• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কোরবানীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২১

তরিকুল ইসলাম মুক্তার

 

 

আত্মার প্রশান্তির জন্য জীবনধারা থেকে কিছুক্ষণের জন্য মনকে স্বাধীন করে আনন্দ উল্লাস করা একটি মানবিক চাহিদা। এ মানবিক চাওয়া থেকেই বিভিন্ন জাতি গোত্রে বিভিন্ন উৎসবের জম্ম নিয়েছে। আর ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম  বলে মানবিক এই চাহিদাকে আরো বেশি সম্মান করে বছরে দুটি ঈদ ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আজহা’ আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন। এর জন্য পহেলা শাওয়াল এবং ১০ জিলহজ্ব এই দুটি দিনকেই ইসলাম বেছে নিয়েছে। দুই ঈদ প্রতি বছর এমন দুটি দিনকেই কেন্দ্র করে আসে, যখন মুমিন মুসলমানগণ সম্মিলতভাবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পন্ন করে। ঈদুল ফিতর সেই সময় আসে যখন মুমিনগণ পুরো একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়। আর ঈদুল আজহা তখন উদযাপন করা হয়, যখন হজ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পন্ন করা হয় লাখো কোটি মুসলমানগণ আরাফার ময়দানে ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি নবজীবন লাভ করে। আর হজ্জে অংশ নিতে না পারা মুসলমানগণ কুরবানি করে ত্যাগের মহিমায় আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।

 

কুরবানি শব্দটি কোরবান থেকে এসেছে। এর অর্থ নিকটবর্তী হওয়া। কুরবানি বলতে এমন ইবাদতকে বোঝানো হয়, যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, রাজি খুশি এবং নৈকট্য অর্জন করা যায়। হজরত নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি আপনাকে হাউসে কাউছার দান করেছি, তার শুকরিয়াস্বরূপ আপনি নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাওসার) কুরবানি সম্পর্কে হজরত মিখজাফ ইবনে সালীম (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে সমবেত লোকদেরকে সম্বোধন করে একথা বলতে শুনেছি-‘হে লোক সকল! তোমারা জেনে রাখ যে, প্রত্যেক সামর্থ্যবান পরিবারের ওপর প্রত্যেক বছরই কুরবানি করা কর্তব্য আর যার সামর্থ্য নেই তাদের ওপর কুরবানি কর্তব্য নয়। কারণ আল্লাহতায়ালা কারো ওপর এমন কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যের বাইরে।’ কুরবানি করা বড় সওয়াবের কাজ। সুতরাং যাদের সার্মথ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, তাদের চেয়ে বড় হতভাগা নির্লজ্জ আর কেউ নেই। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।

 

একবার সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কুরবানীর তাৎপর্য কী? রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোরবানী করা এটা তোমাদের ধর্মীয় পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম আবার আরজ করলেন, এতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম বললেন প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব হবে। আর কুরবানির দিন আল্লাহতায়ালার নিকট পশু জবাই অপেক্ষা অন্য কোনো আমল বেশি পছন্দনীয় নয়। কিয়ামতের দিন কুরবানিকৃত প্রাণী ও তার লোম খুর ও শিংহসহ উপস্থিত হবে। কুরবানিকৃত পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। কুরবানি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য হাসিলের জন্যই করা হয়। মহান আল্লাহতায়ালার পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন, তাকওয়া হচ্ছে কুরবানির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহর নিকট আমাদের কোরবানীর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না। বরং অন্তরের তাকওয়া ও পরহেজগারি পৌঁছে থাকে। সুতরাং কুরবানি করার আড়ালে যদি গোশত খাওয়া লৌকিকতা অথবা এরূপ কোনো হীন স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে সম্পূর্ণ কুরবানি বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

 

কুরবানি একটি বড় ইবাদত। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয়। মনের সমস্ত চাহিদাকে আল্লাহর কাছে পেশ করে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা। মানুষ যত বড় জন্তই কুরবানি করুক না কেন; তার গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং পৌঁছে মনের অবস্থা। কোরবানী দাতা পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেছে কিনা এবং জন্তু ক্রয়ের সময় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি মনে ছিল কিনা? এ ব্যাপারগুলো ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। মূলত প্রতিটি ইবাদতই হতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। সঠিক নিয়তবিহীন ইবাদত দ্বারা মূল মাকসাদে কখনো পৌঁছা যায় না।

 

জন্তু কুরবানির পেছনে রয়েছে হূদয়বিদারক এক ইতিহাস। আল্লাহর আদেশে হজরত ইবরাহীম (আ.) সে ইতিহাসের সূচনা করেছেন। তিনি আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজের সর্বস্ব বিলীন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। পরবর্তী জাতির জন্য রেখে গেছেন অনুসরণীয় স্মৃতি। আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালার হুকুমের আনুগত্য কীভাবে করতে হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর হুকুম পালনার্থে কলিজার টুকরা সন্তানকে কোরবানী করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। পিতাপুত্রের পূর্ণ আনুগত্যের মাঝে পরবর্তী লোকদের জন্য রয়েছে বহু শিক্ষাণীয় বিষয়। যা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের কাছে পরিষ্কার। আনুগত্যের এই ধারাকে কেয়ামত পর্যন্ত চালু রাখার জন্য আমাদের ওপর বছরে একবার পশু কোরবানীর বিধান রাখা হয়েছে। যে বিধানের মধ্যে মানুষের জন্য অনুকরণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। কোরবানি করা হজরত ইবরাহীম (আ.) এর একটি অনুকরণীয় আদর্শ। কোরবানি করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। নিজের ব্যক্তিক্ত নাম ফুটানোর জন্য নয়। কোরবানি মুসলিম সমাজের একটি ঐতিহ্য। বড় একটি ইবাদত। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ কোরবানি দিয়ে এসেছে। ঈদের দিনগুলোতে সারা বিশ্বে লক্ষ কোটি পশু কোরবানি হয়। আল্লাহপাক এর মধ্যে বরকত রেখেছেন। আল্লাহপাক সমস্ত মুসলিম ভাইদেরকে দিল খুলে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমীন

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন, ময়মনসিংহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads