকবে। এই তিনটি জিনিস নিয়ে তারা জাহান্নামিদের শাস্তির জন্য তৈরি হবে। জাহান্নামিদেরকে কালো পোশাক পরিয়ে গলায় বেড়ি জড়িয়ে জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে টানতে থাকবে, টেনে হিঁচড়ে তাদেরকে নিয়ে চলবেন। পবিত্র  কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সেদিন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা জানি, কাউকে অপমান-অপদস্থ করার জন্যই হাঁকিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহতায়ালা সেদিন জাহান্নামিদের অপমানিত করবেন। ধমক দিতে দিতে তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতারা জাহান্নামের দিকে ছুটে চলবে।’

জাহান্নামের গভীরতা কেমন হবে এ নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একবার একটি বিকট আওয়াজ শোনা গেলো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কিসের আওয়াজ? রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন হয়তো কোনো কিছুর আওয়াজ শোনা গেছে। এমন সময় হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এসে জানালেন, হে আল্লাহর রাসুল! আজ থেকে সত্তর বছর আগে জাহান্নামের ওপর থেকে একটি পাথর নিচে ফেলা হয়েছিল। আজ সত্তর বছর পর এটা তলে গিয়ে পৌঁছেছে। জাহান্নামের গভীরতা এত বিশাল যা কখনো কল্পনা করা যায় না। আপনি কূূয়োর কথা মাথায় রাখুন। যদি আশি ফুট কূয়োর নিচে কোনো মানুষ যায় তাহলে তাকে কেমন দেখাবে? আর জাহান্নামে সত্তর বছরের গভীরতায় মানুষকে নিয়ে জ্বালানো হবে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, জাহান্নামের সাতটি দরজা থাকবে, প্রত্যেক দরোজায় একজন নিক্ষেপকারী থাকবে যিনি জাহান্নামিদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (সুরা নিসা) জাহান্নামের সাতটি স্তর হবে, সাতটি তলা হবে। কেউ বলেন, সাতটি ইউনিট হবে জাহান্নামের সবচেয়ে ওপরের যে তলা হবে তাতে গোনাহগার মোমিনদের রাখা হবে। দ্বিতীয়স্তরকে বলা হয় ‘লিবা’ যাতে ইহুদিরা যাবে। তৃতীয় স্তরের জাহান্নামে যাবে খ্রিস্টানরা। চতুর্থ স্তরকে বলা হয় ‘সায়ির’ যাতে সাবিঈনরা (ইহুদি বা খ্রিস্টানদের একটি উপদল) যাবে। পঞ্চাম স্তরকে বলা হয় ‘সাকার’ এতে যাবে আগুনপূজারীরা। ষষ্ঠ স্তর হলো ‘জাহিম’ এতে যাবে মুশরিকরা। আর সর্বনিকৃষ্ট জাহান্নাম হলো ‘হাবিয়া’ যাতে মুনাফিকরা যাবে। কোরআনে বলা হয়েছে-‘নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিকৃষ্ট জায়গায় থাকবে। জাহান্নাম জাহান্নামিদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ থাকবে।’ (সুরা আনআম) শেষে জাহান্নামিদেরকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। সেখানে তারা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করবে। তারা খেতে চাইবে। আল্লাহতায়ালা তাদেরকে খেতে  দেবেন জাক্কুম নামের একধরনের বিষাক্তগাছ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় জাক্কুমগাছ পাপীদের খাবার, গলিততামার মতো পেটগুলোতে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মতো।’ (সুরা দুখান)

কাঁটাযুক্ত এই গাছ এতোটাই তিতা হবে যে, ভেতরের নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে আসবে। কাঁটা গিয়ে গলায় আটকে থাকবে, এদিক সেদিক যাবে না তখন তারা পিপাসার্ত হয়ে পানি চাইবে। কোরআনে বলা হয়েছে যখন তারা পানি চাইবে তাদের প্রচণ্ড গরম পানি দেওয়া হবে। পিপাসার তীব্রতায় তারা গরম পানিই খেতে থাকবে। গরম পানির প্রভাবে তাদের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি সব গলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসবে। সেখানে পুঁজ মেশানো পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা পান করবে আর তা গলার ভেতরে ঢুকবে না তারা গরম পানি পান করার পর তা ফেলে দিতে চাইবে, কিন্তু তা আর সম্ভব হবে না গরমের তীব্রতায় তাদের মুখের চামড়া খসে পড়ে যাবে।

মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, জাহান্নামিদের রক্তপুঁজ এক জায়গায় জমা করে তাদেরকে  খেতে দেওয়া হবে। দুনিয়াতে কারো শরীর থেকে পুঁজ বের হলে তা কতো দুর্গন্ধময় হয়। সে পুঁজই যখন তাদেরকে খেতে দেওয়া হবে তখন অবস্থা কতো ভয়াবহ হবে! কিন্তু পিপাসায় তারা এতোটাই কাতর হবে যে, এগুলো পান না করে ছাড়া পাবে না। এধরনের অসহনীয় শাস্তি জাহান্নামে দেওয়া হবে। তাই আমাদেরকে জাহান্নামের এ ভয়াবহ আজাব থেকে দূরে থাকতে হলে আল্লাহর দরবারে সঠিকভাবে তওবা করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ভয়াবহ ও নির্মম এ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন, ময়মনসিংহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads