• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
অবসরে থাইল্যান্ড

সংগৃহীত ছবি

শোবিজ

অবসরে থাইল্যান্ড

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০২২

লিনা সারোয়ার 

জীবন যেহেতু সংক্ষিপ্ত এবং পৃথিবী প্রশস্ত, তাই যত তাড়াতাড়ি ভ্রমণ সুখ অন্বেষণে বেড়িয়ে পড়বেন তত তাড়াতাড়ি জীবনের আসল মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হবেন। জীবনের প্রয়োজনে আমরা পরিবার গড়ে তুলি, তাই পরিবারের গুরুত্ব, পারিবারিক সুখ এবং পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় করা আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। বর্তমানের ব্যস্ত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে অবসর সময় কাটানো হয়ে উঠে না। ফলে পরিবারের মধ্যে, ছেলে মেয়ের মধ্যে, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এমনিতেই ব্যস্ত নগরী সেই সাথে এই বর্তমান পেনডামিক পরিস্থিতির কারণে সবাই একঘেয়ে জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই হাজারো ব্যস্ততা বাদ দিয়ে, স্বামী, ছেলে মেয়েকে নিয়ে একটু আনন্দ,একটু প্রশান্তি আর সবাই মিলে একটা পরিপূর্ণ অবসর কাটাতে একদিন রওনা দিলাম, অর্কিডের রাজ্য থাইল্যান্ডের কিছু শহর ঘুরে দেখার জন্য। ঢাকা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে দুপুর ১টার ফ্লাইটে রওনা দিয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন শেষ করে গাড়ি ভাড়া করে ব্যাংককে হায়াত রেজেন্সি হোটেলে উঠলাম। হোটেল রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম খেতে, সামনেই গুলিবার্ডস এরিয়া, সেখানে কিছু থাই, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট আছে আর হরেক রকম মজার মজার সব খাবার, রাস্তার দুইপাশেও ভ্যান গাড়িতে বিভিন্ন সুস্বাদু ফল সারি সারি করে সাজানো আছে আর আছে স্ট্রিট ফুড। মানে রাস্তার খাবার যা সত্যিই চমৎকার ও মজাদার।  রাস্তার চারপাশে এতো মজাদার খাবার সাজানো আছে, যেগুলির  স্বাদ না নিয়ে চলে গেলে মনে হবে যে, থাইল্যান্ড এসে নিজের জিহ্বাকে বন্দি করে রেখে দিলাম। বড় বড় মাছ, মাংসের গ্রিল, বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার আবার থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী  বিশেষ কিছু খাবার, বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর সুস্বাদু খাবার, ইত্যাদি। তবে মজার জিনিস হলো শূকরের মাংসের তৈরি করা খাবার গুলি দেখতে খুবই লোভনীয়। মুসলিম ভাই-বোনেরা   হালাল-হারামের দিকে খেয়াল করে এই খাবার গুলি এড়িয়ে যাবেন, যেহেতু মুসলমানদের শূকরের মাংস খাওয়া হারাম। যাইহোক রাতের খাবার পর্ব শেষ করে আর একটু বাইরে ঘুরাঘুরি করে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে এসে পৌঁছালাম। তারপর সকালে আবার রওনা দিলাম ব্যাংককের কিং পাওয়ার মাহানাখন টাওয়ার বা স্কাই বিল্ডিং দেখার উদ্দেশ্যে, যা ৭৮ তলার একটা বিল্ডিং, সেখানে জনপ্রতি ২৫০০ টাকা দিয়ে বিল্ডিং -এর ওপর তলার এবং ছাদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। লিফটে উঠার সময় সেই শহরের বিভিন্ন স্থাপনার ভিডিও কয়েক মিনিট দেখানো হয় তারপর সবচেয়ে ওপরের তলা ৭৮তম ফ্লোরে এসে সেখান থেকে পুরো ব্যাংকক শহরের ভিউটা সুন্দরভাবে বুঝা যায়, যা সত্যিই উপভোগ্য। হাত বাড়াতেই আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ অনুভূত হলো এখানে দাঁড়িয়ে, চোখ যতদূর যায় শুধু দেখা যায় বড় বড় অট্টালিকা, পাহাড়, নদী এবং অসংখ্য স্থাপনা, আবার আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হলো ‘দূরের আকাশ এইতো আমার কত কাছে!’

আরো একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো ছাদের একপাশে সম্পূর্ণ গ্লাস লাগানো যা বাইরের দিকে অনেকটুকু বাড়ানো, যেখান থেকে নিচের সব বড় বড় বিল্ডিংগুলিকে মনে হয় আমাদের পায়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ করে নিচে তাকালে খুবই ভয় পেয়ে পড়ে যাবার মতো অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং মনে হবে এখনই বুঝি আমি খালি জায়গা থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছি। আপনি মন থেকে সাহসী না হলে ভুলেও সেখানে পা দিবেন না। যাইহোক, তারপর সেখানের ঘুরাঘুরি শেষ করে রওনা হলাম  রিভার সিটি সংলগ্ন আইকন সিয়ামে, সেখানে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটালাম। আইকন সিয়াম একটা অভিজাত শপিং মল এবং তার সাথে রয়েছে বিনোদনের জন্য বড় একটা পার্ক। পার্কে  বিভিন্ন ডাইনোসরের স্বয়ংক্রিয় মূর্তি বানিয়ে পরিবেশটিকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটা পরিবেশ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা থেকে সবাই ডাইনোসরদের কাল্পনিক জীবন সরাসরি দেখার একটা অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। সিয়াম আইকন শপিং মলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফ্রায়া নামক একটি নদী।
যে নদীর উভয় পাশে সুউচ্চ অট্টালিকা গুলি নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের শোভা বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে, সব কিছু দেখে আর শপিং সেরে রওনা দিলাম আবার হোটেলের উদ্দেশে। আর এভাবে আমাদের ৭ দিনের থাইল্যান্ড ভ্রমণের একটা দিন সুন্দরভাবে কাটলো।

থাইল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা দেশগুলির মধ্যে একটি, বছরে ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করে। সবচেয়ে আইকনিক আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পাতায়া বিচ, অনেক দ্বীপ, দেশজুড়ে একচল্লিশ হাজার মন্দির, শপিং এর জন্য অর্থাৎ দামি, কমদামি সকল প্রকার জিনিস কেনার এর জন্য উপযুক্ত একটা জায়গা।
সব কিছু মিলিয়ে খুবই চমৎকার একটি দেশ থাইল্যান্ড। তাই একবার হলেও সপরিবারে ঘুরে আসুন নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই দেশ থেকে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads