ইসলাম শান্তির এবং আল্লাহর একমাত্র মননীত ধর্ম। ইসলামের বিধান মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতির জন্য সহজ করে দিয়েছেন। মুসলমানদের দিবারাত্র চব্বিশ ঘণ্টার আহার, নিদ্রা,
কাজকর্ম সবই ইবাদত। তার মাধ্যে বিয়ে-শাদিও একটি অন্যতম ইবাদত।
কিন্তু বর্তমান সমাজে বিয়ের সময় ছেলেপক্ষ যেভাবে মেয়েপক্ষের নিকট যৌতুক দাবি করে তা সম্পূর্ণ হারাম। যৌতুক একটি ভিক্ষাবৃত্তিক প্রথা। যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় ভেঙে গেছে বিয়ে, ঘর-সংসার। হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রাণও। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে-শাদিতে যৌতুক লেনদেন হারাম। কোরআন ও হাদিসে বরপণ দেওয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই।
বিয়ে-শাদিতে কোনোপক্ষই শরিয়ত পরিপন্থি কোনো দাবি-দাওয়া করতে পারবে না। একজন মুসলমান তার সীমারেখার মধ্যে জীবনধারা পরিচালনা করবে। জোরপূর্বক অন্যায্য দাবি আদায় করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তাবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে, এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৩০) ইসলামী বিধান ও সংস্কৃতিতে বরকে উপঢৌকন দেওয়ার অনুমোদন নেই।
কন্যার জীবনধারা দুটি ভাগে দুজনের দায়িত্বে অর্পিত। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত পিতার ওপর মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব। (সুরা বাকারা, আয়াত-২৩৩) বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর দেওয়ার দয়িত্বও স্বামীর। আর বিয়ের সময় থেকে আজীবন স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, পুরুষরা স্ত্রীলোকদের অভিভাবক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণেও যে, তারা নিজেদের ধনসম্পদ থেকে স্ত্রীলোকদের জন্য খরচ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৩৪)
যৌতুক মূলত অর্থনৈতিক লেনদেনকেন্দ্রিক। ইসলামের নীতিবোধ এ কথাই বলে, কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না। বুজুর্গরা যৌতুককে ডাকাতির নামান্তর বলে অবহিত করেছেন। এটা কবিরা গুনাহ। শরিয়তে বিয়ের লেনদেন সম্পর্কে বলা হয়েছে,
স্বামী স্ত্রীকে মোহরবাবদ কিছু সম্পদ দেবে। এব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৪) কনের প্রাপ্য দেনমোহর কোনো দয়ার দান নয়; বরং তা তাদের অধিকার। শরিয়তের দৃষ্টিতে মোহর প্রদান স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব এবং স্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
বিয়ে হলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অন্যের কাছে উপকৃত ও পরিতৃপ্ত হওয়ার মাধ্যম। কিন্তু স্বামীর অধিকার বেশি। আর স্ত্রীর কর্তব্য অধিক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী সদ্য বিয়ে শেষে বরপক্ষ আত্মীয়দের ওলিমা তথা বৌভাত খাওয়াবে। বিয়ের ক্ষেত্রে এ দুটি খরচই প্রধান, তা অবশ্যই ছেলের পক্ষ থেকে হতে হবে। আর স্ত্রীর ভরণপোষণ তো আছেই। তবে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে পিতার সামর্থ্যানুযায়ী মেয়ের সংসারের জন্য বা জামাইয়ের জন্য যৎসামান্য উপহার প্রদান করাতে দোষ নেই। তবে কোনোভাবেই বিয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শর্ত হিসেবে দেওয়া যাবে না।
হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মেয়ে হজরত ফাতেমা (রা.) এর বিয়েতে মেয়ের সংসারের জন্য একটি যাঁতা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি হজরত ফাতেমাকে পশমনির্মিত সাদা রঙের চাদর, একটি ইজখির ঘাসনির্মত বালিশ এবং চর্মনির্মিত পানির মশক দিয়েছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সর্বাপেক্ষা বরকতময় ওই বিয়ে। যা কম খরচে সম্পন্ন করা হয়। (বায়হাকি)
লেখিকা :রাফিয়া নূর
শিক্ষার্থী, ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষ
হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর. এম. কামিল মাদরাসা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর