• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

কেমন হবে এই উম্মতের জাহান্নাম (২)

  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০২১

কাজী সিকান্দার

 

 

(পূর্ব প্রকাশের পর)

হজরত ফাতিমা (রা.) আরজ করলেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ! ফেরেশতারা তাহলে কীভাবে তাদের হেঁচড়ে নিয়ে যাবে? ইরশাদ করলেন : পুরুষদের দাড়ি ধরে এবং নারীদের চুলের বেণি ধরে। নারী-পুরুষ সকলেই তখন চিৎকার করে কাঁদতে থাকবে। তারা জাহান্নামের দরজার কাছে পৌঁছার পর প্রহরী ‘মালিক ফেরেশতা’ বলবেন : এরা কারা? বড় অদ্ভুত মনে হচ্ছে এদের! এদের চেহারা কালো নয়, চক্ষু নীল নয়, এরা বোবা নয়, সঙ্গে শয়তান নেই, গলায় বেড়ি নেই, জিঞ্জির দিয়ে হাত-পাও বাঁধা হয়নি! অন্য ফেরেশতাগণ বলবেন আমরা কিছুই জানি না। আমাদের আদেশ করা হয়েছে। আমরা আদেশ মোতাবেক আপনার কাছে এদের পৌঁছে দিলাম। মালিক দারোগা তখন নিজেই জিজ্ঞেস করবেন, হে দুর্ভাগারা! তোমরাই বল, তোমাদের পরিচয় কী? (একটি বর্ণনায় আছে) এসব জাহান্নামি সারা পথ হায় মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হায় মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে চিৎকার করবে। কিন্তু মালিক দারোগাকে দেখতেই মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামও ভুলে যাবে। তারা বলবে আমরা সেইসব লোক, যাদের প্রতি পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছিল। যাদের রমজান মাসে রোজা রাখতে বলা হয়েছিল। দারোগা বলবেন, কোরআন শরীফ তো অবতীর্ণ হয়েছিল হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। এ নাম শুনতেই তারা চিৎকার করে উঠবে, আমরা তো হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরই উন্মত। দারোগা বলবেন, কোরআন কি তোমাদের আল্লাহর অবাধ্য হতে বারণ করেনি?

যখন তাদের জাহান্নামের অগ্নির কাছে এবং দারোগার কাছে অবস্থান করানো হবে, তখন তারা সকলেই মালিক দারোগার কাছে অনুরোধ করবে, আমাদেরকে আমাদের কৃত অপরাধের জন্য খানিকটা কাঁদতে দিন। অতঃপর কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। অশ্রুর বদলে প্রবাহিত হবে রক্তের ধারা। তারা চরম নৈরাশ্যের সাথে বলবে, আহা, এই কান্নাটা যদি দুনিয়াতে কাঁদতাম! তাহলে আজ আর কাঁদতে হতো না। দারোগার নির্দেশে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারা তখন সমস্বরে বলে উঠবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! এই ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ফিরে যাবে। দারোগা আগুনকে নির্দেশ দেবে ওদের গ্রাস কর। আগুন বলবে, কীভাবে এদের গ্রাস করব? ওদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! দারোগা বলবেন : এটাই আল্লাহর নির্দেশ। তখন আগুন তাদের পাকড়াও করবে। আগুন কারো কারো পা পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত, আবার কারো গলা পর্যন্ত গ্রাস করে নেবে। আগুন যখন চেহারার দিকে আসতে চাইবে তখন দারোগা বলবেন : এদের চেহারাগুলোকে জ্বালিও না। কারণ কতবার তারা এই চেহারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদায় নত করেছে। তাদের অন্তরগুলোকে জ্বালিও না। কারণ রমজানে রোজা রেখে কতবার তারা এই অন্তরকে পিপাসার্ত রেখেছে। এভাবে তারা আল্লাহ যতদিন চাইবেন জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে এবং বার বার এই বলে আল্লাহকে ডাকতে থাকবে : ইয়া আরহামার রাহিমিন! ইয়া হান্নান! ইয়া মান্নান!

অবশেষে এক সময় আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাইলকে বলবেন : তুমি উম্মতে মোহাম্মাদির খোঁজ নাও। তারা কেমন আছে? জিবরাইল ছুটে আসবেন মালিক দারোগার কাছে। দারোগা তখন জাহান্নামের মধ্যবিন্দুতে একটি আগুনের মিম্বরে সমাসীন। জিবরাইলকে দেখতেই তিনি তাজিমের সাথে উঠে দাঁড়াবেন এবং এখানে আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করবেন। জিবরাইল বলবেন আমি উম্মতে মোহাম্মাদির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য এসেছি। তারা কেমন আছে? দারোগা বলবেন, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। সংকীর্ণ স্থানে পড়ে আছে। আগুন তাদের শরীরের গোশতগুলো জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিয়েছে। অবশিষ্ট আছে শুধু তাদের চেহারা ও অন্তরগুলো। আর সেখানে ঝলমল করছে ঈমানের নূর।

হজরত জিবরাইল (আ.) বলবেন, তারা কোথায় আমাকে দেখিয়ো দাও। জিবরাইলকে দেখতেই পাপী বান্দারা বুঝে ফেলবে ইনি আমাদের ফেরেশতা নন। কারণ তাঁর উজ্জ্বল মুখশ্রীতে রহমতের ঝিলিক খেলতে থাকবে। তারা জিজ্ঞেস করবে ইনি কে? আমরা আজ অবধি এমন সুন্দর চেহারা কখনো প্রত্যক্ষ করিনি। বলা হবে ইনি হজরত জিবরাইল। যিনি হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি নিয়ে আসতেন। এই নাম শুনতেই তারা চিৎকার করে উঠবে। তারা বলে উঠবে : জিবরাইল আপনি গিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের সালাম দেবেন। বলবেন : আমাদের পাপ আমাদেরকে তাঁর থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ধ্বংস করে ফেলেছে।

হজরত জিবরাইল (আ.) ফিরে আসবেন। আল্লাহতায়ালার দরবারে সব ঘটনা খুলে বলবেন। আল্লাহতায়ালা বলবেন তারা তোমাকে কিছু বলেনি? বলবেন : বলেছে। মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সালাম পাঠিয়েছে এবং তাদের দুরবস্থার কথা জানাতে বলেছে। নির্দেশ হবে যাও, তাদের পয়গাম পৌঁছে দাও! এ কথা শুনতেই হজরত জিবরাইল (আ.) হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে গিয়ে উপস্থিত হবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বেহেশতের এমন একটি মহলে আরামরত থাকবেন যা শুভ্র মোতির তৈরি, যাতে চার হাজার দরজা রয়েছে। সে দরজা সোনা দিয়ে বাঁধানো।

সালাম বা’দ হজরত জিবরাইল (আ.) আরজ করবেন, আপনার পাপী উম্মতদের কাছ থেকে এসেছি। তারা আপনাকে সালাম বলেছে এবং তাদের ধ্বংস ও দুর্দশার কথা আপনাকে জানাতে বলেছে। একথা শুনতেই হজরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যাবেন এবং অপূর্ব ভাব ও ভাষায় আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করবেন। আল্লাহতায়ালা আদেশ করবেন মাথা তুলুন! চাও, কী চাওয়ার আছে। যা চাইবে তাই দেব। কারো সম্পর্কে সুপারিশ করলে কবুল করব। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরজ করবেন-ওগো প্রভু! আমার পাপী উম্মতের ওপর আপনার নির্দেশ কার্যকর হয়েছে, তাদের ওপর আপনার শাস্তি নিপতিত হয়েছে। আমি তাদের জন্য সুপারিশ করছি। আপনি কবুল করুন।

আদেশ করা হবে : আপনার সুপারিশ গ্রহণ করলাম। আপনি যান এবং যে ব্যক্তি কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করেছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামের কাছে পৌঁছতেই তাঁর সম্মানার্থে দারোগা মালিক দাঁড়িয়ে যাবেন। তিনি তাঁকে বলবেন : মালিক, আমার পাপী উন্মতরা কেমন আছে? মালিক আরজ করবেন। খুবই খারাপ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবেন জাহান্নামের দরজা খুলে দাও। দরজা খুলে দেওয়া হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতেই পাপী উম্মতরা এই বলে চিৎকার করে উঠবে-হে রাসুল! আগুন আমাদের শরীর কলিজা জ্বালিয়ে ফেলেছে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। তাদের শরীরের রং তখন কয়লার মতো কালো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বেহেশতের দরজার কাছে অবস্থিত রিজওয়া নামক নহরে গোসল করতে দেবেন। এখানে গোসল করতেই সকলে আলোকোজ্জ্বল যুবকে পরিণত হয়ে উঠবে। চেহারা হবে চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তাদের কপালে লেখা থাকবে, ‘এরা হলো আল্লাহ রাহমানুর রাহিম কর্তৃক মুক্তিপ্রদত্ত জাহান্নামি। তখন অবশিষ্ট জাহান্নামিরা আক্ষেপের সুরে বলবে-আহা! আমরাও যদি মুসলমান হতাম, তাহলে আজ অন্তত জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পেতাম। এ মর্মেই কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘কত কাফের এই কামনা করবে, তারা যদি মুসলমান হতো!’ তারপর মৃত্যুকে একটি দুম্বার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জবাই করা হবে। অতঃপর বেহেশতি ও দোজখিদের বলা হবে, আজ থেকে আর কারো মৃত্যু হবে না। তোমরা যে যেখানে আছ, অনন্তকাল সেখানেই থাকবে। (তামবিহুল গাফিলিন)।

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ

আশরাফাবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads