• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
কোরবানির সঙ্গে আকিকা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

কোরবানির সঙ্গে আকিকা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

মুফতি মোজ্জাম্মেল হক রহমানী

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। এটি এটি সন্তানের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব। ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্মগ্রহণের পর আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য পশু উৎসর্গ করাকে আকিকা বলে। আকিকা সম্পর্কে হাদিস শরীফে রয়েছে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুরই আকিকা জরুরি।’ (আবু দাউদ : ২৮৪০, মুসনাদে আহমদ : ২০০৯৫)

জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। কোনো কারণে সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে চতুর্দশ দিবসে আকিকা করবে, তা সম্ভব না হলে একুশতম দিনে আকিকা করবে, তাও সম্ভব না হলে জীবনের যেকোনো সময় আকিকা করলে আদায় হয়ে যাবে। তবে উত্তম হলো জন্মের দিন থেকে হিসাব করে সপ্তম দিনে আকিকা করা। এটি হিসাব করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, শিশু যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছে, এর আগের দিন আকিকা করা, শিশু যদি শুক্রবারে জন্মগ্রহণ করে থাকে তবে বৃহস্পতিবার আকিকা করা। (নাসায়ী : ৭/১৬৬, ইলাউস সুনান : ১৭/১১৭)।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত হাসান ও হজরত হোসাইন (রা.)-এর পক্ষ থেকে দুটি করে মেষ জবাই করে আকিকা করেছেন। (নাসায়ী : ৪২২৪, আবু দাউদ : ২৮৪১) জাহেলি যুগেও আরবদের মাঝে আকিকা করার প্রথা ছিল। সন্তান জন্মের কয়েকদিন পর তারা মাতৃগর্ভ থেকে নিয়ে আসা নবজাতকের মাথার চুল পরিষ্কার করতো এবং আনন্দের জন্য একটি পশু কোরবানি করতো। (শুয়াবুল ঈমান : ৫৩০৮)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আকিকা প্রথার সংস্কার করেন, নীতিগতভাবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য আকিকার স্বীকৃতি দেন, এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন এবং নিজে আকিকা করার মাধ্যমে এই সুন্নতকে আগামী প্রজন্মের জন্য অব্যাহত রাখেন। ছেলের পক্ষ্য থেকে দুটি ছোট পশু, আর মেয়ের পক্ষ্য থেকে একটি ছোট পশু আকিকা করা অথবা ছেলের পক্ষ থেকে বড় পশুর দুই সপ্তমাংশ ও মেয়ের পক্ষ থেকে বড় পশুর এক সপ্তমাংশ দিয়ে আকিকা করা মুস্তাহাব। (আল মুজামুস সগীর : ১/৮২-২২৯, ফাতোয়ায়ে উছমানী : ৪/১৩৬)

বড় পশুতে একত্রে কোরবানি ও আকিকা : বড় পশুতে কোরবানির সঙ্গে আকিকা করা শরীয়ত সম্মত। অর্থাৎু বড় পশুতে কোরবানির সঙ্গে আকিকা হিসেবে ছেলের জন্য দুই সপ্তমাংশ  আর মেয়ের জন্য এক সপ্তমাংশ রেখে, কোরবানি এবং আকিকা একত্রে করা শরীয়ত সম্মত ও বৈধ। (ফাতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩০৪, ফাতোয়ায়ে শামী : ৬/৩২৬) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকিকাকে নুসুক আখ্যায়িত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘যার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, অতঃপর সে তার সন্তানের পক্ষ্য থেকে নুসুক (আকিকা) করতে চাই, তবে সে যেন নুসুক (আকিকা) করে। (আবু দাউদ : ২৮৪২, নাসায়ী : ৪২১২) এখানে আকিকা শব্দ ব্যবহার করা হয়নি বরং নুসুক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির ক্ষেত্রেও নুসুক শব্দটি ব্যবহার করেছেন। হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির ঈদের দিন, নামাজের পর খুতবায় বলেন, যে আমাদের মতো নামাজ পড়বে এবং আমাদের মতো নুসুক (কোরবানি) করবে, (অর্থা- নামাজ শেষে কোরবানি করবে) তাহলে সে সঠিকভাবে নুসুক (কোরবানি) করেছে। আর যে নামাজের পূর্বে নুসুক (কোরবানি) করবে, তার নুসুক (কোরবানি) সঠিক হয়নি। (বুখারি : ৯৫৫, মুসলিম : ১৯৬১)

প্রথম হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকিকাকে নুসুক বলেছেন। দ্বিতীয় হাদিসে কোরবানিকে নুসুক বলেছেন। অর্থাৎ-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য অনুপাতে আকিকাও নুসুক এবং কোরবানিও নসুক। আকিকা এবং কোরবানি উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু জবেহ করা হয়। এজন্য বড় পশুতে কোরবানির সঙ্গে মেয়ের জন্য এক সপ্তমাংশ এবং ছেলের জন্য দুই সপ্তমাংশ হিসেবে আকিকা করা শরীয়ত সম্মত এবং বৈধ।

আকিকার জন্য পশু জবেহ করাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এহরাক্ব" শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, হজরত সালমান বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন, ছেলের পক্ষ্য থেকে একটি আকিকা, সুতরাং তার পক্ষ থেকে এহরাক্বে দাম (পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত) করো। (সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ৪২২৫, ফাতহুল বারী খণ্ড নং ৯,পৃষ্ঠা নং ৫০৪, মেরক্বাত খণ্ড নং ৯,পৃ নং ৬৮৬, বুখারি শরীফ হাদিস নং ৫১৬৫) এ হাদিসের মাঝে আকিকা করাকে এহরাক্বুদ্দাম তথা ছেলের পক্ষ থেকে আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করতে বলা হয়েছে।

অনুরূপভাবে অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি করাকেও এহরাক্বুদ্দাম তথা আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করতে বলেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : আল্লাহ তায়ালার নিকট মানুষের জন্য কোরবানির দিন পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত (এহরাক্বুদ্দাম) করার চেয়ে পছন্দনীয় আর কোনো আমল নেই। (সুনানে তিরমিজি ৪/৮৩-১৪৯৩)

হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকিকাকে এহরাক্বুদ্দাম (আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করতে) বলেছেন। দ্বিতীয় হাদিসে কোরবানিকে এহরাক্বুদ্দাম (আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করতে) বলেছেন। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য অনুপাতে আকিকা ও এহরাক্বুদ্দাম (আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করা) এবং কোরবানিও এহরাক্বুদ্দাম (আল্লাহর জন্য পশু জবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করা)। আকিকা এবং কোরবানি উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু জবেহ করা হয়। এজন্য বড় পশুতে কোরবানির সঙ্গে মেয়ের জন্য এক সপ্তমাংশ এবং ছেলের জন্য দুই সপ্তমাংশ হিসেবে কোরবানি ও আকিকা একত্রে করা শরীয়ত সম্মত এবং বৈধ।

আকিকার গোশতের হুকুম : আকিকার গোশতের হুকুম কোরবানির গোশতের মতোই। অর্থাৎ আকিকার গোশত নিজে খেতে পারবে, পরিবারকে খাওয়াতে পারবে এবং অন্যকে দান করতে পারবে। তবে মুস্তাহাব হলো, কোরবানির গোশতের ন্যায় তিন ভাগ করা। এক ভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা এবং এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা। এই গোশত দিয়ে দাওয়াত খাওয়ানোও জায়েয এবং এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করাও জায়েজ। (ইলাউস সুনান : ১৭/১২৭)

 

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, মদিনাতুল উলুম বসুন্ধরা, ঢাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads