• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

জিলহজের প্রথম দশকের আমল

  • প্রকাশিত ১২ জুলাই ২০২১

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

 

জিলহজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতের মাস। এ মাসে মুসলিম উম্মাহ পবিত্র হজ পালন করে থাকে। জিলহজ মাস মানে হজের মাস। এ মাসের প্রথম দশক আমলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত জিহাদের চেয়েও মর্যাদাবান। হাদিসে এসেছে-হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এদিনগুলোর (জিলহজের প্রথম ১০ দিনের) আমলের তুলনায় কোনো আমলই অন্য কোনো সময় উত্তম নয়। তারা বলল : জিহাদও না? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (বুখারি)

আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল। হাদিসে এসেছে-হজরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোনো দিনই প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দশ দিনের তুলনায়। সুতরাং তোমরা তাতে (জিলহজের প্রথম ১০ দিন) বেশি বেশি তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ কর।’ (তাবারানি)। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওলামায়েকেরামও জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে একনিষ্ঠভাবে নিজেদের নিয়োজিত করতেন, যার প্রমাণ দিয়ে গেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ওলামায়েকেরাম।

হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে নিজেকে একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত রাখতেন, যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজ মাসে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, ‘যখন জিলহজ মাসের ১০ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার ওপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।’ (দারেমি)। হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলতের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট তা হচ্ছে, এখানে মূল ইবাদাতগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। অর্থাৎ নামাজ, রোজা, সাদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় যথাযথভাবে আদায় করা হয় না।’ (ফতহুল বারি)।

মুমিন মুসলমানের জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিন ও রাতের ইবাদত-বন্দেগি অনেক মর্যাদা ও সম্মানের। মুসলিম উম্মাহর উচিত, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা পালনের মাধ্যমে অধিক সওয়াব ও ফজিলত লাভের করা। বিগত জীবনের গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করা। আল্লাহর নৈকট্য ও ভয় অর্জন করা। জিলহজ মাস শুরু হওয়া থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালনই হবে মুমিন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম কাজ। জিলহজের ৯ তারিখ আরাফাতের দিনের রোজা বিশেষ সুন্নাত। এই দিনের আমল অধিক ফজিলতপূর্ণ। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে তিনি এর মাধ্যমে বিগত এক বছরের এবং আগামী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুনান আত তিরমিজি : হাদিস নম্বর-৭৪৯)।

আরেকটি আমল হলো-জিলহজ মাসের প্রথম দশকে কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত নখ, চুল আর পশমাদি কাটছাঁট না করা। জিলহজের চাঁদ ওঠার আগে প্রয়োজন হলে কেটেছেঁটে ফেলা এবং কোরবানির দিন পশুর গলায় ছুরি দেওয়ার আগ পর্যন্ত এসবে হাত না দেওয়া। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তারা জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে পশু কোরবানি করার আগ পর্যন্ত শরীরের বর্ধিত অংশ তথা নখ, চুল ও গোঁফ ইত্যাদি কাটবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির নিকট কোরবানির পশু আছে অর্থাৎ যে কোরবানি করার ইচ্ছা রাখে সে জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার নখ, চুল ও গোঁফ ইত্যাদি কাটবে না।’ (সহিহ মুসলিম : হাদিস- ৫০১৫)।

এছাড়া যাদের কোরবানি করার সক্ষমতা নেই তাদেরও করণীয় হলো ঈদ পর্যন্ত শরীরের বর্ধিত অংশ নখ, চুল ও গোঁফ ইত্যাদি না কাটা। তাদের জন্য এটিই পূর্ণ কোরবানি। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোরবানির দিন ঈদ পালনের। আল্লাহতায়ালা কোরবানির দিনকে এই উম্মতের জন্য ঈদ নির্ধারণ করেছেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আপনি বলুন) আমার নিকট যদি দুগ্ধবতী বা মালবাহী পশু ব্যাতীত অন্য কোনো পশু না থাকে, তাহলে কি আমি তা দিয়েই কোরবানি দেব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। বরং তুমি তোমার শরীরের বর্ধিত অংশ তথা নখ, চুল ও গোঁফ ইত্যাদি কেটে ফেল। এটাই তোমার জন্য পূর্ণ কোরবানি। (আবু দাউদ : হাদিস নম্বর-২৭৮৯)।

 

সতর্কতা : বগল আর নাভির নিচের কেশ কাটতে-ছাঁটতে ৪০ দিনের বেশি দেরি হলে বা আপনি ভুলে গেলেন কাটতে, আবার এদিকে কোরবানির চাঁদ উদয় হয়ে গেছে, এমন যদি হয় তাহলে চাঁদ উদয় হলেও আপনি যা কাটার তা কাটতে-ছাঁটতে পারবেন। নারী-পুরুষের অভিন্ন হুকুম। কারণ ৪০ দিনের বেশি হয়ে গেলে নামাজ ইত্যাদি মাকরুহে তাহরিমি হয়, যা পূর্বেকার মুস্তাহাবি আমলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে শুরু তাকবিরে তাশরিক। ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত। এই দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরিক বা তাশরিকের দিন বলা হয়। দিন হিসেবে পাঁচ দিন হয়। পুরুষদের পড়তে হয় বড় আওয়াজে আর মহিলাদের পড়তে হয় ছোট আওয়াজে। তাকবির যদিও ওয়াজিব, কিন্তু মহিলাদের আওয়াজ ছতর হিসেবে ছোট আওয়াজে পড়াই বাঞ্ছনীয়। এই তাসবিহ কেবল একবার পড়া ওয়াজিব, তিনবার পড়া ওয়াজিব নয়।

 

লেখক : এম এ কামিল হাদিস, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা

drmazed689@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads