• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ঈদের দিনের আমল

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ঈদের দিনের আমল

  • প্রকাশিত ০১ মে ২০২২

ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উদযাপন। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে একতা, সমদর্শিতা, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের নামই ঈদ। মনের হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, লোভ, রাগ-ক্রোধসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে পবিত্র করার সুবর্ণ সুযোগ। এদিন বান্দা ভুলে যায়, সে ধনী, সে অমুক, সে তমুক। এক পরিচয়ে পরিচিত হয় সকল মুমিন।

রমজানের শুরু থেকেই সাধনার মাধমে মানুষ তার লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে দীর্ঘ একমাসব্যাপী রোজা রেখে নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ করে, সংযতচিত্তে পার করে রমজানের প্রতিটি দিবস। অন্য সব সময়ের থেকে পাপাচার কমে যায় পৃথিবী জুড়ে। জান্নাতি সুশীতল হাওয়ায় ভাসতে থাকে পৃথিবী। রহমতের পাক শিশিরে স্নান করে মুমিন-হূদয়। আর এ পরিশুদ্ধির পর রমজানের শেষ দিনে আকাশের এক কোণে বাঁকা চাঁদের হাসি ঈদের জানান দেয় সবাইকে। যা মুসলমানদের জাতীয় মহোৎসব।

মহিমান্বিত এদিনটির আনন্দ-উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শিক কিছু আমল। ঈদ তখন অপ্রত্যাশিত আনন্দে প্রাণময় হয়ে উঠবে। আসুন, ঈদকে সত্যিকারার্থে আনন্দময় করে তুলতে ঈদকেন্দ্রিক নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ বিশেষ আমল জেনে নেওয়া যাক।

১. ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা আদায় করা। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।’

ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি সাহেবে নিসাব থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের দিনের ফজরের নামাজের আগে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা অপরিহার্য। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবারই ফিতরা দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, বড়, ছোট মুসলমানের ওপর এক সা খেজুর কিংবা এক সা যব সদকায়ে ফিতর ফরয (ওয়াজিব) করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং-১৫০৩)

২. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগে আগে ঈদগাহে যাওয়া।

৩. গোসল করে পরিপাটি হয়ে ঈদগাহে যাওয়া। ‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৫]

৪. বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া। আনাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনামতে, তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। [বুখারি, হাদিস : ৯৫৩]

৫. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫) আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করা। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। [বুখারি, হাদিস : ৯৮৬]

৬. উন্মুক্ত স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা। তবে সেরকম ব্যবস্থা না থাকলে আবদ্ধ জায়গায়ও আদায় করা যাবে।

৭. খুতবা শ্রবণ করা। খুতবার সময় অযথা কোনো কাজে লিপ্ত না হওয়া।

৮. ঈদের দিন যথাসম্ভব হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করা। ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য খুশির দিন। তাই এদিনে হাসিখুশি থাকাও একটি ইবাদত। তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়।

৯. ঈদের দিন একে অন্যকে অভিবাদন জানানো। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-গণ ঈদের দিন একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে একটি দোয়ার মাধ্যমে অভিবাদন জানাতেন। তা হচ্ছে- উচ্চারণ : ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ অর্থ : আল্লাহতায়ালা আপনার ও আমাদের পক্ষ থেকে নেক আমলগুলো কবুল করুক।

ঈদের দিনের চমৎকার এসব আমলগুলো ঈদের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুজাহিদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, কাজিপুর আল-জামিয়াতুল মাদানিয়া (মাদ্রাসা), সিরাজগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads