আ.স.ম আল-আমিন
ইসলামের সুমহান বাণী সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নানান রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল মৌখিক বিরোধিতা, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিকে শত্রু পক্ষের বিরোধিতার জবাব আরেকদিকে সাথীদেরকে শীসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত রাখা, এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। তিনি সব কিছু ধৈর্যের সাথে সম্পাদন করেছেন, দৈহিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে ও মৌখিক আঘাত সহ্য করা অনেক কঠিন। ক্ষত- বিক্ষতের দাগ শুকিয়ে যায় কিন্তু কথার দাগ কখনো শুকায় না। তাই শুরুতেই কোরআন মাজিদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মৌখিক বিরোধিতার মোকাবিলায় (সবর) অবলম্বনের তালীম দিয়েছেন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, আর লোকেরা যেসব কথাবার্তা রচনা করে বেড়াচ্ছে, সে জন্য তুমি ধৈর্য ধারণ করো এবং সৌজন্য রক্ষা করে তাদের থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যাও। (আল মুযযাম্মিল-১০) অন্য আয়াতে বলেছেন- আর জাহেল লোকেরা তাদের সাথে কথা বলতে এলে তারা বলবে, সালাম। (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত-৬৩) দূরে থাকার জন্য তাকিদ দিয়েছেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আর জাহেল লোকদের থেকে বিরত থাক। (সুরা আল-আরাফ, আয়াত-১৯৯) অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি যখন দেখবে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহের দোষ সন্ধান করছে, তখন তাদের নিকট থেকে সরে যাও।’ (সুরা আনআম, আয়াত-৬৮)
মজলিসে বসতে নিষেধ করেছেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যেখানেই আল্লাহর আয়াতের বিরুদ্ধে কুফরির কথা বলতে এবং এর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে শুনবে, সেখানে তোমরা আদৌ বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কোনো কথায় লিপ্ত না হয়। তোমরা যদি তা করো, তবে তোমরাও তাদেরই মতো হবে।’ (সুরা আননিসা, আয়াত-১৪০)
প্রতিপক্ষের কথায় হতাশ হওয়া যাবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর এত কথার তীর আসার পরেও আল্লাহতায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তাদের কথায় আপনাকে যেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও দুঃখিত না করে। তাদের প্রকাশ্য ও গোপন সব কথাই আমি জানি।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত-৭৬) অন্য আয়াতে বলেন, ‘অতপর যে কুফরি করে, তার কুফরি যেনো তোমাকে চিন্তান্বিত না করে। তাদেরকে তো আমার নিকট ফিরে আসতেই হবে। তখন আমি তাদেরকে বলে দেব তারা কি সব করে এসেছে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত-২৩) যখন ইসলাম কবুলকারী কিছু লোক কাফেরদের সাথে মেলামেশা করতো, তখন তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনকে ছোট করে দিতো এবং তাঁকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করতো, এই অবস্থার মোকাবিলা ও তিনি কোরআনের সাহায্যে করতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ লোকেদের কার্যকালাপে তুমি দুঃখিত হয়ো না। আর তাদের অবলম্বিত ষড়যন্ত্রের দরুন দিল ভারাক্রান্ত করো না। (সুরা নাহল, আয়াত- ১২৭) অন্য আয়াতে বলেন, ‘হে নবী যেসব লোক যারা খুব দ্রুতগতিতে কুফরির পথে অগ্রসর হচ্ছে, যেন তোমার কোনো দুশ্চিন্তার কারণ না হয়। যদিও তারা সেই সব লোক যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আসলে তাদের দিল ঈমান আনেনি; কিংবা এরা সেইসব লোক হলেও যারা ইহুদি হয়ে গেছে।’ (সুরা আল মায়েদা, আয়াত-৪১)
শত্রুপক্ষের বিরোধিতা দিন দিন বাড়তেই চলছে তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, অতএব, (হে নবী) ধৈর্য ধারণ করো, যেভাবে উচ্চ সংকল্পসম্পন্ন রাসুলগণ ধৈর্য ধারণ করেছিলেন। আর এ লোকদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না। (সুরা আল আহকাফ, আয়াত-৩৫) অন্য আয়াতে বলেছেন, অতএব (হে নবী) ধৈর্য ধারণ করো, আল্লাহর ওয়াদা সত্য সঠিক আর নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাও। (সুরা মুমিন, আয়াত-৫৫) অন্যত্র আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী) তুমি সেই পথনির্দেশের অনুসরণ করো যা অহির মাধ্যমে তোমার নিকট প্রেরিত হয়েছে। আর আল্লাহর ফায়সালা আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করো।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত- ১০৯)
পরিশেষে বলা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের মতো বর্তমান যুগেও প্রতিপক্ষের মৌখিক বিরোধিতার তীর নিক্ষিপ্ত হয়, মৌখিক ও ধৈর্যের সাথে তার প্রতিবাদ করার সুযোগ রয়েছে, বক্তৃতা ও লিখনীর মাধ্যমে আমরা তার জবাব দিতে পারি, তার প্রতিবাদ দৈহিক অত্যাচার- নির্যাতনের মাধ্যমে করা এটা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, মাহাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহীল ইসলামী ঢাকা