• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ব্লু ইকোনমি ও সুন্দরবন পাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব

সুন্দরবন

সংরক্ষিত ছবি

পর্যটন শিল্প

আজ অনুমোদন পাচ্ছে শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা

ব্লু ইকোনমি ও সুন্দরবন পাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী ১০০ বছরের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। দেশের ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটারকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় গুরুত্ব পেয়েছে ব্লু ইকোনমি তথা সমুদ্র অর্থনীতি। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় বদ্বীপ পরিকল্পনাটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শিরোনামে মহাপরিকল্পনাটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম। ‘অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশজ মহাপরিকল্পনা’ স্লোগান সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করেছে জিইডি।

এনইসিতে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা পরিকল্পনার সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে ব্লু-ইকোনমি। এর আওতায় নৌপরিবহন, উপকূলে জাহাজ চলাচল, সমুদ্রবন্দর, জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ, লবণাক্ততা, উপকূলীয় পর্যটন, জোয়ার-ভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ভূমি পুনরুদ্ধার, সামুদ্রিক সম্পদ জরিপ ও নজরদারি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সুশাসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনায়।

ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়। উপকূলীয় জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো ও সমুদ্রবন্দরগুলোর আধুনিকায়নেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ অগ্রাধিকার। এর বাইরে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম জোরদার করা, সমুদ্রে ইকোট্যুরিজম ও নৌ-বিহার কার্যক্রম চালু করা এবং উপকূল ও সমুদ্রবন্দরগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনকে রক্ষায় পরিকল্পনাটিতে বিশেষ অগ্রগাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জলাভূমি রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ হেক্টর। এ অঞ্চলের নদীর নাব্য রক্ষায় ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম পরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়েছে। ড্রেজিং পরিচালনা করার কথা রয়েছে অন্যান্য চ্যানেলেও। সুন্দরবনের আশপাশে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টি, সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা ও দ্বীপগুলোর উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় নতুন ভূমি জেগে উঠলে ম্যানগ্রোভ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বনায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় দেশের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোট ছয়টি হটস্পটের আওতায় জলবায়ু সংক্রান্ত ভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে পরিকল্পনায়। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন ২৭ হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার। আর বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ২২ হাজার ৮৪৮, আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে ১৬ হাজার ৫৭৪, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৩ হাজার ২৯৫, নদী ও মোহনা অঞ্চলে ৩৫ হাজার ২৯৫ এবং নগরাঞ্চলের ১৯ হাজার ৮২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা।

পরিকল্পনাটির খসড়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদুপানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমনের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের ৫ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্বাদুপানির দুষ্প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন। এ ছাড়া হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী এবং মোহনা অঞ্চল ও নগরাঞ্চলের জন্য ৫টি করে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।

হটস্পটগুলোর এসব চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবিত কৌশলে নদী ও পানিপ্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা, পানিপ্রবাহের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ও মানসম্মত স্বাদুপানি সরবরাহ করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নদীগুলোর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যথাযথ পলি ব্যবস্থাপনা করা, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষা এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় জলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে টেকসই জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা ও সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়।

এসব অঞ্চলে ঝুঁকি মোকাবেলায় কর্মকৌশল বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার সুপারিশ করা হয়েছে পরিকল্পনায়। ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের ২৩টি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে ৬ প্রকল্পে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮ প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি, নদী ও মোহনা অঞ্চলে ৭ প্রকল্পে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি ও নগর অঞ্চলের জন্য ১ প্রকল্পে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়।

সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানিসম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার কাজ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে চলতি বছর। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৮ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads