• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

টেলিযোগাযোগ

টেলিকমিউনিকেশন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০২০

‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় ও ২ বছর মেয়াদ বাড়ছে। এতে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২৮ দশমিক ৮২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এরই মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্রে এসব জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সব বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে নির্ভরযোগ্য ও ব্যয় সাশ্রয়ী টেলিকমিউনিকেশন সুবিধাদি গড়ে তোলা, দেশে টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি এবং টেলিএক্সেস সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হবে।

সূত্রটি আরো জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভিশন-২০২১’র লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বর্তমানে দেশে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নির্মাণ এবং সেইসঙ্গে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারে স্থাপিত টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো গড়ে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চালু থাকায় এগুলোর আয়ুষ্কাল এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এসব এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তিও বর্তমানে সেকেলে এবং স্পেয়ার পার্টস না পাওয়ার কারণে এগুলো আর দীর্ঘ সময় চালানো সম্ভব নয়। ফলে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিস্থাপন করা না হলে এক্সচেঞ্জগুলো অচিরেই পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে।

সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিটিসিএলের আইপি কোর সিস্টেমও দীর্ঘদিন আগের এবং সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন। এছাড়া বাস্তবতার কারণে একটি সময়োপযোগী গ্রাহকবান্ধব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে জনগণের কাছে টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরিতে আধুনিক ইন্সট্রুমেন্টস এবং টুলস প্রয়োজন। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা সমপ্রসারিত হচ্ছে। তাই দেশব্যাপী বিস্তৃত একটি আধুনিক ও শক্তিশালী আইপি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অরিহার্য। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে তিনটি আইপি মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম প্ল্যাটফর্ম স্থাপন, ৬৪ জেলায় অপটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন, ব্রডব্যান্ড সুবিধা দেওয়ার জন্য জিগাবিট প্যাচিভ অফটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপিওএন) ও অ্যাসেস গেটওয়ে স্থাপন, অফটিক্যাল ফাইবার কেব্ল এবং কপার নেটওয়ার্কেও জন্য আউটসাইড প্ল্যান্ট ওয়ার্ক, বিটিসিএলের আইপি নেটওয়ার্ক স্থাপন, দেশব্যাপী প্রায় এক হাজার ৩১৮ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ ব্যাকবোন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ও যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক বিজনেস অপারেশন সাপোর্ট সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা সংযোজন, প্রয়োজনীয় পাওয়ার সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মাধ্যমে জমি, স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিও সুরক্ষা দেওয়া এবং প্রশিক্ষণ।

মূল প্রকল্পে ৫২টি জিপিওএন (জিপন) সাইটের সংস্থান রয়েছে, যা মোট ২২টি জেলা সদরে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বিটিসিএলের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকল্প কার্যালয়ে অবশিষ্ট ৪২টি জেলা সদরে জিপন সাইটের চাহিদা পাওয়ার জন্য নতুনভাবে ৪২টি সাইট স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি বাবদ ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে পূর্ত কাজের জন্য। কিন্তু এ কাজে বরাদ্দ করা টাকা দিয়েই জরুরি ভিত্তিতে ২৮৮টি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পিডব্লিউডি রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে ২৮৮টি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য মোট ৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে বিটিসিএলে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইপিভি-৪ ব্লক মজুত না থাকায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ফরেইন এক্সচেঞ্জ প্রয়োজন হবে।

প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিভিন্ন এইচ এস কোডের বিপরীতে কাস্টমস ট্যারিফ আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া ৪২টি জেলায় জিপিওএন সাইট স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে সিডি ভ্যাট খাতে অর্থের প্রয়োজন হবে।

সড়ক ও মহাসড় খনন ক্ষতিপূরণের প্রাক্কলনটি করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। বর্তমানে ব্যয় আগের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ৪২টি জেলা সদরে জিপিওএন সাইট স্থানেও সড়ক খনন প্রয়োজন হবে।

মূল প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। এবং এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল। তাই প্রকল্পটি অনুমোদিত সময়ের প্রায় ১৮ মাস পরে শুরু হওয়ায় এবং ৪২ জেলায় জিপন স্থাপনে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। সেজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সাবেক সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গীস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমগ্র দেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে খুব সহজেই জনগণকে অত্যাধুনিক সেবা দেওয়া নিশ্চিত হবে। এছাড়া সেবা দেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় স্বয়ংক্রিয়তার সংযোজন হবে। এতে টেলিযোগাযোগ সেবা আগের চেয়েও বেশি গ্রাহকবান্ধব ও আকর্ষণীয় হবে। এর মাধ্যমে দেশে আধুনিক টেলিকমিউনিকেশন ফ্যাসিলিট গড়ে তোলা এবং টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি ও টেলিএক্সেস সুবিধার সম্প্রসারণসহ জনসাধারণকে সাশ্রয়ী মূল্যে আইসিটি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads