• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০২২

হুসাইন আহমদ

 

ইসলাম এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলাম মহান আল্লাহপাকের মনোনীত ধর্ম। এমন কোনো বিষয় নেই যে বিষয়ে ইসলামে সমাধান নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে জাহিলয়্যাতের সময়, কাল ও যুগে নারীদের অবহেলিত হওয়ার বিষয়টা তো সুস্পষ্ট। আর ইসলাম ব্যতীত বিভিন্ন ধর্ম ও মতামতও  নারীদেরকে কখনো প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার দেয়নি। নারীরা ছিল সব সময়ে সবচেয়ে বেশি অপদস্ত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত। সমাজের মানুষেরা নারীদেরকে কখনো তো তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতোই না। তাদের অসম্মানিত হওয়ার বিষয় মনে করতো। কিন্তু একমাত্র ইসলাম নারীদের সব সম্পর্ককে সম্মান দিয়েছে, অনন্য মর্যাদা ও মহিমায় অধিষ্ঠিত করেছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের শুধু সমমর্যাদা নয় বরং অগ্রমর্যাদা দান করেছে।

 

মা হিসেবে নারীর মর্যাদা : প্রথমত ইসলাম নারীদের মা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। মা হিসেবে ইসলাম নারীদের যে পরিমাণ মর্যাদা দিয়েছে, তা পৃথিবীর কোনো ধর্ম ও সভ্যতায় কল্পনাই করা যায় না। বিশেষ করে আধুনিক সভ্যতায় সে কল্পনা করা তো স্বপ্নবিলাস ছাড়া কিছুই নয়। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারের নির্দেশ দিয়েছি। কারণ তার মা তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের সঙ্গে প্রসব করেছে।’ (সুরা আহকাফ-১৫) এখানে বাবা-মা দুজনের সঙ্গে ভালো আচরণ করার কথা বলা হলেও অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে মায়ের কষ্টের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বাবারও বিরাট অবদান রয়েছে সন্তানের জীবনে। এটা এদিকেই ইঙ্গিত করে যে, বাবার তুলনায় মায়ের মর্যাদা বেশি।

 

কারণ মায়ের কষ্টের কাছে বাবার কষ্ট ও ত্যাগ খুবই সামান্য। এক হাদিসে এসেছে, জনৈক সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার সদাচার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মা। সাহাবি বললেন, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি বললেন, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি বললেন, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-৫৯৭১) অপর এক হাদিসে আছে, এক সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে আরজ করলেন, আমি জিহাদে যেতে চাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা-মা কেউ কি জীবিত আছেন? সাহাবি হ্যাঁসূচক জবাব দিলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও তাদের সেবা করে তুমি জিহাদের সাওয়াব কামাই করে নাও। অপর বর্ণনায় আছে যাও তাদের কাছে গিয়ে বসে থাকো। কেননা জান্নাত তার পায়েরই কাছে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-২৬৪২) এক হাদিসে আছে, জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং-৭৩০)

 

বোন হিসেবেও নারীকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে ইসলাম। হাদিস শরিফে আছে, কারো ঘরে যদি তিনজন বা দুজন কন্যা অথবা ভগ্নি থাকে আর সে তাদেরকে উত্তম শিক্ষা দান করে এবং তাদের উত্তম পাত্রে বিবাহ দেয়। তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। অন্য বর্ণনায় আছে, তাহলে সে আর আমি জান্নাতে এরূপ পাশাপাশি থাকব। তারপর তিনি দুটি আঙুল পাশাপাশি রেখে ইশারা করলেন। একথার দ্বারা বোনদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে। সর্বোপরি, একজন নারীদেরকে পৃথিবীর সব সভ্যতা ও ধর্মের মধ্যে থেকে একমাত্র ইসলামই বেশি মর্যাদা দিয়েছে। ইসলামই বেশি অধিকার দিয়েছে। যা পৃথিবীর আর কোনো সভ্যতা, মতামত ও ধর্ম দেয়নি, কল্পনাই করেনি।

 

অতএব, ইসলাম নারীকে একজন মা হিসেবে, একজন বোন হিসেবে, একজন কন্যা হিসেবে ও স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত আদরণীয় আবার মা ও বোন হিসেবে সম্মানের পাত্র বানিয়েছেন। তাই তথাকথিত  বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদীদের শ্লোগানের সাথে তাল মিলিয়ে সমঅধিকার দাবি করার অর্থ হবে, নিজেরা নিজেদের বঞ্চিত করা, নিজেরা নিজেদের ঠকানো, নিজেরা নিজেদের অধিকার হ্রাস করা। কেননা পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ইসলামই নারীদের সবচেয়ে বেশি সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে; বরং সব ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসলাম নারীদেরই অগ্রাধিকার দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ (ইফতা), দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads