• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ব্যবসায় চীনের বিকল্প খোঁজা জরুরি

সংগৃহীত ছবি

বাণিজ্য

করোনার প্রভাব

ব্যবসায় চীনের বিকল্প খোঁজা জরুরি

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চীনের সঙ্গে। তাই স্বাভাবিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনা ভাইরাসের বড় প্রভাব পড়েছে। চীন থেকে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, তাতে বেড়ে গেছে বিভিন্ন খাতের কাঁচামাল, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, শিল্পপণ্য, নিত্যব্যবহার্য ও  ভোগ্যপণ্যের দাম। এ পরিস্থিতি আরো প্রকট হবে, যদি করোনা ভাইরাসের সময়কাল আরো দীর্ঘমেয়াদি হয়। যে কারণে বাংলাদেশকে এখন চীনের বিকল্প খোঁজা দরকার।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, চীনের এ সমস্যা মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হলে চীনের বিকল্প উৎস দেশ খোঁজা দরকার। এ জন্য বাংলাদেশের ন্যায় অন্যান্য দেশ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। যদিও গতকাল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের বিকল্প না খুঁজতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত কূটনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠনের ওই আলোচনা সভায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বিকল্প পদক্ষেপ ব্যয়বহুল, অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়। এটা ঠিক যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্য দিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ জন্য চীনকে দায়ী করা যায় না। তবে সমস্যার সমাধান শীঘ্রই হবে। যদিও রাষ্ট্রদূত চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে যেসব মেগা প্রকল্প হচ্ছে করোনা ভাইরাসের কারণে সেগুলোর কয়েকটির কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে ওই আলোচনা সভায় জানান।

এদিকে একই দিনে অপর একটি আলোচনা সভায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাব আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে এমন প্রত্যয় জানিয়েছেন চীনের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিবিএ)। ওই আলোচনায় সংগঠনের সভাপতি যাদব দেবনাথ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির গতিকে পুনরায় ঘুরিয়ে দিতে দ্বিগুণ শক্তিতে কাজ করা হবে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা চীনের রয়েছে। এর জন্য আর ১৫ দিন অপেক্ষা করুন।

তবে এমন পরিস্থিতিতে খোদ চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমারও আশঙ্কা করেছেন আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। রোববার দুবাইয়ে গ্লোবাল উইমেন্স ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমাতে হতে পারে, তবে আমরা এখনো আশা করছি, এটি ০, ১-০ অথবা ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের প্রভাব অর্থনীতিতে কতটা পড়বে, তা নির্ভর করছে কত দ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে তার ওপর। আমি সবাইকে পরামর্শ দেব খুব দ্রুতই কোনো উপসংহারে না যেতে।’ এ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যে সমস্যা হবে বলে মনে করেন তিনি। ২০০২ সালে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারীর চেয়েও করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেশি পড়বে বলে মনে করেন আইএমএফ প্রধান। কারণ তিনি বলেন, ওই সময় বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অংশ ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। এখন তা ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প। কারণ দেশে তৈরি পোশাকের বেশিরভাগ কাপড়ই আমদানি করতে হয় চীন থেকে।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক প্রস্তুত পণ্যও আসে। আবার চীনে রপ্তানিও হয় বাংলাদেশি পোশাক। এ অবস্থায় করোনার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিবেচনা করেই করণীয় ঠিক করার কথা ভাবছে বিজিএমইএ। প্রয়োজনে চীনের বিকল্প খোঁজার তাগিদ এ খাতের উদ্যোক্তাদের।

পোশাক ছাড়াও ছোটবড় বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যের বড় উৎস চীন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার ২৫ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। এমন অবস্থায় চীনা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র দেখা যায় বাজার ঘুরলেই। ইতোমধ্যে চীন থেকে যা আসে, তার বেশির ভাগের দাম বাড়তি। কিছু পণ্যের দাম ৫/১০ শতাংশ বাড়লেও, কিছুপণ্যের দাম ইতোমধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে।

অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাব যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে শুধু রপ্তানি খাতে ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকার সম্ভাব্য ক্ষতি হবে এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। সংগঠনটির সভাপতি মো. আবদুল কাদের খান বলেন, এরই মধ্যে আমাদের প্রায় ১০০ বা ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েই গেছে। যদি এ প্রভাব আরো ৫ থেকে ৬ মাস দীর্ঘায়িত হয় তবে শুধু রপ্তানি খাতে ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকার সম্ভাব্য ক্ষতি হবে।

করোনার কারণে দেশের জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও।

তিনি বলেছেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হতে পারে। কারণ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক খাতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তবে ভাইরাসটির কারণে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোশাকশিল্প, নিত্যপণ্যসহ যেসব খাতে চীনে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসের জেরে প্রভাব পড়তে পারে, সেসব দিকে নজর রাখছে সরকার। বিকল্পও ভেবে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads