• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

এসো আল্লাহর রঙে রঙিত হই

  • প্রকাশিত ১৫ জানুয়ারি ২০২২

মাসুম আলভী

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ মস্তিষ্কে তথ্য প্রেরণ করে। মস্তিষ্ক সেই তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে। তথ্য সরবরাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। চোখ চারদিকের পরিবেশের ছবি মস্তিষ্কে পাঠায়। যা মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহজ হয়। আল্লাহ তায়ালা চোখ দিয়েছেন তাঁর অপরূপ সৃষ্টি আকাশ, সূর্য,  নক্ষত্র, পাহাড়, বন, নদী ইত্যাদি দেখে স্রষ্টাকে স্মরণ করে সিজদায় মাথানত করার জন্য। মানুষের দুঃখ, বেদনার চিত্র দেখে দু-চোখে অশ্রুসিক্ত হয়ে; নিজের সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্য  আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করবে এবং ফিরে আসবে কল্যাণের পথে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কি তার জন্য দুটি চোখ বানাইনি?’ (সুরা বালাদ আয়াত : ৮) কিন্তু আজ অশ্লীল দৃশ্য, নারীর প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ দু-চোখ হয়েছে মরুভূমি। আল্লাহর ভয়ে চোখ কাঁদে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ অভিশম্পাত দেন কুদৃষ্টি দানকারী পুরুষ ও দৃষ্টিদানে সুযোগদানকারী নারীর ওপরও।’ (মিশকাত ২৭০)

 

আল্লাহ তায়ালা মুমিন নর-নারীদের দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা ইচ্ছা মতো চলবে তারা বিপদগামী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। (সুরা আহযাব আয়াত : ৩৬)

 

পণ্য উৎপাদনে বহু সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় কিন্তু  কাঁচামাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঠিক অনুরূপভাবে, মানবহূদয়কে পাপের কালো ছায়ায় আবৃত করার অনেক মাধ্যমে রয়েছে কিন্তু চোখ হলো তার অন্যতম। চোখের আয়নাতে দেখে, মনের আয়নাতে কল্পনায় ছবি আঁকে। যা অন্তরকে কলুষিত করে। কিন্তু চোখ হেফাজতের মাধ্যমে মুমিনের দেহ ও মনকে পরিশুদ্ধ রাখতে পারে। যা আল্লাহর রঙে আলোড়িত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। (সুরা নূর আয়াত : ৩১-৩০) বীজ রোপণ না করে ফলের আশা করা আর চোখের জানালা খুলে দিয়ে মনের জানালা বন্ধ করার চেষ্টা করা একই রূপ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন। (সুরা গাফির আয়াত : ১৯) কথায় আছে, চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়।

আধুনিক যুগে দৃষ্টি অবনত রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। মুসলিম তরুণদের ইসলামের সুমহান আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে  চতুর্মুখ ফাঁদ এঁটেছে পশ্চিমারা। নারীদের বিজ্ঞাপনে কথাই যদি চিন্তা করি। এই বাতাস ছড়িয়েছে সর্বত্র। টিভি বিজ্ঞাপন, পত্রিকা বিজ্ঞাপন, তথ্য ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ অনলাইন বিজ্ঞাপনের মহামারি। সামান্য আচার, জুস, সাবান, সিম বিক্রি, কোল্ড ড্রিংক গাড়ির বিজ্ঞাপনে নারীদের ছড়াছড়ি। সুন্দরী নারীদের আকর্ষণীয় করে বিলবোর্ডে লাগিয়ে দিচ্ছে। পণ্যের দিকে ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য নারীদের দেহ প্রদর্শন করেছে। পণ্যের চেয়ে মানুষ নারীদের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তাও আমি জানি। আর আমি তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে। (সুরা কাফ আয়াত : ১৬) ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নিষিদ্ধ সাইট তরুণদের করেছে ভরাডুবি। যারা দৃষ্টি সংযত করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের লড়াইয়ে বিজয়ী করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গেই আছেন। (সুরা আনকাবুত আয়াত : ৬৯)

 

তরুণরা রাজ্যের ক্ষুদা নিয়ে মাছ রাঙা পাখি যেমন মাছের দিকে গভীর মনোনিবেশ করে; একইভাবে তরুণের চোখ একবার কোনো রমনীর দিকে নিক্ষেপ হলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা তো ভুলেই যায়। পড়ার টেবিলে এখনো গাছের পাতায় রমনীর ছবি কল্পনায় আঁকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো নারী দিকে দৃষ্টি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।’ (মুসলিম ৫৩৭২) মুমিনরা আল্লাহর ভয়ে চোখ অবনত রাখে। আর আল্লাহ মুমিনদের মুক্তির সুসংবাদ দিয়েছেন।  আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি মুমিনদের মুক্তি দিলাম এবং তারা ছিল তাকওয়া অবলম্বনকারী। (সুরা নামাল আয়াত : ৫৩) দুনিয়ার রূপবতী রাজকন্যার মোহ থেকে যারা আল্লাহ ভয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে তাদের জন্য জান্নাতে বহুগুণে মায়াবী ও লাবণ্যময়ী নারী অপেক্ষা করছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের কোনো নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সমস্ত দুনিয়া আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর নাসিফ (ওড়না) দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ (সহীহ বুখারি ৬১২১)

 

আমাদের জানা উচিত দৃষ্টি অবনত রাখার সুফল ও কুফল সম্পর্কে। দৃষ্টি সংযত রাখার জন্য প্রয়োজন বিয়ে করা। শুদ্ধ মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক হওয়া। বেশি বেশি ইবাদত করা। আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকলে চোখ সংযত রাখা সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর নিশ্চয় তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ রয়েছে। সম্মানিত লেখকবৃন্দ। তারা জানে, যা তোমরা কর।’ (সুরা ইনফিতার আয়াত : ১০-১২) হে আল্লাহ! আমার আমাদের প্রত্যেকে দৃষ্টি অবনত রাখার শক্তি দান করুন। আমিন।

 

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads