• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কুরবানি ও আমাদের শিক্ষা

  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২১

আমিনুর রহমান হাসান

 

 

কারব বা কুরবান আরবি শব্দ। উর্দু ও ফার্সিতে কুরবানিতে রূপান্তর হয়েছে। অর্থ হলো নৈকট্য বা সান্নিধ্যে। শরিয়তের পরিভাষায় কুরবানি বলা হয়, ঈদুল আজহার দিন আল্লাহর নৈকট্যলাভের জন্য নির্দিষ্ট কোনো গৃহপালিত পশু জবাই করা। এদিনকে ইয়াওমুন্নাহরও বলা হয়। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধানের সামনে কোনো যুক্তি দাঁড় করানো যাবে না। আল্লাহর অমোঘ বিধানকে কোনো ধরনের যুক্তিতর্ক ছাড়া মানাই হলো কুরবানির অন্যতম শিক্ষা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক নেসাবের মালিক মুসলিম নর-নারীর ওপর কুরবানি ওয়াজিব৷ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ১০ যিলহাজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহাজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে৷’ (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, আল মুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫ পৃষ্ঠা)

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন দেখেন মদিনার লোকেরা নাইরুজ ও মেহেরজান নামক দুটি দিনকে কেন্দ্র করে খেলাধুলা ও উদযাপন করতেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এদিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে ‘আমরা জাহেলি যুগ থেকে এরকম করে আসছি’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এখন থেকে তোমরা এদিনকে পরিত্যাগ করবে এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য এদিনের পরিবর্তে দুটি স্পেশাল দিন দিয়েছেন।  সেগুলো হলো (১) ঈদুল ফিতর ও (২) ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদ।’ (মিশকাত শরিফ)

আমাদের আদিপিতা হজরত আদম আলাইহিসসালাম থেকে চলে আসা এ বিধানের মধ্যে যেভাবে মানবিক কল্যাণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে আখেরাতের বিশেষ কল্যাণ। সায়্যিদুনা হজরত ইবরাহীম (আ.) ছিলেন নিঃসন্তান। জীবনের শেষ সময়ে এসে আল্লাহর কাছে চেয়ে পেয়েছিলেন হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালামকে। সন্তানকাঙাল হজরত ইবরাহীম আলাইহিসসালামকে আল্লাহতায়ালা স্বীয় রাস্তায় সন্তান কুরবানির মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন। হজরত ইবরাহীম আলাইহিসসালামও কোনো যুক্তি বা টালবাহানা ছাড়াই লখতে জিগার হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালামকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করতে প্রস্তুত হন। এখানেও রয়েছে কুরবানির বিশেষ শিক্ষা যে, সামর্থ্যবানদের জন্য কুরবানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের টালবাহানা গ্রহণযোগ্য নয়।

আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘(হে নবী!) তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কুরবানি করো।’ (সুরা কাউসার) আল্লাহতায়ালা অন্যত্রে ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ) হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে কুরবানি করার সামর্থ্য রাখে অথচ সে কুরবানি করেনা, সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ) কুরবানি করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরকম কঠিন কথা বলতে পারেন, সেটা আলোচিত হাদিস থেকে সহজে অনুমেয় হয়।

কুরবানিকৃত পশুর গোশত বা রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু বান্দার তাকওয়া। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘কুরবানিকৃত পশুর  গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করো এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। (হে নবী!) সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সুরা হজ্জ)

ইহুদি-খ্রিস্টানরা তাদের উৎসবের দিন তাদের দেব-দেবীর নামে অনেক কিছু উৎসর্গ করে থাকে। আর মুসলমানরা ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের দিন তাঁদের রবের জন্য কুরবানি করে নির্দিষ্ট জন্তু। কুরবানির জন্তু ক্রয়ের সময় সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো ও সুন্দর জন্তু ক্রয় করা উত্তম। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্যলাভ করতে পারবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা আলে ইমরান) কুরবানির পরিবর্তে কুরবানির টাকা গরিবদেরকে বণ্টন করে দিলে সেটা বৈধ হবে না। কুরবানিই করতে হবে। কুরবানির পশু কুরবানির মাধ্যমে নিজের ভেতর লুকানো আমিত্ব নামক পশুটাকেও কুরবানি করা চাই। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক সামর্থ্যবানদেরকে বিশুদ্ধভাবে কুরবানির মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

hasanamin261@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads