• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের সতর্কতা কাম্য

  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০২২

আবদুর রশীদ

 

মানুষের রয়েছে দুটো দিক-শারীরিক এবং আত্মিক। আত্মিক অসুস্থতার জন্য প্রয়োজন ঈমানের চিকিৎসা। অপরদিকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রয়োজন যান্ত্রিক চিকিৎসা। মানুষ সবসময় সুস্থতা এবং অসুস্থতার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় যেন সুস্থতায় ফিরতে পারে উত্তম চিকিৎসার মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত ডাক্তারের চেম্বারে মানুষের ভিড়। হাসপাতালের বেডরুমে কাতরানো নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সমাহার। হাসপাতাল থেকে ফিরে কেউ হেসে আর আনন্দে। আবার কারো চোখের জ্বলে কপল ভিজে। এসব কিছুর মাঝেই রয়েছে ডাক্তারদের একটি বড় ভূমিকা।

 

ডাক্তারি পেশা হল মহৎ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। যদি না হয় তা নৈতিক দ্লে দ্লায়মান, তাহলে শ্রেষ্ঠ পেশা হয়েও তা দাঁড়ায় নিকৃষ্ঠতর কর্মে। আজ চতুর্দিকে হারামের ছড়াছড়ি আর অনৈতিকতায় ডুবন্ত প্রতিটি দিক। দু'’মুটো হালাল উপার্জনের পথ বেছে নিবে এর কোনো তোয়াক্কা করে না সর্বপেশার লোকজন। তাই নিম্নোক্ত কাজের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত ডাক্তারের কাছে বিভিন্ন কোম্পানির এম. আর. ভিজিট করতে আসে যেন তাদের কোম্পানির ঔষধগুলো ডাক্তাররা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করেন| ফলস্বরূপ ভিজিটর ডাক্তারকে বিভিন্ন উপটৌকন সামগ্রী ও হাদিয়া প্রদান করেন| মূলত এগুলো গ্রহণ করা হল ডাক্তারদের জন্য হারাম। কারণ তাদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ঔষধ লেখার জন্য বিনিময় গ্রহণ করায় ঘুষ খাওয়ার পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘুষ যে খায় এবং যে দেই, উভয়ই সনান অপরাধী। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫৮০) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি। (মু’জামুল আউসাত: ২০২৬)।

 

একটি হাদীসে উল্যেখ হয়েছে যে, আবূ হুমায়দ আস-সা‘ঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী আসাদ গোত্রের ইবনু লুতাবিয়্যা নামের এক লোককে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী বানালেন। সে যখন ফিরে এল, তখন বলল, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। এ কথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। সুফইয়ান কখনো বলেন, তিনি মিম্বরের উপর উঠলেন এবং আল্লাহর হামদ ও সানা করলেন। এরপর বললেন, কর্মকর্তার কী হল! আমি তাকে পাঠাই, তারপর সে ফিরে এসে বলল, এগুলো আপনার আর এগুলো আমার। সে তার বাপের বাড়ি কিংবা মায়ের বাড়িতে বসে থেকে দেখত যে, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কিনা? যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! যা কিছুই সে গ্রহণ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন তা কাঁধে বয়ে নিয়ে হাজির হবে। যদি উট হয়, তাহলে তা চিৎকার করবে, যদি গাভী হয় তবে তা হাম্বা হাম্বা করবে, অথবা যদি বক্রী হয় তাহলে তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করবে। তারপর তিনি উভয় হাত উঠালেন। এমনকি আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্র ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেলাম। তারপর বললেন, শোন! আমি কি আল্লাহর হুকুম পৌঁছে দিয়েছি? এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৭১৭৪, ২৫৯৭, ৬৬৩৬, ৬৯৭৯, আবূ দাঊদ: ২৯৪৬)

 

হাদিয়া গ্রহণ সুন্নাত। কিন্তু উপরোক্ত বর্ণনায় যে হাদিয়ার কথা উল্লেখ আছে তা মূলত ঘুষ ছিল। তাই উক্ত হাদিস থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। এভাবে বিভিন্ন ঘুষের সাথে সম্পর্কের বাইরেও একটি অনৈতিক কাজেও জড়িত। যেমন- একটি কোম্পানির ভালো ঔষধের পরিবর্তে ভিন্ন কোম্পানির অধিকতর ভালো নয় এমন ঔষধের নাম বিনিময় গ্রহণের দরুন প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করে থাকে। ফলে রোগী দ্রুত সেরে উঠে না এবং পুনরায় তাকে ডাক্তারের কাছে ভিজিট করতে হয়। এতে ডাক্তারের আরো একটি সুবিধা হল দ্বিতীয়বার রোগীর ভিজিটিং। এমনটা করা গর্হিত কাজ| চাইলে ডাক্তার হালাল উপায়ে উপার্জন করতে পারে অতি সহজে| যেমন- ডাক্তারের কাছে কম-বেশি অভিজ্ঞতা আছে যে, কোন কোম্পানির ঔষধগুলো কোন রোগের জন্য সবচেয়ে বেশি এফেক্টিভ তা যদি মিলিয়ে যথাযথ ঔষধ রোগীর প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করে, তাহলে হারামের সাথে সম্পৃক্ততার লেশমাত্র থাকবে না। আর এতে রয়েছে ডাক্তার এবং রোগী উভয়ের জন্য কল্যাণ।

অপরদিকে রোগীকে দেখে ঔষধ দিতে না দিতেই দিয়ে দেন নানান পরিক্ষা। এর মাধ্যমে করা হচ্ছে এক ধরনের হয়রানি। কিন্তু কেন? প্রথমে বুঝে ঔষধ দেওয়া উচিত। আর জঠিল রোগী হলে অবশ্যই পরিক্ষা দিবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রায় সবার ক্ষেত্রে কেন? কারণ এর সাথে হাসপাতাল কেন্দ্রিক একটা ধান্দার চক্রান্ত জড়িত যা পর্যবেক্ষিত| এরূপ রোগীদের হয়রানি ডাক্তারদের একটি অনৈতিক কাজ, যা কাম্য নয়|

 

অতএব, যে কাজের দরুন উপার্জনগুলো হারামে রূপ নিতে পারে তা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা একজন মুসলিমের অবশ্যই করণীয়| হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে, তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম।’ (তিরমিযী, হাদিস: ৬১৪) আল্লাহ তা'য়ালা সবাইকে যাবতীয় সেক্টর থেকে হালাল উপার্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম

সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads