• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কোরবানির ইতিহাস, গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

কোরবানির ইতিহাস, গুরুত্ব ও ফজিলত

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

আ.স.ম আল আমিন

কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে নির্গত। অর্থ-নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরীয়তের পরিভাষায়- নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবেহ করাই হলো কোরবানি।

কোরবানি ইসলামের অন্যতম এক নিদর্শন। যারা জিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো ও বারো তারিখে নিজেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ ব্যতিত অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের মালিক হয়, তাহলে তাদের  ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। অর্থাৎ যারা এই তিনদিনে  ৫৮,১৭০ টাকার মালিক থাকবে।

কোরবানির ইতিহাস : (১) পৃথিবীর ইতিহাসে হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর কোরবানি সূচনা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হলো, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হলো না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। (সুরা মায়েদা-২৭) যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার প্রতি পপ্রসারিত করব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি’। (সুরা মায়েদা-২৮)

(২) মুসলিম উম্মাহর জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ.পুত্র হজরত ইসমাইল আ. কে কোরবানি করার মাধ্যমে দ্বিতীয় ইতিহাসের এক নতুন মাত্রা তৈরি হয়। তবে ইসলামে হজরত ইসমাইল আ.এর স্মরণে কোরবানি করা হয়।  কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেন, কোরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন সে তার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে কাত করে শুইয়ে দিল। (সুরা আস-সাফফাত : ১০২-৩)

কোরবানির গুরুত্ব : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে হাউসে কাউসার দান করেছি। অতএব. আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ ও কোরবানি আদায় করুন।’ আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, হে আমার হাবিব আপনি বলুন যে, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই মহান প্রতিপালকের জন্য। (সুরা আনআম-১৬২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, তারা কতক নির্দিষ্ট দিনে গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তুর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সুরা হজ : আয়াত-২৮) আল্লাহর কাছে (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে। (সুরা হজ, আয়াত-৩৭)

হজরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোরবানির দিন পশু কোরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কেয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং ও খুরসহ হাজির করা হবে। কোরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে এবং সন্তুষ্টি চিত্তে কোরবানি কর। (মেশকাত শরীফ)

কোরবানির ফজিলত : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জায়দ ইবনে আকরাম বলেন, সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করেন, কোরবানি কী? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত।’ এতে আমাদের সওয়াব কী? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব রয়েছে। ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ভেড়ার প্রত্যেকটি পশমের বদলায়ও একটি করে সওয়াব রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ)

লেখক : কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব,  বাংলাদেশ কওমি ছাত্রপরিষদ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads