• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
আমাদের কোরবানি

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আমাদের কোরবানি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০২২

মুসলমানদের বাৎসরিক ঈদ দুটি। শাওয়ালের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর। জিলহজের দশম তারিখে ঈদুল আজহা। ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি। আর ঈদুল আজহা অর্থ কোরবানির ঈদ। এদিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। ঈদ নামাজের পর পশু কোরবানি করে এ ঈদ পালন করা হয় তাই একে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ বলে।

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পৃথিবীর সূচনাকাল থেকে প্রত্যেক যুগেই কোরবানির প্রচলন ছিল। তবে আমরা যে কোরবানি করি তার সূচনা হয় মুসলিম মিল্লাতের জনক হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে। কোরবানি শব্দটি মূলত আরবি ‘কোরব’ বা ‘কোরবান’ হতে উদগত। এর অর্থ হলো- নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ, ত্যাগস্বীকার, আত্মদান, রক্ত প্রবাহিত করা জবেহ করা ইত্যাদি।

হজরত যায়েদ বিন আকরাম (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, একদা কতক সাহাবি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোরবানি কী? তিনি প্রতি উত্তরে বললেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নাত। পুনরায় প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কী পুরস্কার আছে? নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী। (মিশকাত)

হজরত ইবরাহীম আ.-এর কোনো সন্তান ছিল না। তিনি বৃদ্ধ বয়য়ে প্রার্থনা করলেন, হে আমার প্রভু! একটি নেককার পুত্রে দান করুন। মনিবও নিরাশ করলেন না। একটি নেককার পুত্রের সুসংবাদ দিয়ে দিলেন। বিবি হাজেরার গর্ভে জন্ম নিলেন ইসমাইল (আ.)। ক্রমান্বয়ে শিশু ইসমাঈল বড় হতে লাগলেন। তের বছরের বালক হয়ে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা ও তার কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, তখন পিতা ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন, ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কোরবানি কর।

বন্ধুর হুকুম পালনে প্রস্তুত হয়ে গেলেন ভক্ত প্রেমিক। ছেলেকে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে আল্লাহর নামে জবেহ করছি। এতে তোমার কী অভিমত? যেমন পিতা তেমন ছেলে। জবাব দিলেন, আব্বাজান! আদিষ্ট কাজ আপনি সম্পন্ন করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।

পিতা ছেলেকে নিয়ে মিনা প্রান্তরে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে শয়তান তাদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করতে চেষ্টা করল। প্রতিবারই হজরত ইবরাহীম (আ.) কংকর মেরে তাকে বিতাড়িত করে দেন।

উভয়ে মিনায় পৌঁছার পর হজরত ইসমাঈল (আ.) বললেন, আব্বাজান! আমাকে শক্তভাবে বেঁধে নিন, যাতে আমি ছটফট করতে না পারি। আপনার পরিধেয় গুটিয়ে নিন, যেন তাতে রক্ত না লাগে। অন্যথায় আমার সওয়াব হ্রাস পেতে পারে এবং তা দেখলে আম্মাজান অতি ব্যাবুল হয়ে যাবেন। আপনার ছুরি শাণিত করে নিন। আমার গলায় দ্রুত চালাবেন, যাতে আমার প্রাণ দ্রুত বের হয়ে যায়। আম্মাজানকে আমার সালাম দিবেন। সম্ভব হলে, আপনার সাথে আমার জামা নিয়ে যাবেন। হয়তো তা দেখে তিনি একটু সান্ত্বনা পাবেন।

অতঃপর ইবরাহীম (আ.) তাকে জমিনে কাত করে শুইয়ে গলায় ছুরি চালালেন। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও গলা কাটতে পারলেন না। ছুরির নীচে শায়িত ইসমাঈল আরজ করলেন, আব্বাজান! আমাকে উপুর করে শুইয়ে দিন। আমার চেহারা দেখে আপনার মায়া লাগে তাই জবেহ করতে পারছেন না। তিনি তাকে উপুর করে শুইয়ে দিয়ে পুনারায় ছুরি চালালেন। এমনি মুহূর্তে অদৃশ্য হতে আওয়াজ এলো-হে ইবরাহীম (আ.) আপনি স্বীয় রবের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ইবরাহীম (আ.) তাকিয়ে দেখেন তাঁর ছেলের পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়েছেন।

মহান আল্লাহতায়ালার নিকট পিতা-পুত্রের এ সীমাহীন আত্মত্যাগ পছন্দ হলো। তাই কিয়ামত পর্যন্ত তাকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে উম্মতে মুহাম্মদীর সকল সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের কোরবানি করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কোরবানি করলো না (অর্থাৎ কোরবানি করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

লেখক : মুফতি উবায়দুল হক খান

মুহাদ্দিস ও সহকারী পরিচালক, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads