• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে যোগ্য নেতৃত্বের পরিচয়

  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০২২

আ.স.ম আল আমিন

 

নিঃসন্দেহে নেতৃত্ব মহান আল্লাহ তায়ালার দান। নেতা হওয়া সহজ। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়া একটি কঠিন কাজ। সকল মানুষকে আল্লাহ তায়ালা একই ধরনের নেতৃত্ব ও যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেননি। কোনো ইসলামী সংগঠন নেতৃত্ব ছাড়া চলতে পারে না। আমিরুল মুমিনীন হজরত উমর ফারুক (রা.) বলেন- ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হবে না সংঘবদ্ধ হওয়া ছাড়া। সংঘবদ্ধ বা জামাত হবে না নেতৃত্ব ছাড়া। ইমারত বা নেতৃত্ব হবে না আনুগত্য ছাড়া। নেতৃত্বের উদাহারণ হলো একটি গাড়ির ড্রাইভারের মতো। চালক যদি ভালো হয় তাহলে গন্তব্যে পৌঁছা সহজ হয়। অন্যথায় এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই একটি দলকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে হলে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করা কর্মীদের নৈতিক দায়িত্ব। যোগ্য নেতা চিনার জন্য কতিপয় কিছু গুণাবলি নিম্নোক্ত তুলে ধরা হলো।

১-আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য থাকা : নেতা হলেন হাজারো কর্মীর অবিভাবক।  তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে সকল ক্ষেত্রে যেমন আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করা অপরিহার্য; ঠিক তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও কোরআন সুন্নাহর বাহিরে কিছু না করা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহ‌ ও তাঁর রাসুলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ‌ সবকিছু শোনেন ও জানেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত ০১)

একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) কে  ইয়ামানের বিচারক করে পাঠাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কিসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবে? তিনি জবাব দিলেন : ‘আল্লাহর কিতাব অনুসারে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : যদি কোনো বিষয়ে কিতাবুল্লাহর মধ্যে হুকুম না পাওয়া যায় তাহলে কোনো জিনিসের সাহায্য নেবে? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের সাহায্য নেব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : যদি সেখানেও কিছু না পাও? তিনি বললেন : তাহলে আমি নিজে ইজতিহাদ করব। একথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বুকের ওপর হাত রেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন।’ সুতরাং যদি কেউ কখনো আল্লাহ‌ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নীতি গ্রহণ করে কিংবা নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কোরআন সুন্নাহ থেকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তার নেতৃত্বের সফলতা তো দূরের কথা ধ্বংস অনিবার্য।

 

২-পদের প্রতি লোভ না থাকা : লোভ মানুষের মানবিক অসৎ গুণ। টাকা, নারী, ক্ষমতা; এগুলোর প্রতি সাধারণত মানুষের লোভ বেশি থাকে। নেতৃত্বের লোভের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আবদুর রহমান ইব‌নু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কারণ, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেওয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করা হবে। কোনো কিছুর ব্যাপারে যদি শপথ কর আর তা ছাড়া অন্য কিছুর ভেতর কল্যাণ দেখতে পাও, তবে নিজ শপথের কাফফারা আদায় করে তার থেকে উত্তমটি গ্রহণ কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৬২২) হজরত আবু হুরায়রা (রাজি.) থেকে বর্ণিত; রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,  তোমরা নিশ্চয়ই নেতৃত্বের লোভ কর, অথচ ক্বিয়ামতের দিন তা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৪৮)

৩-আমানতদার হওয়া : একজন নেতার জন্য তিনটি জিনিসের আমানত যথাযথ আনজাম দেওয়ার যোগ্যতা থাকা। ক) নেতৃত্বের আমানত। খ) বায়তুল মালের আমানত। গ) কর্মী-বাহিনীর আমানত। নেতৃত্ব যতটা কঠিন; তার চেয়ে নেতৃত্বের আমানত রক্ষা করা আরো বেশি কঠিন কাজ। অনেক সময় আমানত রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন হয়। নানাবিধ অপবাদ ও জুলুম সহ্য করতে হয়। অতি ভক্তদের বাড়াবাড়ি ও বিরোধীদের চক্রান্ত সর্বদা সঙ্গী হয়। মানুষ সব সময়ই দায়িত্বশীলদের; বিশেষ করে নেতাদের আমানত সন্দেহ করে। এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ছাড় পাননি। বদর যুদ্ধে গনিমতের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর তুহমত আরোপিত হয়েছিল। তবে এর জবাব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘কোনো নবীর জন্য সমীচীন নয় খেয়ানত করা। যে ব্যক্তি যা খেয়ানত করবে তা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন হাজির হবে। অতঃপর প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম অনুযায়ী তার ফলাফল পুরোপুরি দেওয়া হবে এবং তারা কেউ অত্যাচারিত হবে না। (আলে ইমরান-১৬১)

আর বায়তুল মালের আমানত খেয়ানত হলে পুরো সংগঠন পতনের দিকে ধাবিত হয়। বায়তুল মাল হেফাজত করার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। একজন নেতার কাছে পুরো সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি আমানত। সংগঠনের সব ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করার মতো যোগ্যতা থাকতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রেও আমানাত রক্ষা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আবু যার! তুমি দুর্বল আর শাসনকার্য হলো একটি আমানত। নিশ্চয়ই তা কিয়ামতের দিন অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। তবে সে ব্যক্তি নয়, যে তা যথার্থভাবে গ্রহণ করে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, মাহাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহীল ইসলামী ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads